গ্রন্থাগার বাজেট (Library Budget): গ্রন্থাগারের জন্য সম্ভাব্য ব্যয় এর পদ্ধতি গুলির যেকোনো একটি পদ্ধতি গ্রহণ করা যায়৷সম্ভাব্য ব্যয়ের হিসাব গ্রন্থাগার বাজেটের একটি অংশ। বাজেট হলো আর্থিক বছরের সম্ভাব্য অর্থ প্রাপ্তি ও অর্থব্যয়ের বিধিসম্মত বিবরণ৷ একটি আর্থিক বছরের যথাযথ ব্যয়, ব্যয়ের বিভিন্ন খাত ও প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যয়ের পরিমাণ এবং কার্যকরী ও ফলপ্রসূ ব্যয়ের দিকনির্দেশ হচ্ছে বাজেট৷ গ্রন্থাগারের প্রতিটি কাজকর্ম সার্ভিস এবং উন্নয়নমূলক কাজ কর্ম বাজেটে প্রতিফলিত হয়৷ বাজেটের অর্থ প্রাপ্তি ও ব্যয়ের মধ্যে সমতা রক্ষা করা হয়৷ বাজেট পরবর্তী আর্থিক বছরের অর্থ বরাদ্দ এবং ব্যয় বরাদ্দের দিক নির্দেশক৷ যে আর্থিক বছরের জন্য বাজেট প্রস্তুত করা হয়, সেই আর্থিক বছরের বাজেটে বরাদ্দ অর্থ প্রতিটি ব্যায়ের শীর্ষক এবং ব্যয় সীমা নির্দেশ করে৷ সাধারণভাবে এই ব্যয়সীমা কোনভাবে অতিক্রম করা হয় না৷
সাধারণভাবে প্রতিটি বাজেটে তিন বছরের হিসাব থাকে৷ পূর্ববর্তী আর্থিক বছরের ব্যয়িত অর্থের যথাযথ শীর্ষক ও পরিমাণ, বর্তমান আর্থিক বছরে বিগত পাঁচ অথবা ছয় মাসের ব্যয়িত অর্থের সঠিক পরিমাণ এবং পরবর্তী আর্থিক বছরের সম্ভাব্য অর্থপ্রাপ্তি ও ব্যয়ের হিসাব বাজেটের মধ্যে উল্লেখ করা হয়৷ এর ফলে তিন বৎসরের আয়-ব্যয়ের অর্থ চিত্র বাজেটে প্রতিবিম্বিত হয়৷ সেই কারণে বাজেটে গ্রন্থাগারের সাফল্য অসাফল্য, কর্মধারার গতিপ্রকৃতি, উন্নয়নমূলক কাজ কর্মের পরিপূর্ণ পরিচয় পাওয়া যায়৷
বাজেট কেবল আয়-ব্যয়ের নিষ্ক্রিয় রেখাচিত্র নয়,গ্রন্থাগারের কর্মপ্রেরণা সঞ্চারের সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করে৷ আর্থিক বিধিনিয়ম অনুসারে বাজেট প্রতিটি শীর্ষক এর কারণ ও পদ্ধতিকে বাজেট নিয়ন্ত্রণ করে৷ সামগ্রিক ব্যয়ের পরিমাণ প্রতিটি শীর্ষকে কারণ ও পদ্ধতিকে বাজেট নিয়ন্ত্রণ করে৷ সামগ্রিক ব্যয়ের পরিমাণ ও প্রতিটি খাতে ব্যয়ের পরিমাণ বাজেটে নির্দেশিত থাকে, ফলে বাজেট গ্রন্থাগার কর্মী ও সংশ্লিষ্ট সকলকে ব্যয় সম্পর্কে অবহিত করে৷ সেই ক্ষেত্রে ব্যয়যোগ্য অর্থ শীর্ষ গুলি সমন্বয় করে, ব্যয় সংকোচে সহায়তা করে৷ বিভিন্ন কার্যক্রম ও তর্জনীত ব্যয়ের মূল্যায়ন করে বাজেট। উন্নয়নমূলক সম্ভাব্য ব্যয় এর ফলে গ্রন্থাগার কর্মীদের বাজেট কার্যক্রমে সামগ্রিক ভাবে
