বাস্তিল দুর্গের পতন ও তার তাৎপর্য।?

 

  • বাস্তিল দুর্গের পতন তার তাৎপর্য।?

                                মূলত প্যারিসের শ্রমিক কারিগর এবং গ্রামের শহরের দরিদ্র মানুষ খাদ্যের দাবিতে এক প্রবল দাঙ্গা-হাঙ্গামা শুরু করে। প্যারিসের সর্বত্র বিক্ষোভ মিছিল তাদের মুখে শুধু খাদ্যের দাবি। এই বিক্ষুব্ধ জনতাকে ছত্রভঙ্গ করার জন্য মিছিলের উপর অশ্বারোহী চালানো হয়। কিন্তু প্যারিসের সামরিক অধিনায়ক স্বসৈন্যে সরে দাড়ালে আপাতত রাজধানীর নিয়ন্ত্রণ জনতার হাতেই চলে যায়। রাস্তায় রাস্তায় গড়ে ওঠে ব্যারিকেড এবং লুণ্ঠিত হয় আগ্নেয়াস্ত্রের দোকান। ১৭৮৯ খ্রীঃ ১৪ই জুলাই উত্তেজনার বশবর্তী হয়ে এবং আরও অধিক পরিমাণে আগ্নেয়াস্ত্র সংগ্রহের উদ্দেশ্যে জনতা স্বৈরাচারী রাজতন্ত্রের অত্যাচারের প্রতীক বাস্তিল দুর্গটি আক্রমণ করে। উন্মুক্ত জনতা কারাগারের বন্দিদেরকে মুক্ত করে কারাগারের অধিকর্তা দ্যলুনে-কে হত্যা করে। এই ঘটনা সম্পর্কে ষোড়শ লুই এইরূপ অভিমত প্রকাশ করেন ‘That is a revolt’ পতনের প্রতীকী মূল্য ছিল অসামান্য। এই কারাদুর্গটি ছিল স্বৈরাচারী বুরবোঁ রাজবংশের বাস্তিলের কারাদুর্গের পতন এমন কিছু সাংঘাতিক ঘটনা ছিল না, কিন্তু এই| অত্যাচারের প্রতীক। সুতরাং বাস্তিলের পতন পূর্বতন সমাজের পূর্বাভাস বলা যায়।উপরন্তু জন তাঁর সাফল্যে আশঙ্কিত হয়ে রাজার প্রাচীন প্রাসাদ থেকে সেনাবাহিনী সরিয়ে নেওয়া হয়, জাতীয় পরিষদ রক্ষা পায় ষোড়শ লুই জাতীয় পরিষদকে স্বীকৃতি দান করেন। বাস্তিলের পতনের পর রাজদরবারের অভিজাত চক্রান্ত আপাতত ভেঙে যায়। ষোড়শ লুই প্যারিস থেকে সেনা অপসারণ করে নেন এবং নেকারকে পুণরায় তার পূর্বেকার পদে নিয়োগ কেরন। ঐতিহাসিক গুডউইন এর মতে বাস্তিলের পতনের প্রতিক্রিয়া ছিল বহুমুখী সুদূর প্রসারী।বাস্তিলের পতনের সঙ্গে সঙ্গে ফ্রান্সে স্বৈরাচারী রাজতন্ত্রের সমাধি ঘটে। রাষ্ট্রের প্রকৃত ক্ষমতা জাতীয় আইনসভার হাতে হস্তান্তরীত হয় এবং কৃষকশ্রেণী বিদ্রোহ করার ফলে সামন্ততন্ত্রের অবসান ঘটে। এর ফলশ্রুতি হিসাবে ফ্রান্সে পেরি বিপ্লবের সূচনা হয় এবং প্রশাসনের বিকেন্দ্রীকরণের কাজ শুরু হয়। বাস্তিলের পতনের সঙ্গে সঙ্গে কাউন্ট দ্য-আরটয়েস এর নেতৃত্বে প্রতিক্রিয়াশীল অভিজাতদের এক দল সর্বপ্রথম দেশত্যাগ হয়। গুডউইন-এর মতে বাস্তিলের পতন শুধু ফ্রান্সেই নয়। বিশ্বের সর্বত্র স্বাধীনতার জন্মলগ্নের সংবাদ প্রচার করে।

Post a Comment

0 Comments