ক্রিমিয়ার যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল সংক্ষেপে লিখুন?অথবা কোন সন্ধির দ্বারা ক্রিমিয়ার যুদ্ধের অবসান হয়েছিল? সন্ধির শর্তগুলি কী ছিল ? এই সন্ধির ব্যর্থতার কারণ কী?

 

  • ক্রিমিয়ার যুদ্ধের কারণ ফলাফল সংক্ষেপে লিখুন?
  • অথবা কোন সন্ধির দ্বারা ক্রিমিয়ার যুদ্ধের অবসান হয়েছিল? সন্ধির শর্তগুলি কী ছিল ? এই সন্ধির ব্যর্থতার কারণ কী?

                    ক্রিমিয়ার যুদ্ধ পূর্বাঞ্চল সমস্যার এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এক অতি তুচ্ছ কারণকে উপলক্ষ্য করে এই যুদ্ধের সূত্রপাত। তুরষ্ক সাম্রাজ্যর অন্তর্ভুক্ত খ্রীষ্টের স্মৃতি বিজড়িত পবিত্র জেরুজালেমের গ্রোটোর গির্জার কর্তৃত্ব নিয়ে ল্যাটিন বা রোমান গ্রীক ধর্মযাজকদের মধ্যে বিরোধ ছিল। ফ্রান্স ল্যাটিন ধর্মযাজকদের এবং রাশিয়া গ্রীক ধর্মজাযকদের সমর্থন করত। ১৭৪০ খ্রী: তুরস্কের সঙ্গে ক্যাপিচুলেসন সন্ধি দ্বারা ফ্রান্স জেরুজালেমের পবিত্র স্থান ল্যাটিন বা রোমান ধর্মযাজকদের উপর কর্তৃত্বাধিকার পায়। ফরাসী বিপ্লব চলাকালে ফ্রান্স ব্যাপারে চিন্তার অবকাশ পায়নি। রাশিয়াও ব্যাপারে নীরব ছিল। বিপ্লব অবসানে ১৮৫২ খ্রীঃ ফরাসি সম্রাট তৃতীয় নেপোলিয়ান জেরুজালেম সম্পর্কে ফ্রান্সের পুরোনো অধিকার দাবি করলে তুরষ্ক তা মেনে নেয় এই অবস্থায় ১৮৫৩ খ্রীঃ রাশিয়াও তুরষ্কের কাছে গ্রীক ধর্মপ্রতিষ্ঠানগুলির ওপর রুশ অধিকার স্বীকার করলেও গ্রীক ধর্মাধিষ্ঠানভুক্ত প্রজাদের ওপর রূশ অধিকার মানতে রাজি ছিল না। কারন এরফলে কয়েক লক্ষ প্রজা রুশ শাসনাধীন চলে যেত। রাশিয়ার দাবি অস্বীকৃত হলে রাশিয়া কোনোরকম যুদ্ধ ঘোষণা না করেই দানিয়ুব উপত্যকায় অবস্থিত তুর্কি সাম্রাজ্যের দুটি প্রদেশ মোলডাভিয়া ওয়ালেশিয়া দখল করে নেয়। এরফলে তুর্কি সুলতান রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, পিডমন্ট সার্ডিনিয়া তুরষ্কের পক্ষে যুদ্ধে যোগদান করলে আনুষ্ঠানিক ভাবে ক্রিমিয়ার যুদ্ধ শুরু হয় (মার্চ, ১৮৫৪ খ্রীঃ) এই ধর্মীয় কারণই হল যুদ্ধের প্রত্যক্ষ বা তাৎক্ষণিক কারণ।

