- গ্র্যান্ড অ্যালায়েন্স। গ্র্যান্ড অ্যালায়েন্স বা মহাজোট?
১৯৪১ সালের ২২শে জুন জার্মানি আক্রমণ চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করে সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং রাশিয়া আক্রমণ করলে গ্র্যান্ড অ্যালায়েন্স চুক্তি ক্ষণস্থায়ী হয়ে পড়ে। বাস্তবিক পক্ষে রুশ আক্রমণের পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছিল। ১৯৪০ খ্রিঃ ১৮ই ডিসেম্বর আক্রমণ কার্যকর করতে ছয় মাস কেটে যায়। ১৯৪০-৪১ সালের মধ্যে রুশ জার্মান সম্পর্কের দ্রুত অবনতি ঘটে। জার্মানরা বিশ্বাস করত, ফিনল্যান্ডের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা স্টালিনের উচিত হয়নি। তারা খোলাখুলি ফিনল্যান্ডের প্রতি তাদের সহানুভূতি গ্রহণ করেছিলেন। স্টালিন পূর্ব ইউরোপের রাজ্যাংশ পেয়ে সন্তুষ্ট হয়নি। ১৯৪০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে জার্মানি, জাপান এবং ইতালি ত্রিশক্তি চুক্তি স্বাক্ষর করে। রুশ দাবি মানা না হলে মনোটভ এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে অস্বীকার করেন। অধ্যাপক আই গ্রের মতে, এই আলোচনার পরেই হিটলার ১৯৪১ সালে রুশ আক্রমণের পরিকল্পনা গ্রহণ করে। স্টালিন বহু সাবধানবাণী অগ্রাহ্য করেছিলেন। যখন আক্রমণের সংবাদ এল তখন রুশবাবিনী সম্পূর্ণ অপ্রস্তুত। স্টালিনই একদিকে এই আক্রমণের উত্তর দেবার জন্য প্রস্তুত হলেন আর অন্যদিকে, পাশ্চাত্য শক্তিগুলির সঙ্গে যোগাযোগ করলেন। ১৯৪১ সালে ইঙ্গ-সোভিয়েত পারস্পরিক সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হল। ১৯৪২ সালে সম্পাদিত হল ২০ বছর স্থায়ী ইঙ্গ-সোভিয়েত মৈত্রীচুক্তি। যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধে যোগদান করল তখন ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নকে নিয়ে গ্রান্ড অ্যালায়েন্স স্থাপিত হল। এই মৈত্রীর মূল উদ্দেশ্য ছিল নাৎসিবাদের পতন ঘটানো। এই মৈত্রী শেষ পর্যন্ত পৃথিবী থেকে একনায়কতন্ত্রের অবসান ঘটালেও এই মৈত্রী কখনই দৃঢ়ভিত্তিক ছিল না। রোম-বার্লিন-টোকিও অক্ষশক্তির পতনের পরেই এই মৈত্রী ব্যবস্থার ফাটলগুলি বড় হয়ে ওঠে। উষ্ণ যুদ্ধের অবসানে বলতে গেলে গোটা পৃথিবীই জড়িয়ে পড়ে ঠান্ডা লড়াইতে। ইউরোপীয় প্রাধান্যের অবসানে রুশ-মার্কিন বিরোধ পৃথিবীকে ভাগ করে দ্বিপাক্ষিক দুনিয়ায়।
0 Comments