রাক্ষসখালি তাম্রলিপি : ভূমিদান সংক্রান্ত দলিল

 রাক্ষসখালি তাম্রলিপি : ভূমিদান সংক্রান্ত দলিল



                                 সুন্দরবনের একটি উপেক্ষিত দ্বীপ রাক্ষসখালি। পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার পাথরপ্রতিমা ব্লকের ব্রজবল্লভপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত এই দ্বীপটি চারটি মৌজা—ব্রজবল্লভপুর, ক্ষেত্রমোহনপুর, গোবিন্দপুর আবাদ ও রাক্ষসখালি নিয়ে গঠিত। রাক্ষসখালি দ্বীপটির উত্তর ও উত্তর- পশ্চিম দিকে রয়েছে পাথরপ্রতিমা ব্লকের মূল ভূখণ্ড ও ভগবৎপুর কুমীর প্রকল্প, পূর্বে G-প্লট অঞ্চল এবং দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর। ব্রিটিশ শাসনকালে এই দ্বীপটির নামকরণ হয়েছিল ‘F-প্লট’। সেই ইতিহাস অনেক প্রাচীন, সুন্দরবনও অতি প্রাচীন। এখানকার শাসনব্যবস্থা সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানা যায় না। ৯৬৩০ গবেষক, ইতিহাস বিভাগ, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় হেমচন্দ্র ঘোষ স্মারক রচনা বর্গ কিলোমিটার এলাকাবিশিষ্ট সমগ্র সুন্দরবন ১৯৪৭ সালের দেশভাগের মধ্য দিয়ে ভারতবর্ষ ও বর্তমান বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিখণ্ডিত হয়ে যায়। বিশ্ব-ঐতিহ্যবাহী এই ভারতীয় সুন্দরবন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের চব্বিশ পরগনা জেলার দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের বুকে ভেসে রয়েছে সেই অতীত থেকে। ১৫৮২ সালে টোডরমলের যে রাজস্ব তালিকা প্রণীত হয়—সেই তালিকার পুনর্বিন্যাস করে ১৬৫৮ সালে সুলতান সুজা নতুন সরকার পত্তন করে সুন্দরবনকে তার অন্তর্ভুক্ত করেন। ১৭৫৭ সালে সম্রাট ঔরঙ্গজেবের কাছ থেকে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এই অঞ্চলের দায়িত্ব গ্রহণ করার পর ১৭৬৪ সালে সর্বপ্রথম সুন্দরবনের সীমানা চিহ্নিত করা হয়। সুন্দরবনের সংস্কার সংরক্ষিত বন এলাকা হিসাবে চিহ্নিত হলেও প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল ১৭৭০ সালে চব্বিশ ১৯৫০ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত সুন্দরবনের পরগনার কোম্পানি নিযুক্ত কালেক্টর জেনারেল ক্লড রাসেলের হাত ধরে। যশোরের তৎকালীন জেলাশাসক এবং ম্যাজিস্ট্রেট টিলম্যান হেগেল ১৭৮৩ সালে বড়লাট ওয়ারেন হেস্টিংসের কাছ থেকে সুন্দরবনের কিছু এলাকার জঙ্গল সংস্কার করার অধ্যাদেশ লাভ করেন। সেই থেকেই সুন্দরবনের বিশাল এলাকায় সংস্কারের কাজ চলতে থাকে। ১৭৮৪ সাল নাগাদ ম্যাজিস্ট্রেট টিলম্যান হেঙ্কেলের সময় সুন্দরবন জমিদারদের হস্তচ্যুত হয়ে জাতীয় সম্পদে পরিণত হয়।