আসলে ধর্মীয় কারণ হল যুদ্ধের অজুহাত মাত্র। যুদ্ধের প্রকৃত কারণ হল তুরষ্ক সাম্রাজ্যের অভ্যন্তরে রুশ সম্প্রসারণ এবং ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলির স্বার্থ-প্রণোদিত আচরণ। রাশিয়ার লক্ষ্য ছিল কৃষ্ণসাগরের ওপর দিয়ে ভূমধ্যসাগরে পৌছানো। ইতিপূর্বে রুশজার প্রথম নিকোলাস তুরষ্ককেইউরোপের রুগ্ন ব্যক্তি আখ্যা দিয়ে ১৮৪৫ খ্রীঃ এবং পুনরায় ১৮৫৩ খ্রীঃ ইংল্যান্ডের কাছে তুরষ্ক বিভাজনের প্রস্তাব পাঠান। বলা হয় যে, দুর্বল তুরষ্কের নিজেদের মধ্যে ভাগ বাটোয়ারা করে নিলেই পূর্বাঞ্চল সমস্যার সমাধান হবে এবং এতে তারা নিজেরাও লাভবান হবে না। যদিও ইংল্যান্ড পরোক্ষভাবে আপত্তি জানায় ব্যাপারে ইউরোপীয় শক্তিবর্গ সকলেই নিজ নিজ স্বার্থ দ্বারা পরিচালিত হয়েছিল

প্রথমত, ইংল্যান্ড তুরষ্কের অখন্ডতা রক্ষার পক্ষপাতি ছিল। কারণ ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে রুশ অগ্রগতি ঘটলে ওই অঞ্চলে ব্রিটিশ বাণিজ্যিক স্বার্থ ভারতীয় সাম্রাজ্যের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্খা ছিল।

দ্বিতীয়ত, ফরাসি সম্রাট তৃতীয় নেপোলিয়ন তাঁর দ্বৈতশাসন জনপ্রিয় করার উদ্দেশ্যে একটি জমকালো পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করতে চাইছিলেন। রাশিয়ার বিরূদ্ধে যুদ্ধের সুযোগ তাঁর কাছে আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। তাই ফ্রান্সের গৌরব বৃদ্ধি এবং প্রথম নেপোলিয়ণের মস্কো অভিযানের ব্যার্থতার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য তিনি রুশ-বিরোধী নীতি গ্রহণ করেন। জার নিকোলাস তাঁকে প্রায়ই ব্যাঙ্গ করে বলতেন যে, তিনি বংশাণুক্রমিক অধিকারের ভিত্তিতে সিংহাসনে বসেননি। রাশিয়াকে পরাজিত করে তিনি এই ব্যক্তিগত আক্রমণের প্রতিশোধ নিতে উদ্দ্যোগী হন।

তৃতীয়ত, অষ্ট্রিয়া নিজের বাণিজ্যিক স্বার্থ সাম্রাজ্যের নিরাপত্তার কারণে বলকান অঞ্চলে রুশ সম্প্রসারণের বিরোধী ছিল।

চতুর্থত, পিডমন্ট সার্ডিনিয়ার প্রধানমন্ত্রী ক্যাভুর আশা করেছিলেন যে, এই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করলে ইতালির ঐক্যের ব্যাপারে তিনি ইংল্যান্ডে ফ্রান্সের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় সাহায্য পাবেন। আসলে বৃহৎ রাষ্ট্রবর্গের বিবিধমুখী স্বার্থই ক্রিমিয়ার যুদ্ধের রাশিয়া কর্তৃক মোলডাডিয়া ওয়ালেশিয়া অধিকৃত হলে শঙ্কিত ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, অষ্ট্রিয়া প্রাশিয়া ভিয়েনাতে মিলিত হয় এবং সম্মিলিতভাবে তুরষ্ক রাশিয়ার কাছে একটি প্রস্তাব পাঠায়। এই প্রস্তাব ভিয়েনা নোট' নামে খ্যাত। এই প্রস্তাবে রাশিয়ার কাছে মোলডাডিয়া ওয়ালেশিয়া থেকে সৈন্য প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়। রাশিয়া এই দাবি অগ্রাহ্য করলে, ইংল্যান্ড ফ্রান্স রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে এবং ক্রিমিয়ার যুদ্ধ শুরু হয় (মার্চ, ১৮৫৪ খ্রি)



Post a Comment

0 Comments