গ্রন্থাগার সংগঠনের গুরুত্ব ও বৈশিষ্ট্য আলোচনা :


কোন সংস্থার সংগঠনের গুরুত্ব অপরিসীম৷ সংগঠন তৈরির প্রক্রিয়ায় একই ধরনের কাজগুলিকে একত্রে রেখে সমস্ত কাজের শ্রেণীবিভাগ করা হয়, ফলে কোন কর্মী প্রতিনিয়ত সেই কাজ করার ফলে তাতে দক্ষ হয়ে ওঠে। সংগঠন তৈরির মাধ্যমে তাই সঠিক ব্যক্তিকে সঠিক কাজে দায়িত্ব দেওয়া সম্ভব হয়৷ এছাড়া কাজের এই শ্রেণীবিভাগের জন্য কর্তৃত্ব ও ক্ষমতার সুনির্দিষ্টিকরণ সম্ভব হয় ও কোন প্রকার পারস্পরিক ভুল বোঝাবুঝি অবকাশ থাকে না৷ সংগঠন তৈরি কাজ মূলত বিভিন্ন কাজের মধ্যে সমন্বয় সাধনের উদ্দেশ্যে করা হয়৷ তাই এখানে সমন্বয় বা সংগঠন গড়ে ওঠে এবং তা যে কোন সংস্থার পক্ষেই কাম্য৷ সংগঠন হলো ব্যবস্থাপনার মূল স্তম্ভ৷ সংগঠন কোনো সংস্থার ভবিষ্যৎ কর্মসূচিকে প্রাণবন্ত রূপ এনে দেয়৷ সংগঠন সংযোজনাও শৃঙ্খলার হাতিয়ার৷ প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন পদ ও স্তরের মধ্যে অভিন্নতার সৃষ্টির জন্য সমন্বয় প্রয়োজন এর ংগঠন ওই সমন্বয়ে সাধন করে৷ B.J.Hodge & H.J. Johnson বলেছেন সাতটি উপাদানের সমন্বয়ে সংগঠন গঠিত৷ এই সাতটি উপাদান হলো উদ্দেশ্য কর্ম ভিত্তিক বিভাগ সদস্যদের বিভিন্ন গোষ্ঠী নীতি ও পদ্ধতি বাস্তব সম্পদ ক্ষমতা এবং যোগাযোগের পথ।। চেষ্টার আর বার্নার সংগঠনের তিনটি প্রধান বৈশিষ্ট্য কথা বলেছেন সাধারণ লক্ষ্য যোগাযোগ এবং সেবার মনোভাব৷ তাই সব মিলিয়ে বলা যেতে পারে যে কোন ভালো সংগঠনের সাধারণ বৈশিষ্ট্য গুলি হল- উদ্দেশ্যমুখিনতা, কাজের সুষম বন্টন কর্তৃত্ব ও দায়িত্বের প্রবাহ আদেশের একতা ভারসাম্যতা সরলতা পরিবর্তনশীলতা নিয়ন্ত্রণে পরিধি সমন্বয় সাধন৷ এবং ব্যয় সংক্ষেপ । এগুলো কি আমরা বিশ্লেষণ করলে দেখতে পাবো যে প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানের এক বা একাধিক উদ্দেশ্য থাকে এবং সংগঠন উদ্দেশ্য সাধনের মাধ্যম৷ প্রত্যেকটি কর্মকে বিভিন্ন বিভাগ এবং উপবিভাগে বিভক্ত করার পর প্রত্যেক উপবিভাগে কর্মীদের মধ্যে কাজের দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হয়৷ কর্মীদের কাজের দায়িত্ব দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনীয় ক্ষমতা দেওয়া প্রয়োজন যার অভাবে কর্মসম্পাদন অসম্ভব৷ বিভিন্ন কাজের মধ্যে একটি ভারসাম্য অবস্থা সৃষ্টি করে সংগঠন কাজে প্রবাহকে গতিময় ও মসৃণ করে তুলে৷ সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে কোনো প্রতিষ্ঠানের বাহ্যিক পরিবর্তন যাতে খারাপ খাওয়াতে পারে তার জন্য সংগঠনে প্রয়োজনীয় অভ্যন্তরীণ পরিবর্তন প্রয়োজন৷ অর্থাৎ সংগঠন কোনো অপরিবর্তিত ব্যবস্থা নয়৷ এটিও পরিবর্তনশীল৷ সংগঠনের সরলতা অবশ্যই কাম্য একটি সরল সংগঠন থেকে কর্মীরা সহজেই তাদের কর্তব্য ও দায়িত্ব সম্পর্কে জ্ঞাত হতে পারে৷ প্রতিষ্ঠানের কাঠামো থেকে নিয়ন্ত্রণে পরিধি জানা যায়৷ প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণে পরিধি জানানো সংগঠনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য৷