প্রভাবিত করে গ্রন্থাগার বাজেট। মূল প্রতিষ্ঠান বা কর্তৃপক্ষের নির্দেশানুসারে গ্রন্থাগারে বাজেট পেশ করা হয়৷ বিবেচিত হলে কর্তৃপক্ষের কাছে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়৷ বাজেট প্রস্তুত করার কয়েকটি পদ্ধতি আছে৷ বর্তমানে আর্থিক প্রশাসনের নতুন নতুন চিন্তা ভাবনা বাজেটের পদ্ধতির মধ্যে প্রতিফলিত হচ্ছে৷ আধুনিক কালে বাজেটের নিম্নলিখিত পদ্ধতি গুলির প্রচলিত:
১) লাইন বাই লাইন বাজেটিং
২) প্রোগ্রাম বাজেটিং
৩) পারফরম্যান্স বাজেটিং
৪) প্ল্যানিং প্রোগ্রামিং বাজেটিং সিস্টেম
৫) জিরো বেসড বাজেটিং
লাইন বাই লাইন বাজেটিং(Line by line Budgeting): এই পদ্ধতি সবচেয়ে বেশি প্রচলিত৷ অধিকাংশ সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানে এই পদ্ধতিতে বাজেট প্রস্তুত করা হয়ে থাকে৷ সম্ভাব্য ব্যয় এর বিবরণার্তক পদ্ধতি বাজেট পদ্ধতিতে অনুসৃত৷ অর্থ প্রাপ্তি ও সম্ভাব্য ব্যয় এর সাধারন শীর্ষক স্থির করা হয়৷ প্রতিটি সাধারণ শীর্ষক এর প্রতিটি খাতে আয় ও ব্যয়ের বিস্তারিত পরিমাণ লিপিবদ্ধ করা হয়৷ যেমন, গ্রন্থ ক্রয় খাতে বিভিন্ন বিষয় নির্দিষ্ট করে প্রতিটি বিষয়ে কত টাকা বই কেনা হবে সেই অর্থ নির্দিষ্ট করা হয়৷ পত্র-পত্রিকার জন্য কত ব্যয় হবে এবং অন্যান্য উপাদান ক্রয়ে কত ব্যয় হবে তা নির্দিষ্ট ভাবে লেখা হয়৷ কর্মী বেতন খাতে কর্মীর পদমর্যাদা, বেতনের স্কেল, মূল বেতন, বিভিন্ন ধরনের ভাতা পৃথক পৃথক করে উল্লেখ করা হয়৷ এই ধরনের বাজেট পদ্ধতিতে পূর্ববর্তী, বর্তমান ও পরবর্তী আর্থিক বছরগুলিতে আয় ও ব্যয়ের পরিমাণ সমান গুরুত্বের সঙ্গে উল্লেখ করা হয়৷ যে আর্থিক বৎসরের জন্য বাজেট প্রস্তুত করা হচ্ছে তা ঠিক পূর্ববর্তী বৎসরের ব্যয়েয়ের হিসাবের উপর কিছুটা বৃদ্ধি দেখিয়ে বাজেট প্রস্তুত করা হয়৷ এই পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য এই যে, এখানে প্রচলিত কার্যক্রম ও ব্যয় অনুমোদনকে সঠিক বলে ধরা হয়৷ তার বিশেষ মূল্যায়ন করা হয় না৷ নতুন অথবা উন্নয়নমূলক কার্যক বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয় না৷ এই বাজেট পদ্ধতির সুবিধা এই যে, বাজেট প্রস্তুত করা সহজ এবং সরল। যে যে কারণে ব্যয় অনুমোদন করা হবে ধরে নেওয়া হয় ৷ এই পদ্ধতির অসুবিধা এইযে এই পদ্ধতিতে কার্যক্রমের যথার্থ মূল্যায়ন করা হয় না। কোন অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কার্যক্রম স্থির করা হয় না এবং উন্নয়নের দিকে গুরুত্ব দেওয়া হয় না৷ পূর্ববর্তী বৎসরে যা হয়েছে পরবর্তী বৎসরে তাই হবে ধরে নেওয়া হয়৷ এই বাজেট স্থিতিস্থাপক গুণসম্পন্ন নয়, কারণ যেখানে ব্যয় অনুমোদন করা হয় সেই খাতের প্রয়োজন হলেও অন্য খাতে ব্যবহার করা যায় না।
