সাংস্কৃতিক সাম্রাজ্যবাদ?

 

  • সাংস্কৃতিক সাম্রাজ্যবাদ?

নব্য ঔপনিবেশিক নিয়ন্ত্রণের মূল প্রকৃতি হলো বিভিন্ন মাত্রায় অর্থনৈতিক শোষণ এবং নিয়ন্ত্রণ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর বিশ্বে সরাসরি নিয়ন্ত্রণ সম্ভবপর ছিলো না বলেই এই পরোক্ষ নিয়ন্ত্রণের উদ্ভব হয়। তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলিতেও নব্য উপনিবেশবাদের প্রকৃত ধারা গোপন রাখা প্রয়োজন ছিল এবং এই প্রয়োজন থেকেই শেষ পর্যন্ত জন্ম নেয় সাংস্কৃতিক নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি। নব্য উপনিবেশবাদের প্রকৃত চেহারা গোপন রাখার প্রধান দায়িত্ব নেয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং প্রথম বিশ্বের অন্যান্য দেশ নিয়ন্ত্রিত সংবাদপত্র এবং বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম। বিশ্বের বৃহত্তম সংবাদমাধ্যমগুলি, যাদের প্রচার বিশ্বস্ত এবং সঠিক হিসেব গ্রহণযোগ্য, যেমনব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং করপোরেশন, ভয়েস অব আমেরিকা প্রভৃতি। ঠান্ডাযুদ্ধ চলাকালীন এই সংবাদমাধ্যম এবং সংবাদপত্রগুলি পূর্ব ইউরোপে সোভিয়েত সাম্রাজ্যবাদের সমালোচনায় মুখর ছিল। সোভিয়েত ইউনিয়ন সমর্থিত এশীয় বা আফ্রিকার স্বৈরাচারী শক্তিগুলির ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলি এদের সংবাদের অন্যতম বিষয় হয়ে ওঠে। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমী ইউরোপীয় সমর্থিত নব্য উপনিবেশবাদ সম্বন্ধে এরা নীরবতা পালন করে।

নিয়ন্ত্রিত সংবাদ ছাড়া, প্রথম বিশ্ব তৃতীয় বিশ্বের উপর নিজস্ব সংস্কৃতি আরোপ করতে চেষ্টা করে। এক্ষেত্রেও প্রচার মাধ্যমের গুরুত্ব অপরিসীম। আধুনিক প্রযুক্তির বিস্ময়কর উন্নতির সাহায্যে পরবর্তীতে এই প্রকার মাধ্যমের ক্ষমতা আরও ব্যাপক হয়ে ওঠে। তৃতীয় বিশ্বে, রেডিও টেলিভিশন এবং আধুনিক ইন্টারনেটের সাহায্যে পশ্চিমী সংস্কৃতির প্রসার আরো ব্যাপক হয়ে উঠেছে। আদর্শগত পরিবর্তন ছাড়া নিত্যদিনের অভিজ্ঞতা আমাদের দেখাচ্ছে যে, খাদ্যবস্তু, বেশভুষা ইত্যাদি ক্ষেত্রেও পশ্চিমী সাংস্কৃতিক প্রভাবের ফলে, দেশীয় সংস্কৃতি, বিভিন্ন লোকাচার আজ অবলুপ্তির পথে। এছাড়া পশ্চিমী সংস্কৃতি, প্রথম বিশ্বের উজ্জ্বল দিকটাই অধিকাংশ ক্ষেত্রে তুলে ধরতে সচেষ্ট হয়। এর প্রভাব তৃতীয় বিশ্বের জনগণ, প্রথম বিশ্বের চিন্তাধারা এবং আদর্শের সঙ্গে একাত্মবোধ করতে শুরু করে। নব্য উপনিবেশিক নিয়ন্ত্রণের প্রকৃত উদ্দেশ্য সম্বন্ধে তারা বিস্মৃত হয়। এর ফলে নব্য উপনিবেশিক ভাবধারা আরও সহজ হয়ে ওঠে।

নব্য উপনিবেশবাদের নিয়ন্ত্রণ অবশ্য একচেটিয়া সাফল্য লাভ করতে পারেনি। তৃতীয় বিশ্বে নব্য উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে বহু জায়গায় জনমত সংগঠঠিত হয়েছে। আদর্শগত ভাবেও নব্য উপনিবেশবাদের মোকাবিলা করবার প্রচেষ্টা হয়েছে। এই আদর্শগত বিরোধের অন্যতম দুটি কেন্দ্রবিন্দু হলো তৃতীয় বিশ্বে সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন এবং নির্জোট আন্দোলন।

 

Post a Comment

0 Comments