গ্রন্থাগারে অস্তিত্ব রক্ষার পরীক্ষার সাহায্যে গ্রন্থাগারে বইয়ের সংগ্রহের একটি সুচারু ছবি ফুটে ওঠে-
i) এর মাধ্যমে নির্দিষ্ট গ্রন্থ গুলিকে শনাক্ত করা যায় এবং এগুলি পূরণ করার ব্যবস্থা হয়।
ii) শেল্ফের বিন্যাসে অবিন্যস্ত দশার সংস্কার সহজসাধ্য হয়৷
iii) এর সাহায্যে প্রশাসনিক শৈথিল্যতা ধরা পরে এবং সচেতন হওয়া যায়৷
iv) গ্রন্থের জনপ্রিয়তাও চিহ্নিত হয়৷
v) এর পরীক্ষা দ্বারা তাকের মধ্যেকার ধুলো নোংরা পরিষ্কার করা হয়৷
vi) জীর্ণ গ্রন্থ গুলি চিহ্নিত হয়৷ এগুলিকে হয় বাঁধাই করা নতুবা বাতিল করা হয়৷
vii) গ্রন্থের পরিচয় ও অবস্থান সম্পর্কে পরিচিতি বাড়ে ফলে রেফারেন্স সার্ভিসেস সুবিধে হয়৷
সুতরাং উপরের আলোচনা থেকে স্পষ্ট যে গ্রন্থাগারের গ্রন্থ অস্তিত্ব পরীক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না৷
অস্তিত্ব পরীক্ষার কয়েকটি উল্লেখযোগ্য পদ্ধতি সম্বন্ধে নিম্নে আমরা এক এক করে আলোচনা করলাম।
ক) অ্যাকসেশন রেজিস্টার এর সাহায্যে: শেলফ্ এর বই দেখে দেখে একজন বইয়ের নাম ও নম্বর পড়ে যাবেন, অন্যজন সেই নম্বরটি পাশে পাশে চিহ্ন বসান সমস্ত বই পরীক্ষার পর হিসাব পাওয়া যায় যে নিরুদ্দিষ্ট বইয়ের সংখ্যা কত? যদিও এই পদ্ধতি বড়ই অস্পষ্ট৷
খ) জমার নম্বরসহ পৃথক রেজিস্টার: এখানে একটি নমাল অ্যাকসেশন নম্বর সম্বলিত খাত তৈরি করা হয়৷ একজন সেই নম্বরগুলি বলতে থাকবেন অন্যজন সেই বছরের ঘরের টিক চিহ্ন বসান৷ সবশেষে হারানো বইয়ের তালিকা প্রস্তুত করা হয়, যদিও এই পদ্ধতি বেশ
মন্থর৷
গ) হাজার নম্বর সম্বলিত পৃথক কাগজ: একটি পৃথক পত্র এখানে ব্যবহার করা হয়৷ এখানে পরপর অ্যাকসেসন নম্বর লেখা থাকে বইয়ের অস্তিত্ব পরীক্ষা হলে নম্বরটি কেটে দেওয়া হয় যেমন-
1985-1986
1 5 9 13 17
2 6 10 14 18
3 7 11 15 ১৯
4 8 12 16 ২০
উল্লেখ্য এখানে ১০,১৯ টি কাটা হয়েছে অর্থাৎ ওই নম্বর দুটির সন্ধান পাওয়া গেছে এই পদ্ধতি খুব দ্রুত সম্ভব৷
ঘ) গণনার সাহায্যে পরীক্ষা: মোট রেজিস্ট্রারের বইয়ের সংখ্যা গণনার পর যে সংখ্যা তার সাথে রেজিস্ট্রারের সংখ্যার সঙ্গে বিয়োগ করলে বিয়োগফলই হলো লাইব্রেরীতে হারিয়ে যাওয়া বইয়ের সন্ধান পাওয়া যায়৷
