মাঞ্চুরিয়া সংকট?

 

  • মাঞ্চুরিয়া সংকট?

                         দূর প্রাচ্যে জাপান কর্তৃক মাঞ্চুরিয়া আক্রমণের ঘটনাটি লিগ ব্যবস্থায় যৌথ নিরাপত্তা ব্যবস্থার পথে বড়ো রকমের একটি আঘাত ছিল। ১৯৩১ এর ১০ই সেপ্টেম্বর লিগ অ্যাসেমব্লিতে জনৈক সদস্য বলেন “There has scarcely been a period in the worlds history when war seemed less likely than it does at the present" মাঞ্চুরিয়া আক্রমণ থেকেই বিপর্যয়ের দিকে আন্তর্জাতিক রাজনীতি পরিচালিত হয়েছিল বলে অনেকেই মত প্রকাশ করেছেন। মাঞ্চুরিয়া আক্রমণের গুরুত্বের বিষয়টি উপলব্ধি করতে হলে জাপান কর্তৃক মাঞ্চুরিয়া আক্রমণের কারণ সমূহ বিশ্লেষণ করে দেখা প্রয়োজন। জাপান কর্তৃক মাঞ্চুরিয়া আক্রমণের একটি অর্থনৈতিক ব্যাখ্যা ভিনাক অন্যান্য ঐতিহাসিক প্রদান করে থাকেন। এই ব্যাখ্যা অনুযায়ী ঊনবিংশ শতক জুড়ে জাপানের জনসংখ্যা ক্রমাগত বাড়তে শুরু করেছিল। ফ্রান্সের সঙ্গে জাপানের জনসংখ্যা সংক্রান্ত তুলনার মধ্যে দিয়ে দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে যে কীভাবে দ্রুতগতিতে জাপানের জনসংখ্যা বাড়তে শুরু করেছিল। এই বাড়তি জনসংখ্যার সমস্যা জাপানের সামনে দুটি সমস্যার সৃষ্টি করে। একটি হল এই বাড়তি জনসংখ্যার খাদ্যসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হয়েছিল। দ্বিতীয়ত, জনগণের জন্য স্থান সংকুলানের ব্যবস্থারও প্রয়োজন ছিল। মাঞ্চুরিয়া আক্রমণের পেছনে আর এক ধরনের অর্থনৈতিক ব্যাখ্যা প্রদান করা থাকে। এই ব্যাখ্যা অনুযায়ী মেইজি রেস্টোরেশনের পর থেকেই জাপানের শিল্পক্ষেত্রে অভূতপূর্ব অগ্রগতি ঘটে। এই অগ্রগতির দরুণ দুটি বিষয়ে জাপানকে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছিল। প্রসঙ্গত শিল্প পণ্য-সামগ্রীর জন্য কাচামালের প্রয়োজন ছিল। এদিক দিয়ে জাপান স্বয়ংসম্পূর্ণ না হওয়ার ফলে জাপানকে অন্যান্য অঞ্চলের ওপর নির্ভর করতে হত। দ্বিতীয়ত, শিল্প কারখানাগুলিতে উৎপাদিত সামগ্রীর জন্যে বাজারেরও প্রয়োজন ছিল। এদিক দিয়েও মাঞ্চুরিয়ার ওপর রাজনৈতিক আধিপতা প্রতিষ্ঠা করতে পারলে জাপানের পক্ষে তা নিঃসন্দেহে লাভজনক একটি বিষয় হয়ে উঠত।

জাপান কর্তৃক মাঞ্চুরিয়া আক্রমণের এই ঘটনা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ ছিল। মাঞ্চুরিয়া আক্রমণের ঘটনাটির আরেকটি তাৎপর্য হল এই যে, এর মধ্যে দিয়ে লিগ অফ নেশনের দুর্বলতা প্রকট হয়ে ওঠে। যার দরুন ইটালির ন্যায় ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্র আবিসিনিয়া আক্রমণের ব্যাপারে উৎসাহী হয়। ১৯৩৫- ইটালি কর্তৃক আবিসিনিয়া আক্রমণের ঘটনার মধ্যে দিয়ে মুসোলিনি হিটলার পরস্পরের কাছাকাছি আসতে সক্ষম হয়। যার দরুন ১৯৩৬ রোম-বার্লিন অক্ষচুক্তি গড়ে ওঠে। জাপান লিগ পক্ষ ত্যাগ করে অক্ষশক্তির পক্ষে যোগদান করলে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে পরিস্থিতি অনেক বেশি জটিল হয়ে ওঠে। কার্যত মিত্রশক্তি অক্ষশক্তিএই দুটি জোট গড়ে ওঠায় আন্তর্জাতিক ভারসাম্য আরো জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি করে।

Post a Comment

0 Comments