বসুন্ধরা কবিতা অবলম্বনে রবীন্দ্রনাথের প্রকৃতিপ্রীতির পরিচয়:


বসুন্ধরা কবিতার প্রথম পঙক্তি থেকেই রবীন্দ্রনাথ তার প্রকৃতিপ্রীতির পরিচয় দিয়েছেন। বসুন্ধরাকে মা সম্বােধন করে কবি তার কাছে ফিরে যাওয়ার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেছেন‘আমারে ফিরায়ে লহাে অয়ি বসুন্ধরে, কোলের সন্তানে তব কোলের ভিতরে, বিপুল অঞ্চল তলে। | ‘কবি মাটির উপরে ব্যাপ্ত হয়ে শুয়ে থাকতে চান। সারা পৃথিবীকে বসন্তের আনন্দের মতাে ছড়িয়ে দিতে চান। সমস্ত দিক, সমস্ত সংকীর্ণতার প্রাচীর ভেঙে দিয়ে কবি মর্ত্য প্রকৃতির আনন্দে মাতােয়ারা হয়ে সবাইকে রাঙিয়ে দিতে চান। কবি প্রকৃতির মাঝে মর্ত্য প্রেমে মাতােয়ারা হন। সােনালি ধানের দোলায় তার মন পুলকিত হয়ে ওঠে। যা তিনি জগৎ সভার সঙ্গে ভাগ করে নিতে চান। নতুন পুষ্পের সৌরভে কবি তার জীবনকে পূর্ণ করে, আকাশ ব্যাপ্ত করে সমুদ্রের কল্লোলগীতে। উত্তরের শুভ্র-শীতল পাদদেশে এই বসুন্ধরার নিষ্কলঙ্ক ক্রিয়াকলাপ। বিছিয়ে দিতে চান। | কবি নাগরিক সভ্যতার ঊর্ধ্বে উঠে সমগ্র বিশ্বে নিজেকে প্রসারিত করতে চান। জল-স্থল-অন্তরীক্ষের তুচ্ছাতিতুচ্ছ জিনিসের সৌন্দর্য সুধা আস্বাদন করতে চান। বিশ্ব প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হয়ে কবি জীবনের অমৃত সুধারস পানে উৎসুক। কবি জানেন সমগ্র প্রাণীজগৎ, জড়জগৎ বিভিন্ন স্তরের মাধ্যমে ধীরে ধীরে বিকশিত হয়ে তরঙ্গায়িত হয়েছে। কবি তার আবেগ অনুভূতিকে কাব্যে ঐশ্বর্য দান করেন। এই অনুভূতিই কবির বিশ্বাত্ম বােধের প্রেরণা। | রবীন্দ্রনাথ সৌন্দর্যের প্রতীক এবং রােমান্টিকতার পূজারী। তার সৌন্দর্য তাকে বিশ্বাসবােধের প্রেরণা দেয়। বিশ্ব প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হওয়া, মর্ত্যের। প্রেমভাবনী ও প্রেম প্রকাশ যেন তার আত্মিক প্রশান্তি। আর প্রতি প্রীতির এই প্রশান্তিই প্রকাশিত হয়েছে তার বসুন্ধরা কবিতায় ।


Post a Comment

0 Comments