ঙ) শেলফ্ তালিকার সাহায্যে পরীক্ষা: এখানে একজন সেলফ লিস্ট মিলিয়ে নেন ও অন্যজন সেলফ থেকে বই নিয়ে পরপর বসান নম্বর ডেকে যান৷ যেসব কার্ড ডাকা হয় না৷ সেগুলিকে লম্ব ভাবে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়, দাঁড়িয়ে থাকা কাঠগুড়ি নিরুদ্দিষ্ট বইয়ের সংবাদ দেয়৷ যদি না সেগুলি ইস্যু কাউন্টারে বা বাঁধতে থাকে ৷
চ) শেলফ্ তালিকা: কার্ডের সাহায্যে অস্তিত্ব পরীক্ষা- এই দ্ধতিতে উল্লেখযোগ্য দ্রুততা সঞ্চারিত হয়৷ এখানে পূর্বোক্ত পদ্ধতির মতনই না পাওয়া কাজগুলিকে দাঁড় করিয়ে রাখা হয় ও অবশেষে দিনের শেষে তার তালিকা প্রণয়ন করা হয়৷ বই এর নম্বরের সঙ্গে শেলফ্ এর তালিকা মিলে গেলে সেই কার্ড খানিকে সামনের দিকে টেনে আনতে হয়৷
ছ) কম্পিউটারের সাহায্যে পরীক্ষা: এই পদ্ধতিতে তাকের উপর সজ্জিত গ্রন্থসমূহ এবং বাধায় বিভাগ গ্রন্থ ঋণ বিভাগ প্রভৃতিতে প্রাপ্ত গ্রন্থগুলোকে সংখ্যাগুলি Computer রাখা থাকে৷ কম্পিউটার এর সাহায্যে অস্তিত্ব রক্ষার পদ্ধতিতে প্রয়োগ করা হয়৷ এবার ক্ষতির একটা গড় হিসাব করা হয় ৷
জ) নমুনা হিসেবে আংশিক অস্তিত্ব পরীক্ষা: অনেক লাইব্রেরীর যে যে অংশের দ্রব্য সম্ভার বেশি ব্যবহৃত হয় সেখানে নমুনা হিসেবে আংশিক অস্তিত্ব পরীক্ষার পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়৷ এবার মোটামুটি ক্ষতির একটা গড় হিসেবে কষা করা হয়৷
ঝ) ডুপ্লিকেট গ্রন্থ কার্ডের সাহায্যে: এক্ষেত্রে বইটার জন্য দু রংয়ের কার্ড তৈরি করা হয়৷ একটি থাকে বইয়ের পকেটে অন্যটি ক্যাবিনেটে৷ অস্তিত্ব পরীক্ষার সময় বইয়ের পকেটে সংরক্ষিত কার্ডকে ক্যাবিনেটে রাখা হয়৷ এবং ক্যাবিনেটের কার্ড কে রাখা হয় বইয়ের পকেটে৷ ফলে হারানো বইয়ের নিদর্শন হিসেবে ক্যাবিনেটে পড়ে থাকে অন্য রঙের কার্ড৷ এই প্রক্রিয়া সংগত হলে সমস্ত হারানো বইয়ের সংখ্যা জানা যায়৷
অতএব অস্তিত্ব পরীক্ষার সাহায্যে গ্রন্থাগারে বইয়ের সংগ্রহের একটি সুচারু ছবি ফুটে ওঠে।পকেটের চাহিদা অনুযায়ী কি ধরনের বইয়ের তালিকায় যুক্ত করা যায় তাই বোঝা যায়৷ গ্ৰন্থ সংগ্রহের সম্যক পরিচিতি লাভের জন্য, গ্রন্থ সম্পদের সার্বিক হিসাব রক্ষার জন্য, প্রশাসনকে দায়িত্বসঠিকভাবে পালনের জন্য গ্রন্থাগারের অস্তিত্ব পরীক্ষা ও বিন্যাস সংস্কার করা যে একান্ত প্রয়োজন তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
0 Comments