সুন্দরবনে জরিপের কাজ হয়েছে অনেকবার। ১৮১১ থেকে ১৮১৪ সালের মধ্যে মরিসন সমগ্র সুন্দরবন এলাকার জরিপের কাজ শুরু করেন, তাঁর ভাই হিউ মরিসন জরিপের কাজ শেষ করেন। তখন সুন্দরবনের আংশিক মানচিত্র তৈরি হয়। ১৮২৮ থেকে ১৮৩২ সালের মধ্যে পুনরায় সুন্দরবন জরিপের কাজ হয় ড্যাম্পিয়ার ও হজেস সাহেবের তত্ত্বাবধানে। হজেস সমগ্র সুন্দরবন পরিভ্রমণ করেন এই অঞ্চলকে ২৩৬টি লটে বিভক্ত করে তিনি একটি সম্পূর্ণ মানচিত্র তৈরি করেন। এই মানচিত্রে ড্যাম্পিয়ার ও হজেস সুন্দরবন সীমার যে-লাইনটি এঁকেছিলেন তা 'ড্যাম্পিয়ার হজেস লাইন' নামে খ্যাত। সেইমতো ভারতীয় সুন্দরবনের সীমানা হিসাবে বলা যেতে পারে— “দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর বিশাল জলাশয়/ ড্যাম্পিয়ার হজেস লাইন উত্তরে অকশয়/ রায়মঙ্গল, কালিন্দী আর ইচ্ছামতি নদী/ পূর্বদিকে আছে জেনো বহে নিরবধি/ পশ্চিমদিকে হুগলী নদী জানিও নিশ্চয়/ কাকদ্বীপ থেকে বসিরহাট রেখার দক্ষিণ ভাগ হয়।”


বেশ কিছু এলাকা সংস্কার করা হয়। বিশেষ করে স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে ও ১৯৬৩ সালে উদ্বাস্তু পুনর্বাসনের জন্য সুন্দরবনের হেড়োভাঙা ও ঝড়খালি অঞ্চলের ৫০০০ একর বনাঞ্চল সংস্কার করা হয়েছিল। বাংলাদেশের উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসনের জন্য ১৯৫০ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত হিঙ্গলগঞ্জ, গোসাবা, বাসন্তী, কুলতলি, পাথরপ্রতিমা, নামখানা ও সাগরদ্বীপের কিছু কিছু স্থান, যেখানে বন অবশিষ্ট ছিল সেখানেও সংস্কারের কাজ হয়েছিল। সুন্দরবনের অরণ্য সংস্কারের মধ্য দিয়ে একদিকে যেমন মানুষের নতুন বসতি গড়ে উঠেছে, অন্যদিকে তেমনি সরকারের কোষাগারে রাজস্বের পরিমাণ যাতে দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে সেই দিকেও বেশি নজর দেওয়া হয়েছে। মিস্টার স্মিথ এবং উমাকান্ত সেন নামে এক বাঙালি সার্ভেয়ার ১৮৫০ থেকে ১৮৫৩ সালের মধ্যে চব্বিশ পরগনার বেশ কিছু এলাকা ও তার সঙ্গে পাথরপ্রতিমা এলাকার বেশ কিছু জঙ্গলে এলাকা পরিমাপ করেন এবং সমুদ্রের দিকে বিস্তৃত দ্বীপগুলিকে A থেকে L পর্যন্ত ১২টি প্লটে নথিভুক্ত করেন। প্লটগুলির বিস্তৃতি এভাবেই — A প্লট —নামখানা-হাতানিয়া- দোয়ানিয়ার পরের অংশ, B-প্লট—মদনগঞ্জ ও শিবনগর এলাকা, C-প্লট—মৌসুনি-রাধানগর, সুন্দরবনের সন্দেশখালি, কাকদ্বীপ, নামখানা, পাথরপ্রতিমা, বাসন্তী, কুলতলি, গোসাবা, ক্যানিং, মথুরাপুর ও সাগরদ্বীপ এলাকার জঙ্গল সংস্কারের কাজ চলেছিল ১৮৭৩ থেকে ১৯৩৯ সাল পর্যন্ত। ১৯৩৯ সালে সুন্দরবন লোকালয় হিসাবে এবং D-প্লট-ফ্রেজারগঞ্জ-বকখালি-নারায়ণীতলা, E-প্লট — পাথরপ্রতিমা অঞ্চল, F-প্লট—ব্রজবল্লভপুর অঞ্চল, G-প্লট — সুরেন্দ্রগঞ্জ-বুড়াবুড়ির তট অঞ্চল, H-প্লট—বনশ্যামনগর অঞ্চল, I-প্লট—অচিন্ত্যনগর- লক্ষ্মীজনার্দনপুর অঞ্চল, J-প্লট—হেরম্বগোপালপুর অঞ্চল, K-প্লট—পূর্ব ও পশ্চিম শ্রীপতিনগর অঞ্চল, L-প্লট–শ্রীধরনগর অঞ্চল।

