- গ্যারিবল্ডী।
ম্যাৎসিনি ছিলেন আদর্শবাদী কিন্তু গ্যারিবল্ডী ছিলেন যথার্থ কর্মীপুরুষ। কোনোরুপ রাজনৈতিক প্রয়োজনীয়তা বোঝার চেষ্টা তিনি করতেন না। একমাত্র অস্ত্রেই তিনি বিশ্বাসী ছিলেন। লক্ষ্যভ্রষ্টের প্রতি বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ করতেন না, আঘাতের উপর আঘাত দেওয়াকেই তিনি চরম লক্ষ্য বলে মনে করতেন। এইরূপ মনোভাবের জন্য তাঁর সম্বন্ধে বলা হয় যে তিনি ছিলেন সিংহ-হৃদয় কিন্তু বুদ্ধিতে বলদের সমগোত্রীয়। ম্যাৎসিনির নিকট স্বাধীনমন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে ১৮৩৬ খ্রীঃ গ্যারিবল্ডী ইতালির মুক্তি আন্দোলনে যোগদান করেন। নব্য-ইতালি দলের প্রচেষ্টা বিফল হওয়ার পর তিনি ১৮৩৬-১৮৪৮ খ্রীঃ পর্যন্ত দক্ষিণ আমেরিকায় নির্বাসিত জীবন যাপন করেন। ১৮৪৮ খ্রীঃ স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করে তিনি সার্ভিনিয়ার নেতৃত্বে অস্ট্রিয়ার বিরূদ্ধে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। রোমে সাধারণতন্ত্রও প্রতিষ্ঠা করেন। অবশ্য ফরাসীবাহিনীর কাছে পরাজিত হয়ে অবশেষে আমেরিকায় গমন করেন। ১৮৫৮ খ্রীঃ তিনি দ্বিতীয়বার স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন। ১৮৬০ খ্রীঃ নেপলস ও সিসিলিতে গণঅভ্যুথ্যান ঘটলে সেখানকার জণসাধারনের আমন্ত্রনে তিনি আন্দোলনে যোগদান করেন। দুঃসাহসিক অভিযানের প্রতি তাঁর আকর্ষণ ছিল প্রবল। তাঁর নেতৃত্বে আন্দোলন সফল হয় এবং তিনি নেপলস ও সিসিলির ডিরেক্টর রূপে স্বীকৃত হন। পরে তিনি ভিক্টর দ্বিতীয় ইমান্যুয়েলের অনুকূলে উক্ত দ্বীপ দুটি পরিত্যাগ করে দক্ষিণ ইতালির বিজয় সম্পন্ন করতে অগ্রসর হন। কিন্তু অবশেষে কাভুরের কুটনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পরাজিত হয়ে তিনি রোম অধিকারের সংকল্প পরিত্যাগ করেন। স্বাধীনতা যুদ্ধের অবসানের পর যখন পুরস্কারের সময় আসল তখন তিনি তা উপেক্ষা করে ক্যাপরেরা দ্বীপে নিজস্ব কৃষিক্ষেত্রে চলে যান। এইরূপ আত্মত্যাগ ও স্বদেশ প্রেমের দৃষ্টান্ত পৃথিবীর ইতিহাসে অতি বিরল।
0 Comments