ডাইরেক্টরী শাসন অথবা ডিরেকটরি শাসন (১৭৯৫-১৭৯৯)?

 

  • ডাইরেক্টরী শাসন অথবা ডিরেকটরি শাসন (১৭৯৫-১৭৯৯)?

                       সন্ত্রাসের রাজত্বের অবসানে ১৭৯৫ খ্রীঃ কনভেনশন ডাইরেক্টরী' নামে এক নতুন সংবিধান প্রস্তুত করে। পাঁচজন ডাইরেক্টর নিয়ে একটি কার্যনির্বাহক সংস্থা গঠন করা হয়। তাছাড়া প্রবীন পরিষদ পাঁচশো সদস্যের পরিষদ নামে দুটি পরিষদ যুক্ত একটি আইনসভাও স্থাপিত হয়। নতুন আইনসভার দুই তৃতীয়াংশ সদস্য কনভেনশনের সদস্যদের মধ্যে থেকে গ্রহণ করা বাধ্যতামূলক করা হয়। ডাইরেক্টরগণকে আইনসভা কর্তৃক নির্বাচিত করার ব্যবস্থা হয়। প্রতি বছর একজন করে ডাইরেক্টরকে পদত্যাগ করার এবং তার স্থলে নতুন একজন সদস্যকে নির্বাচিত করার ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু আইন প্রণয়ন বা আইন সংক্রান্ত কোনো প্রস্তাব গ্রহণের অধিকার ডাইরেক্টরেট বা কার্যনির্বাহক সংস্থাকে দেওয়া হয়নি।

১৭৯১ খ্রীঃ সংবিধানে রাজা মন্ত্রীবর্গকে রাষ্ট্রের প্রকৃত ক্ষমতা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছিল। যদিও শাসনকার্যের সকল দায়িত্ব রাজার হাতে রাখা হয়েছিল। ১৭৯৩ খ্রীঃ সংবিধানে আইনসভার হাতে কার্যনির্বাহক ক্ষমতা ন্যস্ত রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু ১৭৯৬ খ্রীঃ সংবিধানে পুনরায় কার্যনির্বাহক সমিতি আইনসভাকে পৃথকীকরণ করা হয়। ডাইরেক্টরীর প্রথম ডাইরেক্টরগণ ছিলেন লেয়ার ভেলিয়ার, রিউবেল বারাস, লাতুন্যায়ের কারনো। এরা সকলেই ষোড়শ লুই-এর প্রাণদন্ডের ব্যাপারে ভোট দিয়েছিলেন।

কিছুদিনের মধ্যেই ডাইরেক্টরগণ দুটি দলে বিভক্ত হয়ে পড়েন। রিউবেল লেয়ার ভেলিয়ার বারাস এই তিনজন ছিলেন বিপ্লবীদের নেতৃস্থানীয়। বিপ্লবী দল ইউরোপের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ায়, যাজক ইমিগ্রিসদের আত্মীয়স্বজনের বিরুদ্ধে কঠোর বিধি-ব্যবস্থা পুনরায় অবলম্বন করার ইউরোপে ফরাসি বিপ্লবের কর্মপন্থা চালিয়ে যাবার পক্ষপাতী ছিলেন। অপরদিকে কারনো, লার্তুন্যায়ের পরিষদের সদ্য নির্বাচিত পাঁচশো সদস্যগন ছিলেন সংবিধানপন্থী। এরা যুদ্ধের অবসান ঘটিয়ে ফ্রান্সে শাসনতান্ত্রিক সরকার গঠনের পক্ষপাতি ছিলেন। এই সংস্কারপন্থিগন ক্লিচিয়েনস নামেও পরিচিত ছিলেন। এরা রাজতন্ত্রের সমর্থক ছিলেন না বটে কিন্তু সন্ত্রাসের প্রতি ঘৃনাবশত সীমাবদ্ধ নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্র স্থাপনের পক্ষপাতী ছিলেন এবং রাজার ক্ষমতার উপর কোনো বিধিনিষেধ আরোপ করার বিপক্ষে ছিলেন। সংবিধানপন্থীদের কেউ কেউ ডিউক-অফ-অর্লিয়েন্সকে সিংহাসনে বসানোর পক্ষপাতি ছিলেন। কিন্তু মতানৈক্যের ফলে সংবিধানপন্থী দল দুবর্ল হয়ে পড়ে। নতুন সংবিধানে অভিজাতশ্রেণী জনতা উভয়কেই ক্ষমতা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছিল। অন্যদিকে নতুন ভোটাধিকার প্রাপ্ত সক্রিয় নাগরিকদের সংখ্যা এতই নগন্য ছিল যে তাদের সহযোগিতায় একটি স্থায়ী সমাজব্যবস্থা গড়ে তোলা ডাইরেক্টরির পক্ষে খুবই কঠিন ছিল। একদিকে অভিজাতশ্রেণী জনতার নতুন সরকার বিরোধী মনোভাব অন্যদিকে বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে শান্তির প্রয়োজন ডাইরেক্টরীর সম্মুখে অস্বস্তিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে।

Post a Comment

0 Comments