প্রোগ্রাম বাজেটিং (Program Budgeting):
এই পদ্ধতির বাজেট বিবরণে যে সকল কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে এবং যে সকল কার্যক্রম ভবিষ্যতে গ্রহণ করা হবে সেই সকল কার্যক্রম সম্পর্কিত সাহায্য বইয়ের হিসাব দেওয়া হয়৷ প্রতিটি শীর্ষক এবং খাতে কত ব্যয় হবে সে বিষয়ে কোন উল্লেখ থাকে না৷কোন একটি বিশেষ সার্ভিস যদি প্রবর্তন করতে হয় তবে সেই সার্ভিস প্রবর্তন এ কোন কোন খাতে কত ব্যয় হবে তা লিপিবদ্ধ থাকে৷ গ্রন্থাগারে এই পদ্ধতিতে বাজেট হলে গ্রন্থাগার কার্যক্রম গুলিকে সাংগঠনিক ও প্রশাসনিক পরিকাঠামোর সঙ্গে যুক্ত করতে হবে৷ যেমন -প্রশাসনিক সার্ভিস, টেকনিক্যাল সার্ভিস, পাঠকদের সার্ভিস, সংরক্ষণ সার্ভিস প্রভৃতি৷ প্রতিটি সার্ভিসের জন্য সম্ভাব্য সাধারণ ব্যয় ও উন্নয়নমূলক ব্যয় নির্ধারণ করতে হবে৷ এই পদ্ধতির বাজেটে গ্রন্থাগারের প্রতিটি বিভাগের কার্যক্রম এর উল্লেখ থাকে৷ ফলে কার্যক্রমের মূল্যায়ন করা এবং প্রতিটি ব্যায়ের যথার্থ প্রমাণ করার সুযোগ থাকে৷ এ অর্থ ব্যয় কার্যকরী এবং ফলপ্রসূ করার জন্য এই পদ্ধতির বাজেট উপযোগী৷
পারফরম্যান্স বাজেটিং (Performance Budgeting):
এই বাজেট পদ্ধতি প্রোগ্রাম বাজেটিং এর অনুরূপ। তবে এই বাজেটে কার্যক্রমের চেয়ে কার্যক্রমের যথাযথ রুপায়ন ও সাফল্যের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়৷ সম্ভাব্য ব্যয় এর মূল্যায়ন করা হয় কর্মপদ্ধতির নৈপুণ্য ও সাফল্যের ভিত্তিতে৷প্রতিটি কার্যক্রম সম্পাদন এর ফলাফলের পরিসংখ্যান গ্রহণ করে ও বিশ্লেষণ করে৷ সাফল্যকে ভিত্তি করে পরবর্তী বৎসরের ব্যয়অনুমোদন করা হয়৷ অলাভজনক ও ব্যয় নির্বাহী প্রতিষ্ঠান হিসেবে গ্রন্থাগার বাজেটে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা অসুবিধাজনক৷ তবে ইনফর সেন্টারগুলিতে যেখানে বাণিজ্যিকভিত্তিতে তথ্য সরবরাহ করা হয় সেখানে এই পদ্ধতি বাজেটের উপযোগী হতে পারে৷
প্ল্যানিং প্রোগ্রামিং বাজেটিং সিস্টেম (Planning Programming Budgeting System, PPBS):
এই বাজেট পদ্ধতিকে প্রোগ্রাম বাজেটিং এর পারফর্মেন্স বাজেটিং এর সময় বলা যেতে পারে৷ এই পদ্ধতিতে সুষ্ঠু পরিকল্পনার ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে৷ প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য সুনির্দিষ্টভাবে নির্দেশ লক্ষ্য অর্জন এবং উদ্দেশ্য সাধনের উপযোগী কার্যক্রমকে পরিকল্পনা করা হয়৷ কার্যক্রম গুলির প্রতিটি স্তরকে অনবরত মূল্যায়ন করে তার ফলাফলের ওপর ব্যয় নির্দিষ্ট করা হয়৷ প্রতিটি ব্যাচের যথার্থ নির্ধারণ করা হয় কার্যক্রমের সাফল্যের ভিত্তিতে৷ এই পদ্ধতি সাধারণভাবে গ্রন্থাগারের উপযোগী নয়৷
