ইউরোপীয় শক্তি সমবায় ?

 

  • ইউরোপীয় শক্তি সমবায় ?

                                        ১৮১৮-২২ খ্রীঃ মধ্যে চতুঃশক্তি চুক্তির চারটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলনগুলিআই-লা-স্যাপেল, ট্রপো, লাইব্যাক এবং ভেরোনা শহরে অনুষ্ঠিত হয়। এই চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী চারটি দেশই এই সম্মেলনগুলিতে যোগদান করে। ১৮২৪ খ্রীঃ চতুঃশক্তি চুক্তি কার্যত ভেঙে যাওয়ার কারনে সেন্ট পিটার্সবার্গে অনুষ্ঠিত পঞ্চম সম্মেলনে ইংল্যান্ড যোগদান করেনি।

) আই-লা-স্যাপেল কংগ্রেসচতুঃশক্তি চুক্তির অন্যতম শর্তহিসাবে ১৮১৮ খ্রীঃ জার্মানির আই-লা-স্যাপেল শহরে এই শক্তিজোটের প্রথম অধিবেশন বসে। আই-লা-স্যাপেল হল ফরাসী নাম। প্রকৃতপক্ষে এটি হল প্রাচীন জার্মাণ শহর আখেন। রাশিয়া, প্রাশিয়া অস্ট্রিয়ার নৃপতি এবং মেটারনিখ, ক্যাসালরি ওয়েলিংটন, হার্ডেনবার্গ এবং ফরাসি প্রধানমন্ত্রী রিশল্য প্রমুখ কূটনীতিকরা এই সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন এবং তাঁরা বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য সিদ্ধান্তও গ্রহণ করেন।

) ট্রপো কংগ্রেস-আই-লা-স্যাপেলে বৃহৎ শক্তিগুলির মধ্যে যে ফাটল ধরেছিল, ট্রপো- বৈঠকে তা আরও বড়ো হয়ে ওঠে। ১৮২০ খ্রীঃ স্পেনে গনবিদ্রোহ দেখা দিলে বুরবো বংশীয় রাজ সপ্তম ফার্দিনান্দ স্পেনে একটি উদারনৈতিক সংবিধান প্রবর্তণে বাধ্য হন। এতে জার প্রথম আলেকজান্ডার বিচলিত বোধ করেন এবং এই বিদ্রোহ দমনের জন্য শক্তি সমবায়কে উদ্যোগি হওয়ার আহ্বান জানান। এর উত্তরে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেন যে, স্পেনের বিপ্লব সে দেশের আভ্যন্তরীন ঘটনা এবং সেক্ষেত্রে বাইরের হস্তক্ষেপ সম্পূর্ণরূপে অবাঞ্চিত অনাকাঙ্খিত অনাবশ্যক।

) লাইব্যাক বৈঠক-লাইব্যাকে শক্তি সমবায়ের তৃতীয় বৈঠক বসে। ট্রাপোর ঘোষণাপত্র অনুসারে অস্ট্রিয়াকে নেপলস-এর বিদ্রোহ দমনের দায়িত্ব দেওয়া হয়। অস্ট্রিয়ার সেনাদল বুরবোঁ-বংশীয় প্রথম ফার্দিনান্দকে পূর্ণ ক্ষমতা সহ নেপলসের সিংহাসনে প্রতিষ্ঠিত করেন। পিডমন্ট- বিদ্রোহ দেখা দিলে অস্ট্রিয়ায় সেনাবাহিনী তা দমন করে। এইভাবে সমগ্র ইতালি এবং ইউরোপে কিছুদিনের জন্য মেটারনিখতন্ত্র জয়যুক্ত হয়।

) ভেরোনা বৈঠক১৮২২ খ্রীঃ ভেরোনা নগরীতে শক্তি সমবায়ের চতুর্থ অধিবেশন বসে। ইতিমধ্যে ক্যাসালরি- আত্মহত্যার পর জর্জ ক্যানিং ইংল্যান্ডের বিদেশমন্ত্রীর পদে বসেন। তিনি মনে করতেন যে, শক্তি সমবায়ে যোগ দেওয়ার ফলে ইংল্যান্ডের ক্ষতি হয়েছে এবং ইংল্যান্ড স্বাধীন পররাষ্ট্র নীতি গ্রহণের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। তাঁর মতে, যুদ্ধের সময় শক্তি সমবায়ের প্রয়োজন থাকলেও শান্তির সময় এর অস্তিত্ব ইংল্যান্ডের স্বার্থবিরোধী। কারণে তিনি এই সংগঠনের সঙ্গে সম্পর্ক-চ্ছেদের কথা চিন্তা করেন।

) সেন্ট পিটার্সবার্গ বৈঠকভেরোনা বৈঠকের পর শক্তি সমবায় কার্যত ভেঙ্গে যায়। গ্রিসের বিদ্রোহের সমস্যা সমাধাণের জন্য জার প্রথম আলেকজান্ডার সেন্ট পিপটার্সবার্গে শক্তি সমবায়ের পঞ্চম সম্মেলন আহ্বান করেন। শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হয় যে, তুরস্ক এশিয়া রাষ্ট্র এবং গ্রিস তুরষ্কের অধিনস্থ। সুতরাং তুরষ্কের বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার অধিকার শক্তিসমবায়ের নেই। এর ফলে জার অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে প্রবল মতপার্থক্য দেখা দেয় এবং শক্তিসমবায়ের পতন ঘটে।

Post a Comment

0 Comments