ফ্যাক্টরী প্রথা? অথবা যান্ত্রিক কারখানা ব্যবস্থা?

 

  • ফ্যাক্টরী প্রথা? অথবা যান্ত্রিক কারখানা ব্যবস্থা?

ইউরোপীয় অর্থনীতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল ধনতন্ত্রবাদ। ধনতন্ত্র বা পুঁজিতন্ত্রের মূল উৎস ছিল কৃষি বাণিজ্য। সমগ্র অষ্টাদশ শতক ধরে একধরণের শিল্পভিত্তিক পুঁজিবাদের প্রসার ঘটে। নবজাত বণিকশ্রেণী আগাম দাদন প্রথায় কাঁচামাল টাকার বিনিময়ে তাদের নিকট থেকে বস্ত্র কিনে বিদেশে চালান করত। অষ্টাদশ শতকের শেষের দিকে উনবিংশ শতকের প্রারম্ভে ইংল্যান্ডে যন্ত্র ভিত্তিক শিল্পের বিকাশ ঘটলে পরিস্থিতির দ্রুত পরিবর্তন ঘটে এবং শিল্প ভিত্তিক পুজিবাদের দ্রুত প্রসার হয়। নতুন যন্ত্রাদির অধিকাংশ অত্যন্ত ব্যয়সাপেক্ষ হওয়ায় সেগুলি ক্রয় করা কৃষক বা কারিগরদের পক্ষে সম্ভব ছিলনা এবং যন্ত্রগুলির পরিচালন পদ্ধতি অত্যন্ত জটিল হওয়ায় কৃষক কারিগরদের পক্ষে নিজ নিজ আবাসে সেগুলিকে স্থাপন করা সম্ভব ছিল না। সূতরাং সেই যন্ত্রগুলি ক্রয়ের জন্য বিত্তশালীরা নিজেরাই কিংবা বিত্তশালীদের সমর্থনপুষ্ট হয়ে অন্যেরা উদ্যোগী হয়। বিশেষ ধরণের গৃহে নতুন যন্ত্রগুলিকে স্থাপন করা হয় এবং প্রযুক্তিবিদদের হাতে সেগুলির পরিচালনার ভার দেওয়া হয় এইভাবে ফ্যাক্টরী বা কারখানার ভিত্তি রচিত হয় এবং যন্ত্রগুলিকে চালানোর জন্য দক্ষ শ্রমিক নিয়োগ করা শুরু হয়।

যন্ত্রপাতির উদ্ভাবনের সঙ্গে সঙ্গে ফ্যাক্টরী প্রথারও উন্মেষ ঘটে। এটি অনস্বীকার্য যে বৃহদাকার যন্ত্রভিত্তিক শিল্পের বিকাশের পূর্বে ছোটোখাটো কারখানা বা মিল ছিল কিন্তু অষ্টাদশ শতকের শেষের দিকে নানা ধরণের যন্ত্রপাতির আবির্ভাব ঘটলে শিল্পোৎপাদনের কেন্দ্র হিসাবে কারখানা প্রথা বা ফ্যাক্টরী প্রথার ব্যাপক প্রচলন শুরু হয়। অবশ্য পুঁজিপতিদের বৃহদাকার কারখানার পাশাপাশি যন্ত্রচালিত কুটির শিল্পগুলিও টিকে থাকে এবং বর্তমানকালেও ইংল্যান্ড অন্যত্র এই কুটির শিল্পগুলি টিকে আছে। প্রথমদিকে যন্ত্র-মালিকানা ভিত্তিক পুঁজিপতিরা ছিল দুই ধরণের। কেউ কেউ উচ্চ মধ্যবিত্ত শ্রেণী বা ভূমিজাত অভিজাত শ্রেণীভুক্ত। কিছুসংখ্যক যন্ত্র-মালিকানা ব্যবসা বাণিজ্যের মাধ্যমে প্রচুর পুঁজির মালিক হয়ে উঠেছিল। আবার কেউ কেউ ছিল ভিত্তিক পুঁজিপতিরা ছিল নিম্নশ্রেণীভুক্ত যাদের কোনো সামাজিক কৌলিন্য ছিল না। এই ধরণের মানুষ ছিলেন ক্ষৌরকার শ্রেণীভুক্ত আর্করাইট, অপর একজন ছিলেন ডোমসওয়াট। ক্রমে ক্রমে এরা নিজেরাই পুঁজিপতি হয়ে ওঠে। এরা নিষ্ক্রিয় পুঁজিপতি ছিল না, এরা ছিল একাধারে সক্রিয় উদ্যোক্তা, ম্যানেজার, পরিদর্শক বণিক। উদ্যোক্তা হিসাবে এরা ঋণ সংগ্রহ করত, কারখানা তৈরি করত এবং যন্ত্রপাতি বসাত। ম্যানেজার হিসাবে এরা শ্রমিক সংগ্রহ করত, ঋণ পরিশোধের জন্য কারবারের লাভ্যাংশ আদায় করত এবং নিজেদের জন্য সম্পদ সঞ্চয় করত। সময়ের গতির সঙ্গে সঙ্গে ফ্যাক্টরী প্রথা ক্রমেই জটিল হয়ে ওঠে। রেলপথের ন্যায় বৃহদাকার শিল্পের বিকাশ ঘটতে থাকায় ব্যক্তিগত পুঁজিতন্ত্রের ভূমিকা গৌণ হয়ে পড়ে। বৃহদাকার শিল্পের মালিকানা ক্রমেই ব্যক্তিবিশেষের হাত থেকে জয়েন্ট ষ্টক কোম্পানি বা শিল্প সংস্থার হাতে চলে যায়।

Post a Comment

0 Comments