- শিল্প বিপ্লব কেন প্রথম ইংল্যান্ডে দেখা দিয়েছিল?
- অথবা ইংল্যান্ডে শিল্প বিপ্লব প্রথম হওয়ার কারন আপনি কিভাবে ব্যাখ্যা করবেন?
ইউরোপীয় মহাদেশে ইংল্যান্ডেই শিল্পবিপ্লব প্রথম শুরু হয়। ফ্রান্স, জার্মাণি, হল্যান্ড, রাশিয়া, আমেরিকা ইত্যাদি দেশে আরও অর্ধশতাব্দি পর শিল্পবিপ্লব দেখা দিয়েছিল। ইংল্যান্ডে সর্বপ্রথম শিল্পায়ন ঘটার পেছনে পন্ডিতেরা কিছু কারণ নির্দেশিত করেছেন যা বিস্তারিতভাবে নিম্নে বর্ণনা করা হল।
প্রাকৃতিক পরিবেশ : ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় ইংল্যান্ডের ভৌগলিক এবং প্রাকৃতিক পরিবেশ শিল্পায়নের ক্ষেত্র প্রস্তুতে সহযোগীতা করেছিল।
প্রথমত, ইংল্যান্ডের স্যাতস্যাতে আবহাওয়া বস্ত্র শিল্পের উপযোগী ছিল কারণ এই ভিজে আবহাওয়ার জন্য রেশম স্মৃতিগুলি ভঙ্গুর হত না।
দ্বিতীয়ত, ইংল্যান্ডের নদী জলপ্রপাতগুলি জলশক্তি চালিত যন্ত্র চলাচলে সুবিধা করে দিয়েছিল।
তৃতীয়ত, ইংল্যান্ডের দক্ষিণে প্রবল পরিমাণ বায়ু বেগে বহমান হত। যার দ্বারা যন্ত্রচালিত বায়ুকলগুলি চলাচলে সুবিধা পেত।
চতুর্থত, প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ কয়লা এবং লোহার সঞ্চয় শিল্পায়ন প্রক্রিয়া তরান্বিত করেছিল। এছাড়া ইংল্যান্ডের খরস্রোতা নদীগুলি পন্য এবং কাঁচামাল পরিবহনে যথেষ্ট ভূমিকা পালন করায় ইংল্যান্ডের শিল্পায়ন দ্রুততর হয়েছিল। তবে কিছু পরোক্ষ কারনও ছিল যা শিল্প বিপ্লবকে ত্বরান্বিত করেছিল-কাঁচামাল, বাজার এবং মূলধন-শিল্প বিপ্লবের জন্য তিনটি প্রয়োজনীয় উপাদান হল কাঁচামাল,বাজার এবং মূলধন। ইংল্যান্ডের ক্ষেত্রে এই তিনটি জিনিসের কোনো অভাব ছিল না। কারণ ইংল্যান্ডে কাঁচামালের জন্য এইসময় প্রায় একচেটিয়া বাজার গড়ে তুলেছিল। শিল্পায়নের জন্য প্রয়োজনীয় মূলধন ইংল্যান্ডে অভাব ছিল না।
রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা—রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ইংল্যান্ডে শিল্পবিপ্লবের অন্যতম উল্লেখযোগ্য কারন। ১৬৮৮ খ্রীঃ পরেও ইংল্যান্ড বেশ কিছু যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। কিন্তু এর প্রত্যক্ষ প্রভাব ইংল্যান্ডে কখনোই পড়েনি। কারণ ইংল্যান্ডের নৌ-বহর ছিল খুবই শক্তিশালী। এই শক্তিশালী নৌ-বহর থাকার জন্যই ফ্রান্স বা জার্মাণির তুলনার ইংল্যান্ডে প্রথম শিল্পায়ন দেখা দিয়েছিল।