হয়ে উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার সৃষ্টি চব্বিশ পরগনা জেলা ১৯৮৪ সালে দ্বিখণ্ডিত হয়। দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার দক্ষিণাংশ হলো ভারতীয় সুন্দরবন, যা ১৯টি ব্লক নিয়ে মনুষ্যবাসের উপযোগী হয়ে উঠেছিল। তবে রাক্ষসখালি দ্বীপকে কেন্দ্র করে যে-ইতিহাস, তার সূচনা ১৩০০ বঙ্গাব্দের অনেক আগে।

যেটি স্থানীয় মানুষের শ্রুতি অনুযায়ী এই গ্রামের ১১৯৬ সালে প্রাপ্ত 'রাক্ষসখালি তাম্রশাসন'- প্রত্নস্থল থেকেই পাওয়া গিয়েছে। Epigraphia এই তাম্রলিপিটির উল্লেখ রয়েছে—১১১৮ শকে Indica-র Vol. XXVII এবং Vol. XXX-এ (১১৯৬ সাল) মহাসামন্তাধিপতি, মহারাজাধিরাজ, সামন্তরাজ ডোম্মন পালদেব পূর্বখাটিকাস্থ দ্বারহটিক গঠিত—সাগর, কাকদ্বীপ, নামখানা, মথুরাপুর-১, সরকারের কাছ থেকে বন থেকে বসত গড়তে মথুরাপুর-২, পাথরপ্রতিমা, জয়নগর-১, জয়নগর-২, ইজারা নিয়েছিলেন। এভাবেই রাক্ষসখালি দ্বীপটি কুলতলি, ক্যানিং-১, ক্যানিং-২, বাসন্তী, গোসাবা, হাড়োয়া, মিনাখাঁ, সন্দেশখালি-১, সন্দেশখালি-২, হাসনাবাদ ও হিঙ্গলগঞ্জ। কেবলমাত্র ভূমিসংস্কার নয়, রাজস্বের বৃদ্ধির জন্য ব্রিটিশ সরকারের রেভেনিউ বোর্ড খুব উদার শর্তে সুন্দরবনের এই জঙ্গলময় দ্বীপগুলিকে লিজ বা ইজারা দিয়েছিল। কলকাতা ও মেদিনীপুরের জানা, দিওা, আড্ডা, বেরা, মাইতি, মণ্ডল, তিয়াড়ি ইত্যাদি পদবিধারী বহু ধনী ব্যক্তি ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ সরকারের কাছ থেকে সুন্দরবনের বনময় বিভিন্ন দ্বীপ ইজারা নিয়ে প্রজাপত্তন করে চাষবাসের বন্দোবস্ত করেছিলেন। সমগ্র সুন্দরবন এলাকার আবাদ সংস্কার করতে নদিয়ার নফরচন্দ্র পালচৌধুরী (বাসন্তী এবং নফরগঞ্জ এলাকা) ও ঈশ্বরচন্দ্র পালচৌধুরী (উত্তর চব্বিশ পরগনা, সন্দেশখালি ও হিঙ্গলগঞ্জ), টাকির কালীনাথ রায়চৌধুরী (কালিয়াগঞ্জ, টাকি ও পাথরপ্রতিমার G-প্লটের কিছু অংশ), খুলনার হরিচরণ চৌধুরী (বুড়ি গোয়ালিনী, সাহেবখালি), কলকাতার মহেশচন্দ্র রায়চৌধুরী (বাসন্তী ও মহেশপুর এলাকা), উত্তরপাড়ার প্যারিমোহন দত্ত আর ন মুখার্জী (সাগরদ্বীপের কচুবেড়িয়া ও ঘোড়ামারা এলাকা), কাশিমবাজারের মহারাজা মণীন্দ্রচন্দ্র নন্দী (নামখানা এলাকা) প্রমুখ লাটদারদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তবে সুন্দরবনের লাট ও প্লট এলাকার উন্নয়নকারী অধিকাংশ জমিদার বা মধ্যস্বত্বভোগী চকদারেরা ছিলেন মেদিনীপুরের বাসিন্দা। একইভাবে রাক্ষসখালি দ্বীপটির বন সংস্কারে ব্রজমোহন তিয়াড়ি, সুখচাদ মাইতি, ভূপেন্দ্ৰনাথ দিওা, ক্ষেত্রমোহন দিওা প্রমুখ জমিদারদের নাম পাওয়া যায়।