জিরো বেসড্ বাজেটিং (Zero Based Budgeting, ZBB):
এই পদ্ধতি প্ল্যানিং প্রোগ্রামিং বাজেটিং সিস্টেম এর অনুরূপ৷ এই পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য হচ্ছে পূর্ববর্তী বছরের আয় ব্যয় আলোচ্য আর্থিক বছরের বাজেটে গ্রহণ করা হয় না৷ প্রতি বছরের বাজেটে আয়-ব্যয়ের হিসাব নতুন করে নির্ধারণ করা হয়৷ যেহেতু পূর্ববর্তী বছরের আয়- ব্যয়ের হিসাব থাকে না, সেজন্য আয় ও ব্যয় শূন্য হিসেবে ধরা হয়৷ প্রতি আর্থিক বছরের মধ্যে সেই বছরের গৃহীত কার্যক্রমের জন্য আয় ও ব্যয়ের হিসাব নির্ধারণ করা হয়৷ এই পদ্ধতি সাধারণভাবে গ্রন্থাগার বাজেটের উপযোগী নয়৷
শেষোক্ত চারটি বাজেট পদ্ধতি নতুন ধ্যান ধারণা প্রসূত৷ সাধারণত বাণিজ্যিক ও বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিদ্যার গবেষণা প্রতিষ্ঠানে এই ধরনের বাজেটে পদ্ধতি আধুনিককালে অনুসৃত হয়৷ গ্রন্থাগার বাজেটে যে কোন পদ্ধতি সুবিবেচনা করে গ্রহণ করা যেতে পারে৷ তবে যেহেতু গ্রন্থাগার একটি মূল প্রতিষ্ঠানের অঙ্গবিশেষ, সে ক্ষেত্রে মূল প্রতিষ্ঠানের বাজেট পদ্ধতি গ্রন্থাগার বাজেটে গ্রহণ করা উচিত।
গ্রন্থাগার বাজেট প্রস্তুত করার সময় আয় ও ব্যয়ের প্রতিটি শীর্ষক, খাত ও কার্যক্রমের উল্লেখ থাকা প্রয়োজন৷ যারা বাজেট অনুমোদন করবেন এবং প্রয়োজনীয় অনুদান দেবেন তাদের কাছে ব্যয় এর কারণগুলি সুস্পষ্ট এবং যুক্তিগ্রাহ্য হওয়া উচিত৷ বাজেটের হিসাব গুলি সহজবোধ্য হওয়া উচিত৷
গ্রন্থাগারে বাজেট প্রস্তুত করার সময় নিম্নলিখিত বিষয়গুলো বিবেচনা করা প্রয়োজন-
১) গ্রন্থাগার সার্ভিস পাঠক ও ব্যবহারকারীদের জন্য৷ যে ধরনের গ্রন্থাগার উপাদান তাদের প্রয়োজন এবং যেসব গ্রন্থাগার সার্ভিস তাদের উপযোগী সেই সব উপাদান ক্রয় অথবা সংগ্রহ করতে হবে এবং উপযুক্ত সার্ভিসের ব্যবস্থা করতে হবে৷ বাজেটে সেই ধরনের সাহায্য ব্যয় অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন৷
২) অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কার্যক্রম স্থির করে বাজেটে সেইভাবে বরাদ্দ প্রস্তাব করতে হবে।
৩) গ্রন্থাগারের কার্যক্রম গুলিকে অতীব প্রয়োজনীয় এবং স্বল্প প্রয়োজনীয়, অপ্রয়োজনীয়' অথবা সাময়িকভাবে প্রয়োজন নাই- এই ভাবে ভাগ করে গুরুত্ব অনুসারে ব্যয় অনুমোদন করা উচিত।