সংগঠনের মূলনীতি ::- সংগঠন: সংগঠন তৈরির অর্থ বিভিন্ন ব্যক্তিদের মধ্যে উপযুক্ত সম্পর্ক স্থাপন করা,যাতে তারা দক্ষতার সাথে মিলেমিশে কাজ করতে পারে এবং নির্দিষ্ট লক্ষ্য পূরণের জন্য দক্ষতাকে ব্যবহার করতে পারে৷ সংগঠনের মাধ্যমে গৃহীত পরিকল্পনাকে বাস্তবায়িত করার চেষ্টা করা হয়৷ এর মূল উদ্দেশ্য একটি সুনির্দিষ্ট পরিকাঠামো তৈরি করা৷ এখানে সংগঠনের বিভিন্ন দিক বিশেষত পরিকাঠামো নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা হয়েছে। এবং গ্রন্থাগার সংগঠনের একটি চিত্র তুলে ধরা হয়েছে৷


কর্মী: কর্মপরিবেশ ও কাজের উপকরণের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনকে সংগঠন বলা হয়৷বস্তুত সংগঠন হলো সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য পূরণের জন্য কয়েকজন ব্যক্তি মিলে ঐক্যবদ্ধ ভাবে দক্ষতার সাথে পরিকল্পনা তৈরি করে এবং গৃহীত পরিকল্পনাকে বাস্তবায়িত করা হয়৷ সংগঠন হলো ব্যবস্থাপনার মূল স্তম্ভ৷ সংগঠন হলো সমন্বয় ও শৃংখলার হাতিয়ার৷সংগঠনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানে একজন কর্মী তার অবস্থান দায়িত্ব ও ক্ষমতা সম্পর্কে প্রাথমিক জ্ঞান লাভ করে৷ প্রতিষ্ঠানে উদ্দেশ্য সাধনের জন্য যেসব কার্যকলাপ গ্রহণ করা হয় তাদের সাফল্যের সাথে সম্পাদনের নেপথ্যে সর্বাপেক্ষা বড় ভূমিকা সংগঠনের৷ তাই বলা যায় সংগঠন এমন এক কাল্পনিক কাঠামো যা বিভিন্ন কর্ম কর্মীর মধ্যে দায়িত্ব ও ক্ষমতা বন্টন করে সেগুলির সম্পাদনা সুনিশ্চিত করে৷


সংগঠনের মূলনীতি: আধুনিক ব্যবস্থাপনার একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় সংগঠন৷ সংগঠন কিছু কিছু নীতি অনুযায়ী গঠিত হয়৷ সেই নীতিগুলি নীচে আলোচনা করা হলো-


i) উদ্দেশ্যের সামঞ্জস্য সংক্রান্ত নীতি(Principle of Unity of Objectives):- কোন সংগঠনের সুনির্দিষ্ট কিছু উদ্দেশ্য থাকে৷ সেই উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত করার ক্ষেত্রে কর্মীদের অবদান অসামান্য৷কোন সুনির্দিষ্ট সংগঠনের বিভিন্ন স্তর বা বিভাগ অথবা উপবিভাগ অথবা সংশ্লিষ্ট কর্মীদের প্রতিষ্ঠানের মূল উদ্দেশ্যের সঙ্গে এক হওয়া বাঞ্ছনীয়৷

ii) বিশিষ্টতা সংক্রান্ত নীতি (Principle of Spalisation):এই নীতি অনুযায়ী কোন সংস্থার উন্নতির জন্য সেই সংস্থার বৈশিষ্ট্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই সংস্থার বৈশিষ্ট্য কে প্রথম প্রধান্য দেওয়া উচিত৷

iii) সরলতা সংক্রান্ত নীতি (Principle of Simplicity): সংগঠন নীতি যথাসম্ভব স্মরণ হওয়া প্রয়োজন এবং পরিকাঠামো টিও যতসম্ভব সহজ সরল হওয়া বাঞ্ছনীয়৷

iv) নমনীয় সংক্রান্ত নীতি(Principle of Flexibility) : সংস্থাটি নমনীয় হতে হবে৷ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের অবস্থায় মানানসই হতে হবে এবং যুগোপযোগী সম্প্রসারণ বা সংকোচন করার ক্ষমতা থাকতে হবে৷ বিভিন্ন পরিবেশের সঙ্গে অভিযোজিত না হলে সংস্থার অস্তিত্ব বিপন্ন হবে৷

v) ভারসাম্য(Principle of Balance): বিভিন্ন ধরনের বিভাগ ও উপবিভাগের মধ্যে সামঞ্জস্য থাকতে হবে৷ কেন্দ্রীয়করণ ও বিকেন্দ্রীয়করণ এর মধ্যে সামঞ্জস্য থাকা দরকার এবং নানাবিধ উপাদান প্রযুক্তি কর্মী অর্থ ইত্যাদির মধ্যেই সমন্বয় এর প্রয়োজনীয়তা আছে৷

vi) নিয়ন্ত্রণের সীমাবদ্ধতা (Principle of Limited Span of Control): মুখ্য কর্ম নির্বাহকের প্রত্যক্ষ কর্তৃত্বাধীনে অধিক সংখ্যক বিভাগ না থাকাই ভালো কেননা একজন ব্যবস্থাপকের পক্ষে

