নব্য সাম্রাজ্যবাদ।

 

নব্য সাম্রাজ্যবাদ।

                                উনিশ শতকীয় নয়া উপনিবেশিকতা বা নব্য সাম্রাজ্যবাদের বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে ডেভিড থমসন বলেন, নয়া উপনিবেশবাদের উদ্যোগের মধ্যে ইউরোপীয় শক্তিগুলির আন্তঃরাষ্ট্র দ্বন্দ্ব শত্রুতা প্রকাশ পেয়েছিল। এই বিরোধের কেন্দ্রে ছিল বিভিন্ন দেশের বিচিত্র চাহিদা চিন্তাভাবনা যেমন, শিল্পোন্নত দেশগুলির লক্ষ্য ছিল শিল্পচাহিদা পুরণের জন্য অতিরিক্ত কাঁচামাল সংগ্রহ এবং শিল্পে প্রস্তুত পণ্যের বাজার সৃষ্টির জন্য নতুন নতুন উপনিবেশ দখল করা। আবার কেউ গুরুত্বপূর্ণ নৌ-ঘাঁটি নিজ দখলে রাখার জন্য সাম্রাজ্যবাদে লিপ্ত হয়েছে। কোনো কোনো দেশ জাতীয় মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য আগ্রাসী নীতি গ্রহণ করেছে। যেমন, লিবিয়ার ওপর ইতালির আধিপত্য স্থাপনে ইচ্ছা ইত্যাদি। এছাড়া জনবল বৃদ্ধি, উদ্বৃত্ত জনসংখ্যার জন্য স্থান সংকুলান, ধর্মপ্রচার ইত্যাদি নানা প্রবণতা এই শতকীয় সাম্রাজ্যবাদের পশ্চাৎপটে সক্রিয় ছিল। বিখ্যাত রুশ কমিউনিষ্ট নেতা লেনিন তাঁর Imperialism the highest stage of capitalism শীর্ষক পুস্তিকায় সাম্রাজ্যবাদের অর্থনৈতিক ব্যাখ্যাকে আরও বিশদভাব তুলে ধরেন। শিল্পে নিয়োজিত পুঁজির পরিবর্তে তিনি গুরুত্ব দেন মূলধনী পুজির ওপর। নতুন বাজার দখল নয়, বরং উদ্বৃত্ত পুঁজি বিনিয়োগের ক্ষেত্র অনুসন্ধানই সাধারণ ভাবে পুঁজিবাদের প্রত্যক্ষ সম্প্রসারিত ররূপ। তিনি দেখান, শিল্প প্রসারের ফলে ইউরোপের দেশগুলির হাতে বহু পুঁজি সঞ্চিত হয়। ইউরোপের মধ্যে এই উদ্বৃত্ত পুজি বিনিয়োগ করে মুনাফা অর্জণের সম্ভাবনা ক্রমশ হ্রাস পেয়েছিল। এমতাবস্থায় ইউরোপের পুঁজিবাদী দেশগুলি ইউরোপের বাইরে নতুন নতুন উপনিবেশ দখল করে পুঁজি বিনিয়োগের নতুন নতুন ক্ষেত্র গড়তে প্রয়াসী হয়। হবসন লেনিনের বিশ্লেষণ ১৯ শতকীয় সাম্রাজ্যবাদের কারণ অনুধাবনের ক্ষেত্রে অবশ্যই একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন। তবে এদের ব্যাখ্যাতেও কিছু সত্যকে উপেক্ষা করা হয়েছে। যেমন, হবসন, বলেন, শিল্প, মালিকদের উদ্বৃত্ত পুঁজির ফলে সাম্রাজ্যবাদের উদ্ভব ঘটেছে। কিন্তু শিল্প বিপ্লবের আগেও সাম্রাজ্যবাদ ছিল। হবসনের ব্যাখ্যা থেকে তার কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। ঐতিহাসিক ডেভিড থমসনও লেনিনের অর্থনৈতিক তত্ত্বকেসম্পূর্ণ' 'মৌলিক বলে মানতে অস্বীকার করেন। তাঁর মতে, উত্তর-পূর্ব ইউরোপীয় রাজ্যগুলির তুলনায় শিল্পায়নে অনেক পিছিয়ে থাকা সত্ত্বেও ফ্রান্স কেন আনাম, টংকিং, টিউনিসিয়া প্রভৃতি স্থানে উপনিবেশ স্থাপনে উদ্যোগী হনলেনিনের বক্তব্যে তা পাওয়া যায় না, ‘উদ্বৃত্ত পুঁজি বিনিয়োগের তৃষ্ণাতত্ত্ব থাকা সত্ত্বেও ইংল্যান্ড, কানাডা, অষ্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড দঃ আফ্রিকা তাঁর উপনিবেশগুলিতে প্রথম স্বায়ত্ত্বশাসন অধিকার পরে পূর্ন স্বাধীনতা দিতে দ্বিধা করেনি। কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র স্বাধীনতা অর্জণের পরই সেদেশে ব্রিটেনের রপ্তানি বৃদ্ধি পায়। অর্থাৎ ঔপনিবেশিক শোষন নয়, উদার বন্ধুত্ত্বই পুঁজি বিনিয়োগের সহায়ক ছিল। আর্জেন্টিনায় ব্রিটেনের উপনিবেশ থাকা সত্ত্বেও ভারতের মতই আর্জেন্টিনার রেলপথ নির্মাণে ব্রিটিশ পুঁজির বিনিয়োগ যথেষ্ট লাভজনক হয়। এটা নয়া সাম্রাজ্যবাদের ফসল, একথা নিঃসন্দেহে বলা চলে।

Post a Comment

0 Comments