৪) গ্রন্থাগারের ব্যয় উত্তরোত্তর বৃদ্ধি লাভ করে৷ প্রয়োজনীয় আর্থিক
দান পাওয়া সম্ভব হয় না৷ গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকার মূল্য, কর্মী বেতন রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় প্রতি বছরই বৃদ্ধি পাচ্ছে৷ এই অবস্থায় গ্রন্থাগার কোনভাবে অর্থ অর্জন করতে পারে কিনা বিবেচনা করা যেতে পারে৷ বিশেষ করে গ্রন্থপঞ্জি প্রস্তুত করা, গ্রন্থ অথবা পত্রিকার রচনা কপি করে দেওয়া, কারেন্ট আওয়ার্নেস সার্ভিস (CAS) সিলেক্টিভ, ডিক্সেমিনেশন অফ ইনফর্মেশন (SDI) প্রভৃতির সার্ভিস বাণিজ্যিক ভিত্তিতে করে অর্থ উপার্জন করা যায়৷এই প্রস্তাব বিবেচনা করলে বাজেটে তার অন্তর্ভুক্তি করতে হবে৷
হিসাব রক্ষক ও অডিট (Accounting and Auditing):
আর্থিক প্রশাসনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বি হচ্ছে হিসাবরক্ষণ৷ একটি নির্দিষ্ট আর্থিক বছরের বাজেটে অনুদান প্রাপ্ত অর্থ এবং নির্দিষ্ট ব্যয় বরাদ্দ লিপিবদ্ধ থাকে৷ প্রতিটি শীর্ষকে খাতে সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে ব্যয়যোগ্য অর্থের সংস্থান থাকে৷ যখনই এই নির্ধারিত বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয় করা হয় তখন সেই ব্যয়ের হিসাব থাকা একান্ত প্রয়োজন৷ এর ফলে প্রতিটি শীর্ষক ও খাতে মোট যে ব্যয় বরাদ্দ হয়েছে তার কি পরিমান ব্যয় হলো এবং কত বাকি থাকলো তার হিসাব রক্ষা করা একান্ত প্রয়োজন৷ সাধারণভাবে এক খাত এর অর্থ অন্য খাতে ব্যয় করা যায় না৷ ব্যয়ের কতকগুলি বিধি নিয়ম আছে৷ প্রতিটি ব্যয়ের জন টেন্ডার সংগ্রহ করা জরুরি। সাধারণত নিম্নতম মূল্যের উল্লেখ কারী সরবরাহকারীকে জিনিসপত্র সরবরাহ করতে বলা হয়৷ এক্ষেত্রে টেন্ডার সম্পর্কিত সম্পূর্ণ তথ্য প্রাপ্ত বিল ও স্টক রেজিস্টারে জমার রেকর্ড ইত্যাদি করা প্রয়োজন৷ এই উদ্দেশ্য হলো অনুমোদিত অর্থ যথাযথভাবে আর্থিক বিধি নিয়ম অনুযায়ী ব্যয় হয়েছে কিনা লক্ষ্য রাখা, যথাযোগ্য ব্যয়িত হয়েছে কিনা, বরাদ্দকৃত অর্থের পরিত্রাণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ কিনা, এই প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো জানা যায়৷ বাজেটে বরাদ্দ অর্থ যথাযথভাবে ব্যয়ীত হয়েছে কিনা তা লক্ষ্য রাখায় হিসাবরক্ষণ এর উদ্দেশ্য৷ হিসাবরক্ষণ এর পদ্ধতি সভাবতই মূল প্রতিষ্ঠান বা কর্তৃপক্ষের হিসাবরক্ষণ পদ্ধতির অনুসারী হতে হবে।
যথাযথ হিসাবরক্ষণ এর জন্য
(১) ক্যাশ বুক
(২) লেজার
(৩) বিল রেজিস্টার
(৪) অ্যালোকেশন রেজিস্টার