যোগাযোগ ব্যবস্থা—ইংল্যান্ড ছিল এক সমুদ্র বেষ্টিত দ্বীপপুঞ্জের দেশ। একমাত্র ইংল্যান্ডের সাথেই গোটা বিশ্বের সামুদ্রিক যোগাযোগ বর্তমান ছিল। কারণ ইংল্যান্ডের জাহাজ এবং বন্দর ছিল উন্নতমানের। ইংল্যান্ডে শিল্পায়নের অন্যতম কারন দীর্ঘ ভগ্ন উপকূলভাগ। তাই বিভিন্ন অঞ্চলে প্রভূত পরিমাণ বন্দর গড়ে উঠেছিল। এছাড়াও স্থলপথে প্রচুর পাকা রাস্তা গড়ে উঠেছিল যা যোগাযোগ ব্যবস্থাতে আমূল পরিবর্তন এনেছিল।
সরকারি পৃষ্ঠপোশকতা – ১৬৪০ খ্রীঃ গৃহযুদ্ধের ফলে মধ্যবিত্তদের রাজনৈতিক শক্তি বৃদ্ধি পায়। তারা ইংল্যান্ডের অর্থনীতিতে নেতৃত্ব কায়েম করে এবং শিল্পবিপ্লবেও তাদের ভূমিকা ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তারা পার্লামেন্টে সরকারকে শিল্প উন্নয়নের জন্য সাহায্য করতে বাধ্য করে। ব্রিটিশ সরকারও দেশের ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের নানা ভাবে সাহায্য করে। আমদানীকৃত বিদেশী পন্যের উপর উচ্চহারে শুল্ক বসিয়ে শিল্পকে সুরক্ষিত করা হয়।
বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার এবং বস্ত্রশিল্প—অনুকূল পরিবেশের সাথে যুক্ত হয়েছিল বেশ কিছু যুগোপযোগী আবিষ্কার যা শিল্পবিপ্লবকে ত্বরান্বিত করেছিল, ইংল্যান্ডে বস্ত্রশিল্পেই প্রথম যন্ত্রভিত্তিক উৎপাদন শুরু হয়। ১৭৩৩ খ্রীঃ জন, কে আবিষ্কার করেন জনসংখ্যা বৃদ্ধি—অষ্টাদশ শতকে ইংল্যান্ডের জনসংখ্যা প্রবলভাবে বৃদ্ধি পায়। উড়ত্তমাকু নামক কাপড় বোনার যন্ত্র। ১৭৬৫ খ্রীঃ হারগ্রিভস আবিষ্কার করল উড়ন্ত এই বর্ধিত জনসংখ্যার জন্য গ্রামে কোনো কর্মসংস্থান ছিল না । এজন্য শ্রমিকেরা কর্মের মানের সুতো কাটার যন্ত্র স্পিনিং জেনি। জেমস ওয়াট আবিষ্কার করল বাষ্পচালিত উদ্দেশ্যে গ্রাম ছেড়ে শহরমুখি হতে শুরু করে। এছাড়া ইংল্যান্ডে এনক্লোজার ব্যবস্থা : ইঞ্জিন। ১৭৬০ খ্রীঃ জন স্মিটন আবিষ্কার করেন লোহা গলাবার চুল্লি বা ব্লাষ্ট ফার্নেস। উর হওয়ায় বহু কৃষক কর্মচ্যুত হয়। ফলে উক্ত জমিতে ফসলের পরিবর্তে পশমের এই সময় লোহার সঙ্গে সঙ্গে কয়লার খনিও আবিষ্কার হল এবং কয়লা উত্তোলন উৎপাদন শুরু হয়। ফলস্বরূপ উক্ত প্রান্তিক কৃষকেরা কাজের জন্য ইংল্যান্ডের শিল্প করতে ১৮১৫ খ্রীঃ হামফ্রে ডেভি আবিষ্কার করেন সেফটি ল্যাম্প। এছাড়াও ১৮১৫ কলকারখানায় ভিড় করে। যার দরুন সামান্য পারিশ্রমিকে প্রচুর শ্রমিক ইংল্যান্ডের খ্রীঃ আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার রবার্ট ফুলটনের দ্বারা তৈরি বাস্পীয় পোত বা কলকারখানার মালিকেরা পেয়ে যান। উপরিউক্ত বিভিন্ন আবিষ্কার, সরকারি সহযোগিতা, ব্রিটিশ পুঁজির প্রাচুর্যতা, সর্বোপরি ইংল্যান্ডে স্থিত বণিক গোষ্ঠির একান্ত উদ্যোগের জন্য ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় ইংল্যান্ডে প্রথম শিল্প বিপ্লব সংগঠিত করেছিল।
0 Comments