বিসমার্কের রক্ত ও লৌহনীতি জার্মানির ঐক্য আন্দোলনকে কীভাবে প্রভাবিত করেছিল? অথবা জার্মানিকে ঐক্যবদ্ধ করার প্রয়াসে বিষমার্ক কীভাবে রক্ত ও লৌহ নীতির প্রয়োগ করেছিনে?

 

  • বিসমার্কের রক্ত লৌহনীতি জার্মানির ঐক্য আন্দোলনকে কীভাবে প্রভাবিত করেছিল
  • অথবা জার্মানিকে ঐক্যবদ্ধ করার প্রয়াসে বিষমার্ক কীভাবে রক্ত লৌহ নীতির প্রয়োগ করেছিনে?

                         ফ্রাঙ্কফুট পার্লামেন্টের বিফলতার ফলে শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক পথে জার্মাণির ঐক্য স্থাপনের চেষ্টা বিফল হয়। ইতিহাসের দেবীর নির্দেশে বিসমার্করক্ত লৌহনীতির দ্বারা জার্মাণিকে ঐক্যবদ্ধ করেন। নিরপেক্ষভাবে বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে যে, জার্মাণির ঐক্য ছিল দুই বিশেষ ধারার আন্দোলনের ফল। একদিকে ঐক্যবাদী, জাতিয়তাবাদী বৈপ্লবিক আন্দোলন জার্মাণির বিভিন্ন রাজ্যের বংশানুক্রমিক রাজাদের শিকড় আলগা করে দেয়। জার্মানির ঐক্যই যে জার্মানির ভবিতব্য সেই দৃষ্টিভঙ্গি গঠন করে। এই দিক থেকে জার্মানির ঐক্য ছিল ইতিহাসের গতির পরিণাম। অপরদিকে ১৬ শতকের ধর্মবিপ্লব বা এর যুগ থেকে সমগ্র জার্মাণির ওপর একাধিপত্য স্থাপণের জন্য জার্মাণ রাজবংশগুলির কূটনৈতিক সশস্ত্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা দীর্ঘকাল ধরে চলেছিল। শেষপর্যন্ত উদীয়মান প্রাশিয়ার জোহেনজেলার্ন বংশের সঙ্গে ক্ষয়িষ্ণু অস্ট্রিয়ার হ্যাপসবার্গ বংশের চূড়ান্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা জার্মাণির ঐক্যকে প্রতিষ্ঠা করে।

প্রাশিয়ার রাজা প্রথম উইলিয়ামের সাথে তার পার্লামেন্টের উদারপন্থী সদস্যদের ১৮৬২ খ্রীঃ প্রাশিয়ার সেনাদল সংগঠন সম্পর্কে ঘোর মতভেদ হয়। পার্লামেন্ট প্রাশিয়ার রাজাকে সামরিক সংস্কারের জন্যে প্রায়োজনীয় অর্থ বরাদ্ধ করাতে অস্বীকার করেন। এই পরিস্থিতিতে ১৮৬২ খ্রীঃ প্রথম উইলিয়াম বিসমার্ককে প্রাধানমন্ত্রী হিসাবে নিয়োগ করেন। বিসমার্ক প্রাধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ গ্রহণের সময় বলেন যে, তিনি প্রাশিয়ার রাজশক্তির ক্ষমতা হ্রাস করতে দেবেন না। বিসমার্ক মনে করেছিলেন, প্রাশিয়ার রাজবংশের নেতৃত্বে এবং প্রাশিয়ার সামরিক ক্ষমতার দ্বারা জার্মাণির রাজ্যগুলিকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে এবং এক্ষেত্রে যুদ্ধনীতি গ্রহণ করতে হবে। প্রাশীয়া পার্লামেন্টে এক ঐতিহাসিক বক্তৃতায় তিনি বলেন যে, “জার্মাণি প্রাশিয়ার উদারতন্ত্রের দিকে তাকিয়ে নেই। প্রাশিয়ার শক্তির দিকেই তাকিয়ে আছে। বিতর্ক বা ভোটের দ্বারা জাতীয় সমস্যার সমাধান হবে না, রক্ত লৌহের দ্বারা একমাত্র সমাধান হবে।বিসমার্ক আরও বলেন যে জার্মাণি একটি ছোট দেশ। অস্ট্রিয়া এশিয়া দুই শক্তির স্থান এই দেশে সঙ্কলন হবে না, সুতরাং প্রাশিয়ার স্বার্থে অস্ট্রিয়াকে জার্মাণি ত্যাগ করতে হবে, এজন্য দরকার হলে যুদ্ধ করার নীতি গ্রহণেও তিনি অনিচ্ছুক নন।

ঐতিহাসিক এরিস আইকের মতে, বিসমার্ক একথা জানতেন যে, যতদিন জার্মাণ রাজ্যগুলি ভিয়েনা চুক্তি দ্বারা স্থাপিত বুন্ড বা কেন্দ্রীয় সভা অস্ট্রিয়ার নেতৃত্বের প্রতি আস্থাশীল থাকবে, ততদিন প্রাশিয়ার নেতৃত্বে জার্মাণির ঐক্য স্থাপন সম্ভব হবে না। এজন্য বুন্ডের সভায় তিনি প্রাশিয়ার নেতৃত্বে জার্মাণির ক্ষুদ্র রাজ্যগুলিকে সংগঠনের চেষ্টা করেন। এছাড়া বিভিন্ন ইউরোপীয় শক্তির সঙ্গে প্রাশিয়াকে মিত্রহীন করার চেষ্টা করেন। বিসমার্ক এরূপ সতর্কতার সঙ্গে তাঁর কূটনীতি পরিচালনা করেন যে, অষ্ট্রিয়া তার আসল উদ্দ্যেশ্য বুঝতে ব্যর্থ হয়। জার্মাণ বুন্ড বা কেন্দ্রীয় সভায় অস্ট্রিয়ার জনপ্রিয়তা হ্রাসের উদ্দ্যেশ্যে তিনি জার্মাণ যুক্তরাষ্ট্রীয় সংবিধান সংশোধনের কথা বলেন। এরফলে জার্মাণির ক্ষুদ্র রাজ্যগুলির উৎসাহ বাড়ে। ১৮৬২ খ্রীঃ তিনি ফ্রাঙ্কেন প্রাশিয়া বাণিজ্য-চুক্তি সম্পাদন করেন। ফ্রান্সের সঙ্গে প্রাশিয়া মিত্রতার সোপান রচনা করেন। ১৮৬২ খ্রীঃ পোল জাতি স্বাধীনতা লাভের জন্যে রাশিয়ার বিরূদ্ধে বিদ্রোহ করলে বিসমার্ক রাশিয়াকে এই বিদ্রোহ দমনে বিশেষ সাহায্য করেন। এভাবে রাশিয়া ফ্রান্স এই দুই বৃহৎ শক্তির মিত্রতায় তিনি প্রাশিয়ার আনুকূল্য পান।

Post a Comment

0 Comments