সিয়াটো?

 

  • সিয়াটো?

১৯৫৪ খ্রিঃ জেনেভা সম্মেলন শান্তিপূর্ণভাবে ভিয়েতনাম সংকটের সমাধান করতে পারেনি। বস্তুতপক্ষে জেনেভা সম্মেলন ভিয়েতনাম সমস্যার একটি অধ্যায়ের অবসান ঘটায় এবং অপর একটি অধ্যায়ের সূচনা করে। এর কারণ হল, জেনেভা চুক্তির নির্দেশিত শর্তাবলীর রূপায়ণ সম্ভব হয়নি। জেনেভা সম্মেলনের অব্যবহিত পর থেকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জেনেভা সম্মেলনের সিদ্ধান্তের সম্মুখে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে উদ্যত হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দুটি উদ্দেশ্য সামনে রেখে এগোতে থাকে। একদিকে জেনেভা চুক্তির বাধ্যবাধকতা থেকে নিজেকে আইনগতভাবে মুক্ত রাখা সিয়াটো ন্যাটোর মতো একটি আঞ্চলেক সামরিক জোট হলেও এর চরিত্রে কয়েকটি বিশেষ দিক লক্ষণীয়। প্রথমত, ন্যাটোর মতো এই চুক্তি প্রকৃত অর্থে একটি আঞ্চলিক সংস্থা ছিল না। আটলান্টিক মহাসাগরের সন্নিহিত প্রায় সবকটি রাষ্ট্র ন্যাটোর অন্তর্ভুক্ত ছিল। কিন্তু এখানে থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন পাকিস্তান দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্তর্গত ছিল; অন্যরা ছিল অন্য মহাদেশের অন্তর্ভুক্ত। বস্তুতপক্ষে, ভারত, ব্রহ্মদেশ, ইন্দোনেশিয়া প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলি এই আঞ্চলিক জোটের সদস্যপদ গ্রহণ করেনি। অধ্যাপক জন স্পেনিয়ার সিয়াটো এই স্ববিরোধী চরিত্র সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন—“SEATO was mainly a non - Asian alliance for the defence of area, a weakness that was a plague the alliance."

দ্বিতীয়ত, সিয়াটোর সদস্য রাষ্ট্রদের দৃষ্টিভঙ্গী সমধর্মীয় ছিল না। ন্যাটোর সদস্য রাষ্ট্রগুলি সকলেই ইউরোপীয় মহাদেশে সোভিয়েত আক্রমণ প্রতিরোধ এর জন্য যৌথ নিরাপত্তার উদ্দেশ্য দ্বারা পরিচালিত হয়েছিল। কিন্তু এই চুক্তিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সাম্যবাদ প্রতিরোধের হাতিয়ারে পরিণত করতে চেয়েছিল। ফ্রান্স যৌথ অর্থনীতি সাংস্কৃতিক কার্যকলাপের পক্ষপাতী ছিল। ইংল্যান্ড দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় তার স্বার্থ সংরক্ষণ করতে আগ্রহী ছিল পাকিস্তান সাম্যবাদ প্রতিরোধ অপেক্ষা ভারত বিরোধী কার্যকলাপে আকৃষ্ট হয়েছিল। ভারত সরকার সিয়াটো গঠনের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ ব্যক্ত করেছিল ভারতের মতে, সিয়াটো গঠনের ফলে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার নিরাপত্তার অভাব বৃদ্ধি পেল এবং ঠান্ডা যুদ্ধের পরিধি বিস্তৃত হল।

তৃতীয়ত, সিয়াটো চুক্তিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দ্বৈত ভূমিকা লক্ষ্য করা যায়। সিয়াটো সদস্যরূপে যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার দায়বদ্ধতা প্রতিপালনের অঙ্গীকার করেছিল, অন্যদিকে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার নিরাপত্তা রক্ষার চেয়ে দূর প্রাচ্যে চীনকে প্রতিহত করবার তার বেশি আগ্রহ ছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দায়িত্ব পালনে নিজ স্বাতন্ত্র অক্ষুণ্ণ রাখতে চেয়েছিল। সেই জন্যই বোধ করি ন্যাটোর মতো সিয়াটোর কোন নিজস্ব বাহিনী ছিল না। নৌ-বিমান শক্তির ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান অংশ থাকলেও স্থলবাহিনীর ক্ষেত্রে বলা হল, প্রয়োজন দেখা দিলে সদস্য রাষ্ট্রবর্গ যৌথ বাহিনী গঠন করবে। পরিশেষে বলা যায়, ন্যাটো ছিল সম্ভাব্য সোভিয়েত আক্রমণের বিরুদ্ধে একটি প্রতিরোধক সংস্থা। কিন্তু জন্মলগ্নে লাওস, কম্বোডিয়া ভিয়েতনাম যুদ্ধজনিত পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়। তবে ভিয়েতনাম যুদ্ধ কোন চিরায়ত যুদ্ধ ছিল না; এগুলি ছিল গৃহযুদ্ধ, গেরিলা যুদ্ধ।

Post a Comment

0 Comments