নৈরাজ্যবাদ।

 নৈরাজ্যবাদ।

নৈরাজ্যবাদের অন্যতম প্রধান প্রবক্তা ছিলেন মাইকেল বাকুনিন। বাকুনিনের দেহে রুশ অভিজাত পরিবারের রক্ত থাকলেও তিনি ছিলেন চিন্তায় বিপ্লবী। সমারিক বিভাগে কিছুকাল কাজ করার পর তিনি বিপ্লবী দলে যোগ দেন। ১৮৪৮ খ্রীঃ ফেব্রুয়ারী বিপ্লবরে সময় তিনি প্যারিসের রাস্তায় শ্রেণীযুদ্ধে যোগ দেন। তিনি পরে বোহেমিয়ার বিদ্রোহেও অংশ নেন। বাকুনিনের ভাবধারায় নৈরাজ্যবাদী দর্শণের চিন্তা বিশাদভাবে বোঝা যায়। নৈরাজ্যবাদী হিসাবে বাকুনিন মনে করতেন যে, মানুষ মৌলিকভাবে সৎ হলেও বিভিন্ন সংস্থার ধারা দুর্নীতিগ্রস্থ হয়েছে। রাষ্ট্র, গীর্জা, ধনতন্ত্র প্রভৃতি মানুষকে শোষন করে। বাকুনিন বলেন যে, রাষ্ট্রের উৎপত্তি বল বা শক্তি এবং রক্তপাতের দ্বারা হয়েছে। সুতরাং রাষ্ট্র যা কিছু করে তার পশ্চাতে বল বা জবরদস্তির প্রকাশ থাকে। এমনকি যে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র উৎপাদন ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রিত করে সেই রাষ্ট্রও ক্ষমতার মদমত্ততায় ক্ষমতার অপব্যবহার করে। এজন্য রাষ্ট্রের ক্ষমতাকে বিকেন্দ্রীকরন না করলে ব্যক্তির স্বাধীনতা রক্ষিত হবে না

বাকুনিন ধনতন্ত্রবাদের কুফল সম্পর্কে উল্লেখ করেন। কারণ ধনতান্ত্রিক ব্যবস্থায় মুষ্টিমেয় থেকে বৃহত্তর জনগণকে শোষণ করে। এটি হল একটি বৈষম্যমূলক অন্যায় ব্যবস্থা। খ্রিস্টীয় গীর্জা সম্পর্কে বাকুনিন বলেন যে, গীর্জা মানুষের ব্যক্তিস্বাধীনতা চিন্তার স্বাধীনতা হরণ করে তাকে আবদ্ধ করেছে। গীর্জা হল একটি শোষণমূলক সংস্থা আধুনিক বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিদ্যারও বাকুনিন তীব্র সমালোচনা করেন। বিজ্ঞানী প্রকৃতির নিয়ম আবিষ্কার করার ফলে, এর অনুকরণে সামাজিক নিয়ম নামে কয়েকটি প্রথা চালু করা হয়। সিন্ডিক্যালিষ্ট বা সিন্ডিকবাদীদের মতবাদের সাথে বাকুনিনের চিন্তার মৌলিক অফাৎ ছিল। সিন্ডিকবাদীরা শ্রেণীসংগ্রামে শ্রমিকের আধিকারের তত্ত্বে বিশ্বাস করতেন। তাঁরা মনে করতেন যে, শ্রেনী সংগ্রামের হাতিয়ার ছিল শ্রমিকদের দ্বারা অনুষ্ঠিত সাধারণ ধর্মঘট। শ্রমিকদের রাজনৈতিক দলের স্থলে শ্রমিক ইউনিয়ণের সংগঠনের ওপর সিন্ডিকবাদীরা জোর দেন। বাকুনিন সিন্ডিকদের এই চিন্তাকে অগ্রাহ্য করেন। যদিও তিনি মার্কসবাদীদের মত শ্রেণীসংগ্রামের তত্ত্বে বিশ্বাস করতেন। কিন্তু তিনি মার্কসের মতশ্রমিক শ্রেণীর একনায়কতন্ত্রের আদর্শে বিশ্বাস করতেন না বাকুনিন রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে শোষণের হাতিয়ার বলে গন্য করতেন। তিনি সিন্ডিকবাদীদের মতকেও অগ্রাহ্য করেন। দক্ষিন-পূর্ব ইউরোপ স্পেনের কৃষক আন্দোলনেও বাকুনিনের চিন্তাধারার প্রভাব দেখা যায়।

Post a Comment

0 Comments