মিউনিখ চুক্তি (১৯৩৮) এবং ব্রিটেন ও ফ্রান্সের তোষণ নীতি?

 

  • মিউনিখ চুক্তি (১৯৩৮) এবং ব্রিটেন ফ্রান্সের তোষণ নীতি?

নাৎসি জার্মানির ওপর নির্ভরশীলতার এই প্রবণতা মিত্রপক্ষীয় সেই সমস্ত কূটনীতিবিদদের আশঙ্কাকে সঠিক বলে প্রমাণিত করে যারা অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরির অখণ্ডতা বজায় রাখার পক্ষে মত ব্যক্ত করেছিলেন। এঁদের বক্তব্য ছিল যে সাম্রাজ্য ভেঙে যদি টুকরো টুকরো হয়ে যায় তাহলে যেকোন সম্প্রসারণশীল শক্তি এই সমগ্র অঞ্চলকে তার অধীনে নিয়ে আসবে। ১৯২০ খ্রিস্টাব্দের পর থেকে নব্যসৃষ্ট রাষ্ট্রগুলি দুটি নির্দিষ্ট দলে বিভক্ত হয়ে যায়। অস্ট্রিয়া হাঙ্গেরিকে নিয়ে একটি পক্ষ গড়ে উঠেছিল এবং এরাই প্রথম জার্মানির দিকে বিশেষভাবে ঝুঁকে পড়েছিল। আঁসলুশ এবং হাঙ্গেরির অ্যান্টি-কমিনটার্ন প্যাক্টে যোগদান বিষয়টিকে আরও বেশি জটিল করে তোলে। দ্বিতীয় গোষ্টী বা দল পোল্যান্ড, চেকোশ্লোভাকিয়া, যুগোশ্লাভিয়া এবং রোমানিয়াকে নিয়ে গঠিত হয়। এই দেশগুলি নিজেদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করে এবং বাহ্যিক আক্রমণের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা সুরক্ষিত করার জন্য ফ্রান্সের ওপর এরা নির্ভর করে। কিন্তু ১৯৩০ এর দশকে মধ্য পূর্ব ইওরোপে ফরাসিদের আধিপত্য নাটকীয়ভাবে হ্রাস পায়। ফলস্বরুপ 'লিটল আঁতাত' কার্যতঃ অর্থহীন হয়ে পড়ে। রুমানিয়া এবং পোল্যান্ড জার্মানির সঙ্গে বোঝাপড়া গড়েতোলা, একমাত্র চেকোশ্লোভাকিয়া জার্মানির বিরুদ্ধে তার স্বাতন্ত্রকে বজায় রাখতে সচেষ্ট হয়। কিন্তু সুলতান জার্মানদের সমস্যার অজুহাতে হিটলার চেকোশ্লোভাকিয়া হস্তক্ষেপের সিদ্ধান্ত নিলে মিউনিখ চুক্তি অনুষ্ঠিত হয় ১০৩৮ এ। এই চুক্তির মাধ্যমে চেকোশ্লোভাকিয়ার ন্যায় স্বাধীন নিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের স্বাধীনতা পুরোপুরি বিসর্জন দেওয়া হয়। মিউনিখ চুক্তি স্বাক্ষরের পরপরই ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী অন্যান্যরা নিজেদের কূটনৈতিক সাফল্য বিষয়ে যখন চরম আত্মতুষ্টিতে ভুগছিলেন সেই সময় চার্চিল মিউনিখ চুক্তির সমালোচনা করে বলেন যে এই চুক্তি ছিল ‘Total and unmitigate Surrender' | মিউনিখ চুক্তির মধ্য দিয়ে নাৎসি জার্মানির আগ্রাসী অভিপ্রায় সম্পর্কে আর কোন সংশয় ছিল না। কাজেই মিউনিখের পরবর্তী পর্যায়ে ব্রিটেন ফ্রান্স হিটলারকে প্রতিরোধের সিদ্ধান্ত নেয়। হিটলার এই বিষয়টি উপলব্ধি করে পোল্যান্ড আক্রমণের আগে সোভিয়েত রাশিয়ার নিরপেক্ষতা লাভের জন্য সচেষ্ট হন। এই সময়ে স্ট্যালিনও কতকগুলি কারণে জার্মানির প্রস্তাব গ্রহণে আগ্রহী হন। ফলে ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে নাৎসি সোভিয়েত অনাক্রমণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এর পরই হিটলার পোল্যান্ড আক্রমণ করলে ব্রিটেন ফ্রান্স জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা হয়।

Post a Comment

0 Comments