তৃতীয় পেনোলিয়ণের অভ্যন্তরীন নীতি?

 

  • তৃতীয় পেনোলিয়ণের অভ্যন্তরীন নীতি?

                                  ১৮৫২ সালে ক্ষমতা দখল করার পর প্রথম তিন মাস তৃতীয় নেপোলিয়ন কঠোর হাতে তাঁর একনায়কত্ত্ব সুনিশ্চিত নিরঙ্কুশ করেন। সারা ফ্রান্স জুড়ে ব্যাপক ধরপাকড় শুরু হয়। প্রায় ২৫,০০০ জন কারারূদ্ধ হয় ,০০০ জনকে আলজেরিয়ায় নির্বাসিত করা হয়। ১৫০০ জনকে ফ্রান্স থেকে বহিস্কৃত করা হয়। ৩০০০ বন্দীকে মুক্তি দেওয়া হয়। ১৮৫৯ সালের মধ্যে ,৮০০ জন ছাড়া আর সবাইকে ক্ষমা করা হয়

সাংবিধানিক সংস্কার : ১৮৬০ সালের ২৪শে নভেম্বর সংসদীয় গনতন্ত্রের পথে প্রথম পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। ১৮৬১ সালে আইনসভাকে বাজেটের বিভিন্ন বিষয়ের ওপর ভোটাধিকার দেওয়া হয়। ১৮৬৭ সালে মন্ত্রীদের কাছে জবাবদিহি করার অধিকার স্বীকৃত হয়। ১৮৬৩ ১৮৬৯ সালের নির্বাচনে আইনসভায় প্রজাতন্ত্রীদের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। তৃতীয় নেপোলিয়নের শাসনকে খাঁটি একনায়কতন্ত্র বলা যায় কিনা, তাঁর শাসনাব্যবস্থায় একনায়কতন্ত্রের ঝোক কতটুকু ছিল, তার উত্তর সম্ভবত: একনায়কতন্ত্র বলতে কী বোঝায়, তার ওপরই নির্ভর করে। একনায়কতন্ত্র অর্থাৎ এমন এক শাসনব্যবস্থা যেখানে একজন একনায়ক শুধু সর্বোচ্চ ক্ষমতারই অধিকারী নয়, তাঁর শাসনব্যবস্থার মূল ভিত্তি হল ভীতি প্রদর্শন। সাধারণত একনায়কতন্ত্র অত্যাচারী নীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত হলেও জনকল্যাণের কথাও ভাবা যায়। আধুনিক যুগে নেপোলিয়নকেই একনায়কতন্ত্রের প্রধান প্রতিভু হিসেবে গণ্য করা হয়।

আর্থসামাজিক সংস্কার তৃতীয় নেপোলিয়ণের আসল দীর্ঘমেয়াদী আন্দোলন হল অর্থনৈতিক প্রগতি উন্নয়ন। এই অভিমত ব্যক্ত করেন আলফ্রেড কব্যশ অর্থনৈতিক উন্নতির পক্ষে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ একটি অত্যাবশ্যক শর্ত। শুধু অর্থনৈতিক প্রগতিই নয়, শ্রেণী সংঘাতের হাত থেকে ফ্রান্সকে রক্ষা করাও তাঁর অন্যতম উদ্দেশ্য। তিনি মনে করতেন সরকারের উচিত দরিদ্রের পাশে দাড়ানো। ফ্রান্সের কৃষক ছিল রক্ষণশীল পরিবর্তনবিরোধী। ১৮৫২ সালে ফ্রেডিট ফোঁসিয়ার ফ্রেডিট এগ্রিকোল এবং ১৮৬৩ সালে ক্রেডিট লিওনেজ স্থাপিত হয়। অর্থভান্ডার গড়ে তোলার জন্য তৃতীয় নেপোলিয়নকে অশ্বারোহী সেঁ সিঁম বলা হত। শ্রমিকদরদী মনোভাবের জন্য তাঁর আমলে রেলপথ ১৭,৫০০ কিমি. প্রসারিত হয়। প্যারিসে প্রশাসনিক বিভাগ ১২ থেকে ২০টি-তে বৃদ্ধি পায়। বড় রাস্তা, অট্টালিকা, সুরম্য পার্ক, সুন্দর বাগান শহরের শ্রীবৃদ্ধি করা হয়। আন্তর্জাতিক সমাবেশ আহ্বান করে, বিভিন্ন প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করে মর্যাদা বৃদ্ধি করেন। তাঁর অবাধ বাণিজ্য নীতির জন্য শিল্পপতিদের মধ্যে ক্ষোভ অসন্তোষের সঞ্চার হয়েছিল। তবে ব্যাঙ্ক মালিক এবং লগ্নীকারকেরা তাঁর ওপর খুশিই ছিলেন। শ্রমিকদের বাসস্থানের জন্য বিবিধ পরিকল্পনা গ্রহণ, তাদের ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার দেওয়া, বীমার ব্যবস্থা করা ইত্যাদি ছিল তাঁর আর্থ-সামাজিক কাজের দৃষ্টান্ত।

Post a Comment

0 Comments