জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডারের সংস্কারগুলি আলোচনা করুন। তাঁকে মুক্তিদাতা জার বলা কতখানি সঙ্গত আলোচনা করুন। আলেকজান্ডারের একটি মূল্যায়ন করুন। অথবা দ্বিতীয় আলেকজান্ডারকে অথবা জার দ্বিতীয় কি প্রকৃত অর্থে মুক্তিদাতা জার বলা যায় ?

 

জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডারের সংস্কারগুলি আলোচনা করুন। তাঁকে মুক্তিদাতা জার বলা কতখানি সঙ্গত আলোচনা করুন। আলেকজান্ডারের একটি মূল্যায়ন করুন। অথবা দ্বিতীয় আলেকজান্ডারকে অথবা জার দ্বিতীয় কি প্রকৃত অর্থে মুক্তিদাতা জার বলা যায় ?

                 রাশিয়ার জারতন্ত্রের ইতিহাসে জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডারের রাজত্বকালে (১৮৫৫-৮১) একটি স্বাতন্ত্রের দাবী করতে পারে। কারণ জারতন্ত্রের কাঠোর স্বৈরতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার ইতিহাসে জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডারই প্রথম এক বহুমুখী সংস্কার প্রবর্তন করে রাশিয়ার আধুনিকীকরণের প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন। সুতরাং সেই দিক থেকে তিনি তাঁর পূর্বসুরী দের থেকে একটা আলাদা কৃতিত্ব দাবী করতে পারেন। আধুনিক রাশিয়ার ইতিহাসে তাই জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডারের রাজত্বকালকে একটি যুগসন্ধিক্ষণও বলা যায়। জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডার প্রবর্তিত সংস্কার সমূহের মধ্যে প্রধান উল্লেখযোগ্য সংস্কার ছিল ভূমিদাস প্রথার অবসান। আসলে তাঁর সব সংস্কারের প্রধান চাবিকাঠিই ছিল এই ভূমিদাস প্রথার অবসান। এই ভূমিদাস প্রথা ছিল রাশিয়ার সমাজ জীবনের ব্যধি স্বরূপ এবং এই প্রথার একটি ত্রুটি সম্পর্কে রাশিয়ার সমাজ বিরোধী অর্থনীতিবিদরা সরকারকে বহুদিনধরে সতর্ক করে দিয়েছিলেন। দ্বিতীয় আলেকজান্ডার স্বাধীন মতামত প্রকাশের পরিমন্ডল সৃষ্টি করলে রূশ জনমত ভূমিদাস প্রথাকে সম্পূর্ণ ভাবে বিলোপ সাধন করার পক্ষে মত প্রকাশ করে। কিন্তু এই প্রথার সম্পূর্ণ ভাবে অবসানের প্রধান সমস্যা ছিল, জেন্টি সম্প্রদায় ক্ষতি সাধন না করে এবং রাশিয়ার কৃষি-অর্থনীতির ক্ষতিসাদন না করে কীভাবে তা বাস্তবায়ন করা যাবে। অবশ্য বিগত কয়েক বছর ভূমিদাস সম্পর্কিত পরিবর্তিত মানসিকতা এবং এর অর্থনৈতিক প্রয়োজনের পরিবর্তিত মূল্যায়ণ এই প্রথার অবসানের পক্ষে সহায়ক হয়েছিল। তাছাড়া ভূমিদাসদের দ্বারা আগেকার মত রাশিয়ার অর্থনীতি প্রয়োজনও সিদ্ধ হচ্ছিল না। মার্কসবাদী ঐতিহাসিকেরা বলেছেন যে রাশিয়ার উদীয়মান বুর্জোয়া শ্রেণী ভূমির মালিকরা বুঝতে পারে যে ভূমিদাস মজুর অপেক্ষা নগদ বেতনের স্বাধীন মজুরদের দ্বারা জমি কারখানায় অনেকবেশি উৎপাদন করা যায়। এমনকী রক্ষণশীল ভূ-স্বামীরাও বুঝতে পেরেছিল যে শ্রমিক-মালিক সম্পর্কের ব্যবস্থা হিসেবে ভূমিদাসত্ব আর লাভজনক ছিল না। সামন্ত প্রভুদের অত্যাচার প্রসূত রাশিয়ার গ্রামাঞ্চলে ভূমিদাস কৃষকদের ক্রমাগত বিদ্রোহ রাষ্ট্রের সামাজিক রাজনৈতিক শান্তি বিঘ্নিত করে এবং কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হয়। ভূমিদাস প্রথা উচ্ছেদের জন্য আলেকজান্ডার রুশ অভিজাত সম্প্রদায়কে স্বতঃ প্রবৃত্ত হওয়ার আবেদন জানান। কিন্তু এতে কাজ না হলে ১৮৫৭ খ্রীঃ পরীক্ষামূলক ভাবে ভূমিদাসদের মুক্তির ঘোষণা করেন। কিন্তু এই ঘোষণার কিছু কাল পরে ১৮৬১ খ্রীঃ ভূমিদাসদের মুক্তির ঘোষণা আইন হিসেবে জারি করা হয়। এরফলে ভূমিদাসেরা প্রভুত্ব থেকে মুক্ত নাগরিকের অধীকার লাভ করে। মুক্তিপ্রাপ্ত ভূমিদাসদের হাতে ঋণ তুলে দেওয়া হয় এবং তাদের বার্ষিক কিস্তিতে ক্ষতিপূরণ দানের ব্যবস্থাও করা হয়। একথা বলা হয় যে আলেকজান্ডারের এই ভূমিদাস প্রথা বিলোপ আইনের নানাবিধ ত্রুটি ছিল এবং এই সকল ত্রুটির জন্য ভূমিদাস প্রথার বিলোপের কাঙ্খিত ফল পাওয়া যায়নি। তথাপি একথা অবশ্যই স্বীকার করে নিতে হয় যে ভূমিদাস প্রথা বিলোপ করে আলেকজান্ডার রাশিয়ার দীর্ঘদিনের এক উৎকট আর্থসামাজিক ব্যাধির নির্মূল করেন। তাই এই মহান কাজের জন্য প্রজাদের কাছে তিনিমুক্তিদাতা জার শিরোপা লাভ করেন।

Post a Comment

0 Comments