সংখ্যক অদক্ষ কর্মচারীদের দক্ষতার সঙ্গে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব৷

vii) স্তরানুক্রমিক ক্ষমতা(Principle of Scalar Authority): সুষ্ঠু সংগঠনের বৈশিষ্ট্য স্তরানুক্রমিক ক্ষমতা৷ কর্তৃত্ব উচ্চ স্তর থেকে নিম্ন স্তরের পর্যায়ক্রমে নেমে আসে এবং নিম্ন স্তর থেকে উচ্চ স্তরের ধাপে ধাপে প্রতিবেদন পেশ করে৷

viii) আদেশের একতা(Unity of Command) : কাজের একতা রক্ষা করার জন্য আদেশের একতা প্রয়োজন৷কোন অধঃস্তন কর্মীকে একজন মাত্র উর্দ্ধতন কর্মী আদেশ দেবেন এবং প্রতিটি অধঃস্তন কর্মী একজন মাত্র উর্দ্ধস্তন কর্মীর কাছে কৈফিয়ৎ দেবেন৷

ix) কর্তৃত্ব ও দায়িত্ব অর্পণ (Delegation of Authority and Responsibility):কর্তৃত্ব অর্পণ এর উপর ভিত্তি করেই সংগঠনের সামগ্রিক কার্যকলাপ পরিচালিত হয়৷ অধঃস্তন কর্মচারীকে যাতে সুষ্ঠুভাবে দায়িত্ব সম্পাদন করতে পারেন যে কোন উর্দ্ধতন কর্মচারীদের উচিত তাদের উপর যথাযথ কর্তৃত্ব অর্পণ করা৷ কর্তৃত্ব অর্পনের গুরুত্ব এইভাবে বোঝা যায় ব্যবস্থাপকদের কাদের মধ্যে সুসম্পন্ন তৈরি হয়৷ব্যবস্থাপনার এবং ব্যবস্থাপকদের দক্ষতার উন্নতি হয়এবং সর্বোপরি এর দ্বারা অধঃস্তন কর্মচারীরা অনুপ্রাণিত হয়৷

x ) রৈখিক ও কর্মী, সংক্রান্ত কর্তৃত্ব (Line and Staff Authority): রেখা অর্থ কর্তৃত্ব এবং কর্মী সংক্রান্ত কর্তৃত্ব যে কোন সংগঠনের মূল স্তম্ভ। রেখা ও কর্মী তাদের ধাচের সংগঠনের কর্তৃত্ব ও পরামর্শ সুসমন্বিত রৈখিক কর্তৃত্ব সংক্রান্ত কার্যাবলী মূলত সাংগঠনিক উদ্দেশ্য ও প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত থাকে৷এই ধরনের কার্যাবলীর ধরন এক প্রতিষ্ঠান থেকে অন্য প্রতিষ্ঠানে ভিন্ন ভিন্ন হয়৷

xi) কার্যভিত্তিক কর্তৃত্ব (Functional Authority): এফ.এইচ.টেলরের অবদান হিসেবে এই পদ্ধতি স্বীকৃত৷ রেখা ধাচ বা রেখা কর্মী ধাচ সংগঠনের উদ্দেশ্য ও প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত থাকে৷এই ধরনের কার্যাবলীর ধরন এক প্রতিষ্ঠান থেকে অন্য প্রতিষ্ঠানে ভিন্ন ভিন্ন হয়৷ রেখা ধাচ বা রেখা কর্মী ধাচ সংগঠনের প্রায়শই সমন্বয়ের অভাবে সমস্যার জন্ম দেয়৷কাজেই এমন কোন উপায় থাকা দরকার যার ভিত্তি হলো কাজ৷প্রথমেই যদি প্রত্যেকের কর্তব্যের সীমা নির্দিষ্ট করে দেয়া হয় এবং তা যদি করা যায় কাদের স্বরূপ অনুযায়ী তাহলে দুই বিভাগে দুবার করা দরকার হয়না৷

xii) কেন্দ্রীভূত নিয়ন্ত্রণ(Centralized Control):সাফল্যের জন্য প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন বিভাগে কাজে নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন৷ কোনো সুষ্ঠু সংগঠনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল কেন্দ্রীভূত নিয়ন্ত্রণ

xiii) সমন্বয় (Coordination and Integration): কোন সংস্থায় সমন্বয় স্থাপিত হলে কর্মপ্রবাহ মসৃণ হয় এবং আন্তঃবিভাগীয় দ্বন্দ্ব পরিহার করা সম্ভব হয়৷ প্রতিষ্ঠানের কাজ যাতে সুষ্ঠুভাবে সম্পাদিত হয় সে জন্য সকলের দৃষ্টি প্রয়োজন৷ সংহতি প্রক্রিয়ায় বিক্ষিপ্ত অবলুপ্তি ঘটে।

Post a Comment

0 Comments