- জোলভেরাইন। অথবা জোলভারেন।
১৮১৯ খ্রীঃ জার্মাণ অর্থনীতিবিদ ম্যাজেন-এর উদ্যোগে এবং প্রাশিয়ার নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত, ‘জোলভেরাইন' নামক শুল্কসংঘ জার্মাণির ঐক্য আন্দোলনের গতিকে সুদৃঢ় করেন। আগে বিভিন্ন জার্মাণ রাজ্যে নানা ধরণের এবং পৃথক পৃথক আমদানি ও রপ্তানি শুল্ক প্রচলিত ছিল। এতে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ও পন্যদ্রব্য চলাচলে নানা অসুবিধা দেখা দিত। একমাত্র প্রাশিয়াতেই ৬৭ রকমের শুল্ক প্রচলিত ছিল। ১৮১৯ খ্রীঃ প্রাশিয়া প্রথম এই শুল্কসংঘ গঠন করে। ১৮৩৩ খ্রীঃ মধ্যে উত্তর ও মধ্য জার্মানির সকল রাষ্ট্র এই শুল্ক চুক্তির অন্তর্ভুক্ত হয়। ক্রমে দক্ষিণের ব্যাবেরিয়া সাক্সনি ও অন্যান্য রাষ্ট্রও এর সঙ্গে যুক্ত হয়। ১৮৩৪ খ্রীঃ মোট ১৭টি রাষ্ট্র এর সঙ্গে যুক্ত ছিল। প্রতি বছর একবার করে শুল্কসংঘের বৈঠক বসত। নবগঠিত এই শুল্ক সংঘে যোগদানকারী রাজ্যগুলি বিনা শুল্কে বা নামমাত্র শুল্কে নিজেদের মধ্যে অবাধ বাণিজ্য চালাত এবং এর ফলে বাণিজ্যিক দিক থেকে তারা যথেষ্ট লাভবান হয়। ১৮৫০ খ্রীঃ মধ্যে অষ্ট্রিয়া ব্যতীত জার্মাণির সব রাজ্যই এই শুল্কসংঘে যোগদান করে। মূলত অর্থনৈতিক উদ্দেশ্যে গঠিত হলেও এর রাজনৈতিক গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। প্রাশিয়া তথা জার্মাণির ইতিহাসে এই শুল্কসংঘ খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
১) জার্মানি এই প্রথম একটি অর্থনৈতিক ঐক্যের বন্ধনে আবদ্ধ হল এবং এর ফলে জার্মানির দ্রুত অর্থনৈতিক রুপান্তর ঘটে। যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হল। রেলপথের সম্প্রসারণ ঘটল, বৈদেশিক বাণিজ্য প্রসারিত হল, আমদানি ও রপ্তানির পরিমান বৃদ্ধি পেল এবং পুঁজির বিকাশ ঘটল।
২) জার্মানির বিভিন্ন রাজ্যের মধ্যে পারস্পরিক আদান-প্রদান ও যোগাযোগের ফলে তাদের মধ্যে ঐক্যবোধ বৃদ্ধি পায়।
৩) অর্থনৈতিক ঐক্য রাজনৈতিক ঐক্যের পথ প্রশস্ত করে এবং অর্থনৈতিক নেতৃত্বের মাধ্যমে প্রাশিয়া জার্মাণির রাজনৈতিক নেতৃত্বের যোগ্যতা অর্জণ করে। তাই একথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, ১৮৭১ খ্রীঃ স্থাপিত জার্মাণ সাম্রাজ্যের ভিত্তি স্থাপন করেছিল জোলভেরাইন। ঐতিহাসিক ম্যারিয়ট বলেন যে, জার্মাণিকরণে প্রথম ধাপ হল জোলভেরাইন ভাবধারাকে আশা ও কল্পনার স্তর থেকে প্রকৃত ও আবশ্যকীয় পর্যায়ে রূপান্তরিত করে। জার্মাণির মানুষ জোলভেরাইনকে তাদের জার্মাণিকরণের পথে পদক্ষেপ বলে মনে করত। অধ্যাপক হেজ-এর মতে, জোলভেরাইন হল জার্মাণির রাজনৈতিক ঐক্যের প্রথম গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক পদক্ষেপ।
0 Comments