- সেডানের যুদ্ধ।
১৮৬৮ খ্রীঃ গনবিদ্রোহের ফলে স্পেনের রাণি ইসাবেলা সিংহাসনচ্যুত হলে, স্পেনবাসী প্রাশিয়ার রাজবংশ হোহেনজোলান বংশীয় প্রিন্স লিওপোল্ডকে স্পেনের রাজপদ গ্রহণের জন্য অনুরোধ করে। এই সংবাদে ফ্রান্সে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয় । ফ্রান্সের পূর্বে জার্মাণি এবং পশ্চিমে স্পেন যদি একই হোহেনজোলার্ন বংশীয় রাজাদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয় তবে ফ্রান্সের সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে। ফ্রান্সের এই বিক্ষোভের ফলে প্রিন্স লিওপোল্ড স্পেনবাসীর এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। ফ্রান্স কিন্তু এতেও খুশি হয়নি। ফরাসি সম্রাট তৃতীয় নেপোলিয়ন প্রাশিয়া রাজ প্রথম উইলিয়ামের কাছ থেকে এই মর্মে প্রতিশ্রুতি আদায় করতে চান যে, হোহেনজোলার্ন বংশের কেউ কখনও স্পেনের সিংহাসনে বসবে না। এই উদ্দেশ্যে ফরাসি দূত কাউন্ট বেনেদিতি মেস নামক স্থানে বিশ্রামরত প্রাশিয়া রাজের সঙ্গে স্বাক্ষাৎ করেন। প্রাশিয়া রাজ এ ধরণের কোনো প্রতিশ্রুতি দানে তার অক্ষমতা প্রকাশ করেন এবং পুরো বিষয়টি টেলিগ্রাম মারফত প্রধানমন্ত্রী বিসমার্ককে জানান। ইতিহাসে এই ঘটনা 'এমস টেলিগ্রাম নামে খ্যাত।' কূট কৌশলী বিসমার্ক মূল টেলিগ্রামরে কিছু শব্দ বাদ দিয়ে টেলিগ্রামটি এমনভাবে সাজিয়ে পরের দিন সংবাদপত্রে প্রকাশ করেন যাতে মনে হয় যে প্রাশিয়া রাজ ফরাসী দূতকে অপমান করেছেন। এতে ফরাসী জনমত প্রবলভাবে বিক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠে এবং তাঁরা তাঁদের জাতীয় অপমানের প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য প্রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার দাবি করতে থাকে। বিসমার্ক এই সুযোগের অপেক্ষায় ছিলেন। অপ্রস্তুত ফ্রান্স ১৮৭০ খ্রীঃ প্রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করেন,যা ‘সেডানের যুদ্ধ' নামে পরিচিত। নির্বান্ধব ফ্রান্স সেডানের যুদ্ধে চূড়ান্তভাবে পরাজিত হয় এবং ফরাসি তৃতীয় নেপোলিয়ন বন্দি হন। এই পরাজয়ের সংবাদ ফ্রান্সে পৌঁছানো মাত্র ব্যাপক বিদ্রোহ শুরু হয়। দ্বিতীয় সাম্রাজ্যের অবসান ঘটিয়ে পুনরায় প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮৭১ খ্রীঃ ফ্রাঙ্কফোর্ট সন্ধি দ্বারা আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধের অবসান ঘটে।
0 Comments