সুন্দরবনের F-প্লট হলো ব্রজবল্লভপুর এলাকা। এই অঞ্চলের অন্যতম মৌজা ক্ষেত্রমোহনপুর। ১৩০৩-০৪ বঙ্গাব্দ নাগাদ কাঁথির ভবানীচকের অধিবাসী ক্ষেত্রমোহন দিণ্ডা ঔপনিবেশিক ইংরেজ রাক্ষসখালি তাম্রশাসন চিত্র-সৌজন্য থেকে এই তাম্রশাসন মারফত বামহিঠা গ্রাম দান করেন। গ্রহীতা ছিলেন ডোম্মন পালের মিত্র ‘রানক’ উপাধিধারী বার্ধিনসমগোত্রীয় যজুর্বেদী ব্রাহ্মণ বাসুদেব শর্মা। তাম্রলিপি পাঠে অনুমান করা যায় যে, ডোম্মন পাল দ্বাদশ শতকের শেষদিকে এই অঞ্চলের কোনো সামন্ত রাজা ছিলেন। এই তাম্রলিপিটি নিম্ন গাঙ্গেয় এলাকার একমাত্র লিখিত উপাদান। লিপিটি থেকে রাজার নাম-ধাম, রাজত্বের সময় জানা যায়। রাক্ষসখালি দ্বীপের জমিদার তিয়াড়িদের কাছারি বাড়ি এলাকার মাটি খননের সময় এই লিপিটি পাওয়া গিয়েছিল। ব্রজমোহন তিয়াড়ির পুত্র লালমোহন ১৩১৫ থেকে ১৩২০ বঙ্গাব্দ নাগাদ জঙ্গল হাসিলের সময় ডোম্মন পালের তাম্রশাসনটি আবিষ্কার করেন এবং তৎকালীন ব্রিটিশ সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের হাতে সেটি অর্পণ করেন। The Indian Historical Quarterly-র দশম সংখ্যায় (২ জুন ১৯৩৪) অধ্যাপক ডঃ বিনয়চন্দ্র সেন ও দেবপ্রসাদ ঘোষ তাম্রলিপিটির প্রতিলিপি ও ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশ করেন। আলোচ্য তাম্রলিপিটি সংস্কৃত ভাষায় হলেও প্রাচীন বাংলা হরফে লেখা—যার একটি কোণ ভাঙা এবং কোনো কোনো স্থান অস্পষ্ট। এই তাম্রলিপিটির সাইজ ১০.৫" × ৮.২৫”। এটি একটি দান-দলিল। রাজা ডোম্মন পাল তাঁর বন্ধু বাসুদেব শর্মা নামক জনৈক ব্রাহ্মণকে ১১৯৬ সালে ‘বধোমহিত’ নামে একটি গ্রাম দান করেছেন। এই লিপি থেকে পশ্চিম সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ এলাকার ওপর ঐতিহাসিক আলোকপাত ঘটেছে।


