আটলান্টিক সনদ। অথবা, আটলান্টিক চার্টার?

 

  • আটলান্টিক সনদ। অথবা, আটলান্টিক চার্টার?

                                        মোটের ওপর আমেরিকা আগাগোড়াই একটি সুবিধাবাদী দেশ। দ্বিতীয় যুদ্ধের প্রথমদিকে এরা নিরপেক্ষ নীতি গ্রহন করেছিল, কারন তারা অস্ত্র বিক্রি করে ফায়দা লোটার চেষ্টায় ছিল। মিত্রপক্ষ প্রচুর অস্ত্র বিক্রয় অর্থ ধার দিয়েছিল। তারা অর্থের বিনিময়ে যুদ্ধাস্ত্র সরবরাহ নীতি অর্থাৎ Cash and Carry নীতি নিয়েছিল। এর ফলে ইংল্যান্ড, রাশিয়া বিভিন্ন দিক থেকে উপকৃত হয়েছিল। ১৯৪০ খ্রিঃ জুন মাসে ফ্রান্সের পতন, আগস্ট মাসে ইংল্যান্ডের ওপর জার্মানির ব্যাপক বোমা বর্ষণ বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের যুদ্ধের সম্প্রসারণ আমেরিকাকে সচকিত করে তোলে। ১৯৪১ খ্রিঃ মার্কিন সেনেট গোল্ড লীজ আইন পাস করে মিত্রশক্তিগুলি অস্ত্র সাহায্য দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এর ফলে আমেরিকা গণতন্ত্রের অস্ত্রাগারে পরিণত হয়। আমেরিকা মিত্রপক্ষকে বিপুল অর্থ সাহায্য করার জন্য জার্মানির ডুবোজাহাজগুলি মার্কিন বাণিজ্য সামরিক জাহাজের ক্ষতি করে। অনেক জাহাজকেও ডুবিয়ে দেয়। ফলে আমেরিকা ক্ষুব্ধ হয়ে জার্মান ডুবোজাহাজকে দেখা মাত্র গুলি করার নির্দেশ দেয় একদিকে জাপান জার্মানির দলে যোগদান করার ফলে আমেরিকা জাপানের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক অবরোধ ঘোষণা করে। যুদ্ধের উপকরণ অস্ত্রশস্ত্র, খাদ্যদ্রব্য বন্ধ করে দেওয়া হয়। এমতাবস্থায় জাপান-আমেরিকা বৈঠক হয়। বৈঠক চলাকালে জাপান প্রশান্ত মহাসাগরীয় হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জে অবস্থিত মার্কিন নৌ-ঘাঁটি পার্ল হারবার বন্দরে বোমা বর্ষণ করে ১৯৪১ খ্রিঃ ডিসেম্বর। এতে মার্কিন জাহাজ ধ্বংস হয়ে যায়। এর ফলে আমেরিকা জাপানের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধ ঘোষণা করে। ১৯৪১ খ্রিঃ আগস্ট মিত্রপক্ষের তিন রাষ্ট্রপ্রধান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি রুজভেল্ট, ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী চার্চিল, রাশিয়ার প্রধান মার্শাল স্ট্যালিন উত্তর আটলান্টিকের সমুদ্রবক্ষেপ্রিন্স অব ওয়েলস' নামে এক যুদ্ধজাহাজে গোপন বৈঠকে মিলিত হয়ে বিশ্ব শান্তির উদ্দেশ্যে কয়েকটি শর্ত সংবলিত একটি দলিল প্রকাশ করেন। এটি আটলান্টিক সনদ নামে পরিচিত। এর কয়েকটি শর্ত হল, (আটটি)-

. ভবিষ্যতে কোনও রাষ্ট্র কোনো প্রকার বিস্তার নীতি গ্রহণ করবে না। ভবিষ্যতে কোনো রাষ্ট্রে জনগণের মতামত উপেক্ষা করে কোনো রাষ্ট্রের সীমা নির্ধারণ করা হবে না।

. সামাজিক নিরাপত্তা, জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন, কৃষক শ্রমিকদের মানোন্নয়নের ওপর জোর দেওয়া হবে।

8. ব্যবসা বাণিজ্য সহ বিভিন্ন ব্যাপারে পরস্পর পরস্পরকে সহযোগিতা করবে।

.বিশ্বের সমুদ্রপথগুলিতে সকল রাষ্ট্রের সমান অধিকার থাকবে। সকল রাষ্ট্রের শান্তি উন্নয়নকামী অনুকূল পরিবেশ গঠন করতে হবে। অস্ত্রভান্ডার সৈন্যসংখ্যা হ্রাস করতে হবে। ব্যবসা বাণিজ্যের উন্নতির জন্য সকল রাষ্ট্রেই সমান অধিকার থাকবে।

Post a Comment

0 Comments