সন্ত্রাসের রাজত্ব। অথবা সন্ত্রসের শাসনের তাৎপর্য?

 

  • সন্ত্রাসের রাজত্ব। অথবা সন্ত্রসের শাসনের তাৎপর্য?

                                     জিরন্ডিস্টদের পতন ঘটলে কনভেনশনে নরমপন্থী রাজনীতিবিদদের প্রভাব ক্ষুণ্ণ হয় এবং তার স্থলে জেকোবিনদের সন্ত্রাশবাদী শাসন শুরু হয়। জেকোবিনরা ছিল প্রত্যক্ষ গনতন্ত্র প্রজাতন্ত্র প্রতি-বিপ্লবের বিরুদ্ধে শক্তিশালী জাতীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রবক্তা। এদিকে প্যারিসের কমিউনের একাধিপত্য অত্যাচারে ডিপার্টমেন্টে তীব্র বিক্ষোভের সঞ্চার হয়। জিরন্ডিস্ট দলের পতনে লায়নস, মারসাই, বরদোঁ প্রভৃতি শহরগুলিতে বিপ্লবের বিরুদ্ধে সশস্ত্র আন্দোলন শুরু হয়। এই রাজনৈতিক গৃহবিবাদের সঙ্গে দেখা দেয় ধর্মীয় গৃহবিবাদ। এইভাবে ধর্মের নামে রাজতন্ত্রের সমর্থণে বিপ্লবের বিরুদ্ধে শুরু হয় প্রতি-বিপ্লব। এই অবস্থায় জেকোবিন দলের নায়কগন উপলব্ধি করেন যে সর্বাগ্রে জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন এবং সর্বত্র ভীতির সঞ্চার করেই তা সম্ভব। এই ধারণার বশবর্তী জেকোবিন দলসন্ত্রাসের রাজত্ব' প্রতিষ্ঠা করে। রোবসপীয়র ছিলেন এর প্রধান স্থপতি। প্রথমেই সংবিধান রদ করা হয় এবং দু'টি ক্ষমতা সম্পন্ন কমিটি গঠন করে তাঁদের হাতে সন্ত্রাসের রাজত্ব পরিচালনা করার দায়িত্ব দেওয়া হয়। এই কমিটিদুটিজননিরাপত্তা কমিটিসাধারণ নিরাপত্তা কমিটি' ১৭৯৩ খ্রীঃ-১৭৯৪ খ্রীঃ পর্যন্ত জননিরাপত্তা কমিটি রাষ্ট্রের সকল ক্ষমতা হস্তগত করে সন্ত্রাসবাদী শাসন চালিয়ে যেতে থাকে। কনভেনশনের অস্তিত্ব রইল বটে, জননিরাপত্তা কমিটি কর্তৃক সকল বিধিব্যবস্থা কনভেনশন বিনা দ্বীধায় অনুমোদন করে যেতে থাকে। এক কথায় জননিরাপত্তা কমিটি আজ্ঞাবাহী যন্ত্রে পরিণত হয়। প্যারিসে সন্ত্রাসবাদীদের সংখ্যা ছিল মাত্র তিন হাজার। জননিরাপত্তা কমিটি মাত্র এগারো জন সদস্য নিয়ে গঠিত হয়। তবে দাঁতন এই সদস্য ছিলেন না এবং নতুন কমিটি নির্বাচিত হলে দাঁতনের নীতি পরিত্যক্ত হয়। সন্ত্রাসবাদী শাসনের সুযোগে রোবসপীয়র এক আদর্শ প্রজাতন্ত্র স্থাপনে ব্রতী হন। যদিও রোবসপীয়র রাষ্ট্রীয় কোনো দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত ছিলেন না, তথাপি ব্যক্তিগত প্রতিভার কারণে তার সহযোগিতার মূল্য কেউ অস্বীকার করে না। সন্ত্রাসবাদীদের মধ্যে অত্যন্ত নৃশংস ছিলেন ভেয়ারনেস হারবয়। হত্যাকান্ড অন্যান্য সন্ত্রাশমূলক কার্যকলাপ চালিয়ে এক বিভীষিকার সঞ্চার করাই তাদের একমাত্র লক্ষ্য ছিল।



Post a Comment

0 Comments