১১৯৬ সালে পূর্বখাড়িতে ডোম্মন পাল রাজত্ব করতেন। তিনি আসলে ছিলেন বাংলার সেনবংশীয় শাসক লক্ষ্মণ সেনের অধীনস্থ এক সামন্ত রাজা। সেদিক থেকে এই ধারণা যুক্তিযুক্ত যে, সুন্দরবন তখন সরাসরি সেন-শাসনের অধীনেই শাসিত হয়েছিল। কথিত রয়েছে, ডোম্মন পালের রাজধানী ছিল রাক্ষসখালি থেকে পূর্বদিকে বিস্তৃত G-প্লটের উত্তর সুরেন্দ্রগঞ্জ গ্রামে। এই গ্রামে একসময় উঁচু বালিয়াড়ি ছিল, যেখানে বর্তমানে প্রাচীন শিবমন্দির রয়েছে। রাক্ষসখালি ও G-প্লটের মধ্যে যে কার্জনক্রিক নদীটি রয়েছে, সুদূর অতীতে তা ছিল না। উত্তর সুরেন্দ্রগঞ্জ গ্রামে প্রাপ্ত প্রত্নসামগ্রী সেই সত্যতার কথাই তুলে ধরে। ডোম্মন পালের তাম্রলিপিটি থেকে জানা যায়, তিনি পূর্বখাড়ি মণ্ডলের একজন স্বাধীন রাজা ছিলেন। সুন্দরবনের সমৃদ্ধ পশ্চিমাঞ্চলকে লক্ষ্মণ সেনের তাম্রলিপিতে ‘খাড়িমন্দল' নামে উল্লেখ করা হয়েছে। এই লিপিটি থেকে জানা যায়, ডোম্মন পাল ‘মহাসামন্তাধিপতি’ ‘মহারাজাধিরাজ' উপাধি ধারণ করেছিলেন। তিনি যে দীর্ঘ সময় ধরে এখানে রাজত্ব করেছিলেন, তার প্রমাণ রাজত্বের নানা চিহ্ন রাক্ষসখালি ও G-প্লটের বিস্তীর্ণ এলাকায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। রাজা ডোম্মন পাল ছিলেন পরমশৈব। এর প্রমাণ—তাঁর রাজ্যের সর্বত্র শিবলিঙ্গ ও শিবমন্দিরের ছড়াছড়ি। যেমন G-প্লটেই রয়েছে প্রাচীন শিবমন্দিরের অস্তিত্ব। সম্ভবত একশো আটটি শিবমন্দির ছিল এখানে। তাছাড়া পাথরপ্রতিমা, বনশ্যামনগর ও রামগঙ্গা এলাকায় বহু শিবমন্দিরের অস্তিত্ব রয়েছে। নীহাররঞ্জন রায়ের মতে, তিনি শৈব হওয়া সত্ত্বেও বিষ্ণুনারায়ণের প্রতিও শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতেন। এছাড়া তাম্রলিপিটি থেকে জানা যায়, তাঁর রাজ্যভুক্ত বধোমহিত বা বামহিট্টা গ্রামের অদূরেই একটি বৌদ্ধবিহার ছিল। তাঁর সমস্ত প্রজাই ছিল নিম্ন গাঙ্গেয় এলাকার কাদাজলে মাখা নিম্নবর্গীয় পৌণ্ড্রক্ষত্রিয় ও মাহিষ্য শ্রেণির মানুষ। এই তাম্রলিপিটি এশিয়াটিক সোসাইটিতে সংরক্ষিত রয়েছে। এইসব তাম্রশাসন ও প্রত্নতত্ত্বের আবিষ্কারের ফলে সুন্দরবনের প্রাচীন ইতিহাস আজ মানুষের কাছে অল্প হলেও ছড়িয়ে পড়ছে। তবে সুন্দরবনের বিভিন্ন প্লটেই বহু প্রাচীন ইতিহাস যে লুকিয়ে রয়েছে তার প্রকাশ কেবল সময়ের অপেক্ষা। 



সহায়ক গ্রন্থ


  • নিয়োগী, লোলিত মোহন (সম্পাদক), বনতট পত্রিকা, জি-প্লট, উত্তর সুরেন্দ্রগঞ্জ, দাসপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, ১৪০৮, ১৪০৯, ১৪১২ মণ্ডল, কৃষ্ণকালী, দক্ষিণ বাংলার নতুন প্রত্নস্থল, নবচলতিকা, কলকাতা, ২০০২

  • চট্টোপাধ্যায়, সাগর, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার পুরাকীর্তি, প্রত্নতত্ত্ব ও সংগ্রহালয় অধিকার, তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগ, পশ্চিমবঙ্গ সরকার, ২০০৫

  • পাত্র, অশোক কুমার, প্রতিমা কথা কয়, পাথরপ্রতিমা ব্লকের ইতিবৃত্ত, চক্রবর্তী অ্যান্ড সন্স পাব্লিকেশন, বারুইপুর, ২০২১

Read More

আমার সাইট টি বন্ধুদের মধ্যে শেয়ার করুন। এই রকমের ধারাবাহিক আপডেট পাওয়ার জন্য আমার ইউটিউব চেন্যালটি https://www.youtube.com/@librarianeduguide সাবসক্রাইব করুন।

 

কপিলামঙ্গল কাব্যের অনুরণনেসহরইবা বাঁদনা পরব

https://mbiknowledgestore.blogspot.com/2024/02/blog-post_78.html

রাক্ষসখালি তাম্রলিপি : ভূমিদান সংক্রান্ত দলিল

https://mbiknowledgestore.blogspot.com/2024/02/blog-post_32.html

বর্তমান সময়ে শরীরচর্চার প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য

https://mbiknowledgestore.blogspot.com/2024/02/blog-post_46.html

মহিষাদল রামায়ণপুথির জননী এক রানি

https://mbiknowledgestore.blogspot.com/2024/02/blog-post_23.html

বাংলা প্রবন্ধ : মুসলিম ব্রতাচার :হিন্দু-মুসলিম সংস্কৃতি সমন্বয়ের প্রেক্ষাপট

https://mbiknowledgestore.blogspot.com/2023/12/blog-post_1.html

 

Post a Comment

0 Comments