(৫) মাসিক ব্যয় এর বিবরণ
(৬) বেতন রেজিস্টার
(৭) নগদ ক্যাশ রেজিস্টার
(৮) স্টক রেজিস্টার ইত্যাদি
আর্থিক তথ্য সমন্বিত রেকর্ড করা একান্ত প্রয়োজন৷ প্রত্যেক আর্থিক বছরের জন্য এই রেকর্ড রক্ষা করা হয়৷ হিসাবরক্ষণ ব্যয়কে নিয়ন্ত্রিত ও কার্যকরী করে৷ আর্থিক প্রশাসনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অডিট করার ব্যবস্থা করা৷ আয় ব্যয়ের যে হিসাব রক্ষণ করা হয় উপযুক্ত অডিটর কে দিয়ে তা পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে পরীক্ষা ও বিচার করা প্রয়োজন৷ এর ফলে অনিয়মিত ব্যয়, অনুমোদিত ব্যয়,অতিরিক্ত ও অপ্রয়োজনীয় ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব৷ অডিট রিপোর্টে গ্রন্থাগারের আর্থিক শৃংখলার যথাযথ প্রতিচ্ছবি
গ্রন্থাগার নিয়মাবলীর কার্যকারিতা বা গুরুত্ব -
যেকোনো গ্রন্থাগারের সুনির্দিষ্ট নীতি বা নিয়মাবলী থাকা একান্ত প্রয়োজন৷ কারণ নিয়মাবলী ছাড়া কোন গ্রন্থাগারই তার লক্ষ্যে পৌঁছতে পারেনা৷অবশ্য উল্লেখ্য যে এই নিয়মাবলী সহজ-সরল ও ন্যায় সঙ্গত হওয়াটা জরুরি কারণ সাধারণ পাঠক থেকে শুরু করে বিশেষজ্ঞ পর্যন্ত নিয়মাবলীর সারমর্ম বোধগম্য হলে গ্রন্থাগারের পরিপূর্ণতা ঘটে। সুতরাং এখন আমাদের দেখতে হবে যে প্রণীত নিয়মাবলী কিভাবে কার্যকর করা যায় তা আমাদের আলোচ্য বিষয়বস্তু৷
কার্যকারিতা: গ্রন্থাগার এর নিয়মাবলী পরিবারকে সার্বিকভাবে গ্রন্থাগার ব্যবহার করতে ও সদস্যদের সার্বিক পথে পরিচালিত করতে সাহায্য করে৷ এমনকি সদস্যদের লাইব্রেরীতে তাদের অধিকার সম্বন্ধে সুনিশ্চিত করতেও সাহায্য করে থাকে৷ গ্রন্থাগারের কোন সম্পদ চুরির অপব্যবহার ও নানান ক্ষতির বিরুদ্ধে একটি রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করে থাকে৷ প্রত্যেক সদস্যকে ব্যবহার সম্পর্কিত নির্দেশ দিয়ে থাকে অর্থাৎ বই নিলে কত দিনের মধ্যে ফেরত দেওয়া, গ্রন্থের পাতা বা কোন কিছু নষ্ট হলে ক্ষতিপূরণ দেওয়া, গ্রন্থে কোন রকম দাম না দেওয়া ইত্যাদি নির্দেশ দিয়ে থাকে৷এছাড়া প্রত্যেক সদস্যকে তাদের যোগ্যতা ও চাহিদা অনুযায়ী গ্রন্থাগার ব্যবহারের সুযোগ করে দিয়ে থাকে। কেবলমাত্র সদস্যদের ক্ষেত্রে এই নিয়মাবলী প্রযোজ্য নয়৷ এর সাথে গ্রন্থাগার কর্মীরাও ওতপ্রোতভাবে জড়িত৷ গ্রন্থাগার কর্মীদের অসংযত, বৈষম্যমূলক আপত্তিকর আচরণের জন্য এই বিধিবিধান খুবই কার্যকর৷
মূল্যায়ন: উপরের আলোচনা থেকে একথা স্পষ্ট যে, এই নিয়মাবলী গ্রন্থাগারকে নিয়ে যেতে ও তার উদ্দেশ্য সাধন করতে অপরিহার্য।
0 Comments