১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্সে ফেব্রুয়ারী বিপ্লবের পটভূমি আলোচনা করুন? প্রকৃতিগত দিক থেকে এটি কি ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের বিপ্লব থেকে পৃথক ছিল ? অথবা ১৮৪৮ সালে ফ্রান্সে ফেব্রুয়ারী বিপ্লবের কারণও প্রকৃতি ব্যাখ্যা করুণ? অথবা ফেব্রুয়ারী বিপ্লবের গুরুত্ব ও ফলাফল আলোচনা করুন?

 

  • ১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্সে ফেব্রুয়ারী বিপ্লবের পটভূমি আলোচনা করুন? প্রকৃতিগত দিক থেকে এটি কি ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের বিপ্লব থেকে পৃথক ছিল
  • অথবা ১৮৪৮ সালে ফ্রান্সে ফেব্রুয়ারী বিপ্লবের কারণও প্রকৃতি ব্যাখ্যা করুণ
  • অথবা ফেব্রুয়ারী বিপ্লবের গুরুত্ব ফলাফল আলোচনা করুন?

                                    একথা মনে রাখা দরকার যে, ফেব্রুয়রী বিপ্লব আপাত দৃষ্টিতে ব্যর্থ হলেও তা ভিয়েনা ব্যবস্থা বা ভিয়েনা সিষ্টেমের মৃত্যুর ঘন্টা বাজিয়ে দিয়েছিল। সর্বত্র পুরাতনতন্ত্রের শিখর ভয়ানকভাবে আলগা হয়ে যায়। ১৮৪৮ খ্রীঃ পূর্ববর্তী ইউরোপের রাজনৈতিক ১৭৯১ খ্রীঃ বিপ্লবী সংবিধান দ্বারা গির্জাকে রাষ্ট্রায়ত্ত করা হলে পোপের সঙ্গে ফরাসী রাষ্ট্রের বিরোধ বাধে। ক্যাথলিক প্রজারা ব্যবস্থা মানতে পারেনি। ধর্মের আধ্যাত্মিক ব্যাপারে নেপোলিয়ণের কোন মাথাব্যাথা না থাকলেও রাজিৈনতক স্বার্থে তিনি খ্রিষ্টীয় জগতের ধর্মগুরু পোপের সঙ্গে বিরোধ মিটিয়ে নেওয়ার পক্ষপাতী ছিলেন। এই উপলক্ষে ১৮০১ খ্রীঃ তিনি পোপ নবম পয়াস এর সঙ্গে এক ধর্ম মীমাংসা চুক্তি বা কনকর্ডাট স্বাক্ষর করেন।

নেপোলিয়ণে সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য গৌরবময় কীর্তি হল তাঁরআইন সংহিতা' বাকোড নেপোলিয়ন' এতদিন পর্যন্ত ফ্রান্স বিভিন্ন প্রদেশে কোনো সাধারণ আইনবিধি প্রচলিত ছিলনা। সমগ্র দেশে নানা ধরণের বৈষম্যমূলক, পরষ্পর বিরোধী এবং যুগের অনুপযোগী প্রায় ৩৬০টি বিভিন্ন ধরণের আইন প্রচলিত ছিল। দেশের উত্তরে ছিল প্রথাগত আইন, দক্ষিণে রোমান আইন। এছাড়াও ছিল রাজকীয় আইন, সামন্ত আইন যাজকীয় আইন। সামন্ত আইন যাজকীয় আইন, কনভেনশন ডিরেক্টরি যুগে বিপ্লবী নেতৃবৃন্দ এইসব পরস্পরবিরোধী আইনগুলির মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান করে সারা দেশে এক ধরণের আইন প্রণয়ণের চেষ্টা করেন। কিন্তু কাজে তারা সফল হননি। নেপোলিয়ণের উদ্যোগে ফ্রান্সের চারজন বিশিষ্ট আইনজীবিকে নিয়ে গঠিত এক কমিশন চার বছরের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে ১৮০৪ খ্রীঃ একটি আইনবিধি সংকলন করেন। আইনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য মোট ৮৪টি অধিবেশন বসে। ১৮০৭ খ্রীঃ নেপোলিয়ন এর নামকরণ করেনকোড নেপোলিয়নবানেপোলিয়ণের আইন সংহিতা'।নেপোলিয়ণ নানা জনহিতকর কাজের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তিনি কৃষি, ব্যবসা-বাণিজ্য যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির দিকে নজর দেন। বেকার সমস্যা সমাধানের জন্য তিনি নানা পরিকল্পনা নেন। তাঁর আমলে বহু রাজপথ, খাল, বাঁধ, সেতু, বন্দর পয়ঃপ্রণালী উদ্যান নির্মিত হয়। তিনি ফ্রান্সের প্রাচীন সৌধগুলি সংস্কার করেন এবং বহু নতুন সৌধ নির্মাণ করেন। প্যারিস নগরীকে তিনি নতুন সাজে সজ্জিত করেন, ভাস্কর্য শিল্পকলার অন্যতম সংগ্রহশালা ল্যুভের মিউজিয়াম প্রতিষ্ঠা তাঁর অন্যতম কীর্তি। বিপ্লব বিধ্বস্ত ফ্রান্সে যখন চরম নৈরাজ্য চলছে। সমগ্র জাতি যখন চরম বিপর্যয়ের মুখে দাড়িয়ে সম্পুর্ণ দিশেহারা, এই অবস্থায় নেপোলিয়ন দেশে শান্তি স্থিথি অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ফিরিয়ে আনেন, তাই অধ্যাপক ডেভিড টমসন বলেন যে, 'ফ্রান্সকে শৃঙ্খলায় আবদ্ধ করে বোনাপার্ট ফ্রান্সে আইনের শাসন ফিরিয়ে আনেন। মাত্র কয়েক বছর সংস্কার প্রচেষ্টার মাধ্যমে ফ্রান্সের জনজীবনে তিনি নতুন প্রাণের সঞ্চার করেন এবং ফ্রান্স একটি শক্তিশালী দেশে পরিণত হয়।

Post a Comment

0 Comments