গ্রন্থাগার সামগ্রীর সংরক্ষণ প্রতিরোধক ও আরোগ্যকর ব্যবস্থা :

  • প্রাকৃতিক নিয়মে বা অন্য কোন কারণে অনেক সময় কাগজ শিল্পবস্তু পুরাতন সামগ্রী সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অবক্ষয় ঘটে৷অন্যান্য কারণ এর মধ্যে মানুষ্য ঘটিত কারণ থাকতে পারে৷ ছত্রাকে আক্রমণে কাগজের বস্তু বিনষ্ট হয়৷ আবহাওয়া আদ্রতার পরিবর্তন বই নষ্ট করে দেয়৷ এই ধরনের ধ্বংস থেকে রেহাই পেতে হলে যে বৈজ্ঞানিক পন্থা অবলম্বন করতে হয় তাকে এক কথায় সংরক্ষণ বলা হয়৷ এই সংরক্ষণের মধ্যে অনেকগুলি জিনিস থাকে, গ্রন্থের বহিরাগত আকৃতি সঠিক রাখা, গ্রন্থ যাতে কোনরকম শত্রুর দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত না হয় তা দেখা এবং ক্ষতিগ্রস্ত হলে তাকে কোন উপায়ে সরানো৷ ইন্ডিয়ান কনজারভেশন ইনস্টিটিউট এর গবেষকরা লক্ষ্য করেছেন যে বিভিন্ন সামগ্রীর নষ্ট হওয়ার কারণ অনেক সময় অবহেলা যত্নের অভাব এবং যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ অব্যবস্থা৷ গ্রন্থাগারের বস্তুর ক্ষেত্রে যেদিকে নজর দেওয়া প্রয়োজন তা হল বস্তুগুলিকে ইতিমধ্যে যেসব খুঁত দেখা দিয়েছে সেগুলো ঠিক করা এবং ভবিষ্যতে যাতে সেগুলি আর ক্ষতিগ্রস্ত না হয় তা দেখা৷ সংরক্ষণমূলক ব্যবস্থা দি এবং গবেষণা ছাড়াও বস্তুগুলোকে আরো ক্ষতি থেকে বাঁচাতে অথবা ভালোভাবে রাখতে কিছু কিছু সাবধানতারও প্রয়োজন আছে৷ গ্রন্থ সামগ্রীর সংরক্ষণ করতে হবে যাতে বর্তমান ও ভবিষ্যতে সেগুলির ভালোভাবে ব্যবহার করা যায়৷ প্রথমে গ্রন্থাগারের প্রধান শত্রু গুলিকে চিহ্নিত করে তাদের প্রতিরোধের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন হয়৷ কাজেই এখন আমরা গ্রন্থ সামগ্রীর প্রধান প্রধান শত্রুগুলিকে চিহ্নিত করে তাদের প্রতিরোধের উপায় গুলি একে একে নিম্নে আলোচনা করা হল-

ক) রুপালি পোকাঃ এই পোকা কাগজ ও কাঠের ক্ষতি করে৷ এদের প্রতিকার হিসাবে আর্সেনিক পেন ক্লাইডের মিশ্রিত আধার সেলাই, সিলফি প্রভৃতি কীটনাশক ব্যবহার করা হয়৷

খ) আরশোলাঃ আরশোলা পান্ডুলিপি, কাপড়চোপড়, বইপত্র, তালপাতা, চামড়া প্রভৃতি জিনিসকে নষ্ট করে৷ এদের প্রতিকারের জন্য ক্লোরোডেন, পাইচের হ্রাস, ডিডিটি, বেগন বেইট ব্যবহার করা হয়৷

গ) উইপোকাঃ বইপত্র কাঠের জিনিস ভয়ংকরভাবে ক্ষতি করে উইপোকা, ওই দুই ধরনের হয় যথা কেঠো উই, ভূগর্ভস্থ উই৷ এদের প্রতিকারের উপায় হল কেরোসিন তেল ঢালা। এছাড়া Qestrao, কার্বডাইসাল থাইড কার্বন টেট্রাক্লোরাইড ইত্যাদি করা হয়৷ ঘ) ইঁদুরঃ ইঁদুর বইপত্র খাইনা কেটে নষ্ট করে ফেলে৷ এদের প্রতিকারের জন্য বাজারে প্রচুর Rat Killer ছাড়া Rat trap রেখে

এদের ধ্বংস করা হয়৷

ঙ) মানুষঃ মানুষ অন্যতম প্রধান শত্রু৷ বই চুরি করা পাতা কেটে নেওয়া, আগুন লাগিয়ে দেওয়া প্রভৃতি৷ বিচ্ছিন্নভাবে ক্ষতি করে৷ প্রতিরোধ হিসেবে গ্রন্থাগারে সিসিটিভি লাগানো, বই জমা দিতে এলে ভালোভাবে চেক করা প্রভৃতি প্রতিরোধ হিসাবে বিবেচিত। এছাড়াও 


প্রতিরোধ ব্যবস্থা হিসাবে -

i) গ্রন্থাগার ভবনটি তৈরি করার পূর্বে খেয়াল রাখতে হবে যে গ্রন্থাগারে আলো-বাতাস প্রভৃতি যেন ঢুকতে পারে৷

ii) মাঝে মধ্যে বেগন স্প্রে, সেলটিক্স, ন্যাপথলিন বল প্রভৃতি নির্দিষ্টকালের ব্যবধানে প্রয়োগ করা।

iii) ল্যামিনেশনের মাধ্যমে ছেঁড়াপৃষ্ঠাকে শক্ত করে জুড়ে দেওয়া৷

iv) ডিঅ্যাসিডিফিকেশন দ্বারা ক্যালসিয়াম হাইড্রোক্সাইড ও ক্যালসিয়াম কার্বনেট সিম্বা কিংবা ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম বাই কার্বনেটের মিশ্রন ব্যবহার করে কাগজের অম্লতা ঠিক (PH মান 6.7 থেকে 6.9) করা হয়৷

v) ফিউমিনেসন পদ্ধতির দ্বারা হিউম্যান চেম্বারে বিভিন্ন প্রকার রাসায়নিক পদার্থ যেমন থাইমল, কার্বন ডাই অক্সাইড, ফরমালডিহাইড ইথিলিন অক্সাইড ইত্যাদি ছত্রাক ও কীটপতঙ্গের দ্বারা ক্ষয়ক্ষতি

দমন করা,

vi) ধুলোবালি ও নোংরা থেকে বিভিন্ন জীবাণু সৃষ্টি হতে পারে তাই প্রতিদিন ফিনাইল দিয়ে মোছা, ঝুল ঝাড়া প্রভৃতি করতে হবে। উপরের আলোচনা থেকে একথা সহজেই অনুমেয় যে একদিকে যেমন গ্রন্থাগারের শত্রুর অভাব নেই পাশাপাশি ওই শত্রুর মোকাবিলা করার ও বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে যা পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে পর্যবেক্ষণ করে সঠিকভাবে ব্যবহার করলে গ্রন্থাগারে শত্রু গুলি নষ্ট হয় এবং ভবিষ্যতে পাঠকের চাহিদা পূরণে সমস্ত নথিপত্র গুলিও ব্যবহারযোগ্য হয়ে ওঠে।

Post a Comment

0 Comments