ভিয়েনা সম্মেলনের মূল উদ্দেশ্য কী ছিল? এই সম্মেলনে কী কী প্রধান সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়েছিল? অথবা ভিয়েনা সম্মেলনের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি কী ছিল? এই সম্মেলনের ঐতিহাসিক গুরুত্ব নিরুনপ করুন? অথবা ভিয়েনা সম্মেলন সম্পর্কে একটি সমালোচনা মূলক প্রবন্ধ লিখুন?

 

  • ভিয়েনা সম্মেলনের মূল উদ্দেশ্য কী ছিল? এই সম্মেলনে কী কী প্রধান সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়েছিল
  • অথবা ভিয়েনা সম্মেলনের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি কী ছিল? এই সম্মেলনের ঐতিহাসিক গুরুত্ব নিরুনপ করুন?
  • অথবা ভিয়েনা সম্মেলন সম্পর্কে একটি সমালোচনা মূলক প্রবন্ধ লিখুন?

                                         লিপজিগের যুদ্ধে শোচনীয়ভাবে পরাজয়ের পর নেপোলিয়নকে ভূমধ্যসাগরের এলবা দ্বীপে নির্বাসিত করা হয়। তিনি রাজ্যজয় সাম্রাজ্য বিস্তারের দ্বারা ইউরোপ মানচিত্রে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটিয়েছিলেন। তাই তাঁর নির্বাসনের পর ইউরোপীয় রাজ্যগুলির পুনর্গঠন, সীমানার পুনর্বিন্যাস এবং নেপোলনীয় যুদ্ধের ফলে উদ্ধৃত অপরাপর নানা সমস্যার সমাধাণের উদ্দেশ্যে ইউরোপীয় শক্তিবর্গ অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনাতে এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে মিলিত হন। ইতিমধ্যে নেপোলিয়ন অকস্মাৎ ফ্রান্সে প্রত্যাবর্তন করলে ইউরোপীয় নেতৃমন্ডলী সাময়িক ভাবে সম্মেলনের কাজ স্থগিত রেখে তাঁর বিরুদ্ধে যুদ্ধযাত্রা করেন এবং ১৮১৫ খ্রীঃ ১৮ই জুন ওয়াটারলুর যুদ্ধে তাঁর চূড়ান্ত পরাজয়ের পর পুনরায় সম্মেলণের কাজকর্ম শুরু হয়। সমসাময়িক তিনজন শক্তিশালী রাজা এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন অস্ট্রিয়ার রাজা প্রথম ফ্রান্সিস প্রাশিয়ার রাজা তৃতীয় ফ্রেডরিক উইলিয়াম রাশিয়ার জার প্রথম আলেকজান্ডার উপস্থিত রাজনীতিবিদদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন ইংল্যান্ডের ক্যাসলরী ওয়েলিংটন প্রাশিয়ার প্রিন্স হার্ডেনবার্গ, অস্ট্রিয়ার প্রিন্স মেটারনিখ এবং রাশিয়ার কাউন্ট নেসেলবোড। ইউরোপের পূনঃগঠনের উদ্দেশ্যে ভিয়েনা সম্মেলনের নেতৃবর্গ প্রাধানত তিনটি নীতি গ্রহণ করেন। এই নীতিগুলি হল – 

) ন্যায্য অধিকারের নীতি 

) ক্ষতিপূরণ নীতি 

) শক্তিসাম্য নীতি,

ন্যায্য অধিকারের নীতির পক্ষে সর্বাপেক্ষা জোরালো সমর্থক ছিলেন ফরাসী প্রতিনিধি ট্যালির্যান্ড এবং অস্ট্রিয়ার প্রধানমন্ত্রী মেটারনিখ। এর নীতির উদ্দেশ্য ছিল ইউরোপে যথাসম্ভব প্রবল বিপ্লব যুগের পুনঃপরিবর্তনের ফলে ফ্রান্সে বুরবো শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয় এবং বিপ্লবের আগে ফ্রান্সের যে রাজ্যসীমা ছিল তাই তাকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। এই নীতি অনুসারেই উত্তর ইতালি জার্মানিতে অস্ট্রিয়ার আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। বলা বাহুল্য এই নীতি কিন্তু সর্বক্ষেত্রে সমভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। বলা বাহুল্য এই নীতি কিন্তু সর্বক্ষেত্রে সমভাবে প্রযোজ্য হয়নি। ভেনিস জেনোয়ার প্রজাতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়নি। ১৮০৩ খ্রীঃ বিলুপ্ত জার্মাণ রাজ্যগুলি পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়নি। বেলজিয়ামকে জোর করে হল্যান্ডের সঙ্গে এবং নরওয়েকে ডেনমার্কের কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে সুইডেনের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়। সুতরাং ন্যায্য অধিকার নীতি নেতৃবর্গের নিজ স্বার্থ দ্বারাই পরিচালিত হয়েছিল।

নেপোলিয়নের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইউরোপের বহু রাষ্ট্র বিশেষত ইংল্যান্ড,রাশিয়া, অষ্ট্রিয়া, সুইডেন প্রভূত ক্ষতি স্বীকারে বাধ্য হয়েছিল। ভিয়েনা সম্মেলনে গৃহীত ক্ষতিপূরণ নীতি অনুসারে তারা বেশ কিছু অঞ্চল নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেয়

) অষ্ট্রিয়া উত্তর ইতালিতে লম্বার্ডি ভেনেশিয়া, পোল্যান্ডের অংশবিশেষ, টাইরল ইলিরিয়ান প্রদেশগুলি লাভ করে, মধ্য ইতালীর পার্মা, মডেনায় অস্ট্রিয়ার হ্যাপসবার্গ বংশের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। 

) প্রাশিয়া পায় সাক্সনির উত্তরাংশ থর্ণ, রাইন প্রভৃতি 

) রাশিয়া পায় ফিনল্যান্ড, তুরস্কের বেসাররিয়া এবং পোল্যান্ডের বৃহদাংশ 

) ইংল্যান্ড ইউরোপীয় মহাদেশের বাইরে ভূমধ্যসাগরের মন্টাদ্বীপ, মরিসাস সিংহল সামরিক বাণিজ্যকেন্দ্র লাভ করে।

শক্তিসাম্য নীতির মূল কথা হল আগামী দিনে ফ্রান্স যাতে শক্তিশালী হয়ে উঠে ইউরোপের শান্তি বিঘ্নিত করতে না পারে এবং বিজয়ী শক্তিবর্গের মধ্যে কেউ যাতে একে অন্যের চেয়ে বেশি শক্তিশালী না হয়ে ওঠে। সেদিকে লক্ষ্য রেখে একটি শক্তিশালী রাষ্ট্রবেষ্ঠনী গড়ে তোলা হয়। 

) ফ্রান্সের উত্তর-পূর্বে অবস্থিত লুক্ৰেমবার্গ বেলজিয়ামকে হল্যান্ডের সঙ্গে

) ফ্রান্সের পূর্ব-সীমান্তে রেনিস প্রদেশ বা রাইন জেলাগুলিকে প্রাশিয়ার সঙ্গে। 

) ফ্রান্সের দক্ষিণ পূর্বে কয়েকটি জেলা সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে ) ফ্রান্সের দক্ষিণে স্যাভয় জেনোয়াকে পিডমন্টের সঙ্গে যুক্ত করে ফ্রান্সের চারিপাশে একটা শক্তিশালী নিরাপত্তা গড়ে তোলা হয়।

Post a Comment

0 Comments