আধুনিক কালের কবিতা ও তার সমস্যা-: আব্দুল মুসরেফ খাঁন
রবীন্দ্র প্রভাব হতে মুক্তির স্বপ্ন দেখেছিলেন কল্লোলের কবিগোষ্ঠী, আধুনিক কবিতার জনকও তাঁরাই। তাঁরা কতখানি রবীন্দ্র প্রভাব হতে মুক্ত হতে পেরেছিলেন, কতটাই বা রবীন্দ্র অনুভবকে কাজে লাগিয়েছিলেন, সে আলোচনা সরিয়ে রেখে একথা অবশ্যই বলা চলে যে তাঁরা নিজেরাই এক একজন প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠেছিলেন। পরবর্তী উত্তর সাধকেরা অনেকটাই এঁদের কাছে ঋণী। শব্দ ভাষা চিত্রকল্প নিয়ে জীবনান্দের যে নিসর্গবীক্ষা বা প্রেমেন্দ্র মিত্রের মানবতার গভীর মর্মোদঘাটন— এসবই কোন না কোন ভাবে সংক্রামিত হয়েছে উত্তরসুরীদের কবিতায়। তবু এ কালের আধুনিক কবিতা উনিশ শতকীয় আধুনিক কবিতা হতে সম্পূর্ণ পৃথক এবং তা আজকের যগে কয়েকটি লক্ষণের দ্বারা বিশিষ্ট। এ যুগের বিশেষ লক্ষণ হল হতাশা, বেকারী, বিচ্ছিন্নতাবোধ, সন্দেহ, শ্রেণী বৈষম্য, মানবতাবাদের অধঃপতন, ধর্মীয় আস্থাহীনতা, সাম্যবাদী মনোভাব, যৌনতা সম্পর্কীত বল্গাহীন উন্মাদনা অথবা বিতৃষ্মা। এ যুগের কবিরা আশাবাদী নন, সে অর্থে রোমান্টিকও নন। তাঁরা বাস্তববাদী-সে অর্থে নয়— যাতে থাকে বাস্তবভূমির কাঠিন্য। তাঁদের বাস্তব শূন্যতায় ভরা, জীবনবোধহীন বাচিক শিল্প। শূন্যকুম্ভ, হয়তো শব্দের সংহার রূপ সে কারণেই। মার্কসবাদী প্রভাবের সঙ্গে ফ্রয়েডবাদের জারণ, অবচেতনে গহীন অন্ধকারে নেমে অবদমিত কামনা বাসনার শিল্পরূপহীন অবয়বের প্রকাশ, বিকৃত যৌনতার আবরণহীন মূর্তির উন্মোচন— এসবই এ কালের কবিতাকে গ্রাস করেছে, ফলে কবিতার কবিত্ব সম্পর্কে সন্দেহ স্বাভাবিক। কেউ যদি ভুল করে বিজ্ঞাপনের শরীরী আবেদনের সঙ্গে কবিতাকে গুলিয়ে ফেলে— তাহলে খুব একটা দোষ দেওয়া যায় না। একালের কবিরা দেশী, বিদেশী, কথ্যভাষাকে যেমন সাবলীলভাবে ব্যবহার করছেন, তেমনই তাঁদের কবিতায় বিদ্রুপ, শ্লেষ, বিস্ময়, ব্যঙ্গ এবং প্রশ্ন এসে ভিড় জমিয়েছে। চিত্রকল্পে এসেছে চলমান জীবনের প্রতিচ্ছবি। আঙ্গিকের বৈচিত্র্যে কবিতায় নতুনত্ব এলেও তা ক্রমশঃই দুর্বোধ্যরূপ নিচ্ছে।
কবিতা তো শুধু কবির মানসিক আত্মতুষ্টির জন্য নয়। কবির নির্দিষ্ট পাঠক গোষ্ঠী থাকে। কবিতা রচনার সময় এইসব পাঠকদের কথাও কবিকে মনে রাখতে হয়। একেই বলা হয়েছে কবির প্রকাশধর্ম সম্পর্কে সচেতনতা। সচেতন ক্রিয়ার মধ্যে অবচেতনের আবেগ প্রকাশ পেলেও কবি প্রতিভার স্বতঃস্ফূর্তি প্রকাশধর্মের সচেতনতায় বাধাপ্রাপ্ত হয় না। সেখানে কবির শৃঙ্খলা বিন্যাসও আবেগের একটা বোঝাপড়া থাকে বলেই পাঠকের পক্ষে তা হৃদয়ঙ্গম করা কষ্টকর হয় না। কবির কাছে বিষয় বড় নয়— যে কোন বিষয় নিয়েই কবিতা রচিত হতে পারে। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ কথাটি হল কবির প্রকাশ দক্ষতা, যে দক্ষতার শিল্পী ওয়ার্ডসওয়ার্থ, ব্রাউনিং, রবীন্দ্রনাথ, জীবনানন্দ, অমিয় চক্রবর্তী প্রমুখেরা। কিন্তু একালের কবিতার কবি ও পাঠকের সহজ যোগাযোগ সুত্রটিই অনাবিকৃত থেকে গেছে। কবির প্রকাশ দক্ষতায় মরুভূমি; আবেগের স্রোতধারা মরুপথে নিঃশেষিত, শুষ্ক গিরিখাত তা অতিক্রম করার সাধ্য কজনের থাকে। তাই একালের কবিতার পাঠক সমাজ ক্রমশঃই ক্ষীয়মান। কবিতার বই ভরসা করে কোন প্রকাশক ছাপায় না—অর্থানুকূল্যে যা প্রকাশ পায়, তার অধিকাংশই ফুটপাতে শোভা পায়।
শারদীয়া দেশে (১৪০৬) শামসুর রহমানের ‘এ কেমন লুকোচুরি খেলা' কবিতায় কবিতা সুন্দরীকে ‘পলাতকা মায়াবিনী' আখ্যা দেওয়া হয়েছে। সেই মায়াবিনী কবিকে কবিতার রূপের উৎস খুঁজতে বলেছেন ‘শেয়ালের রক্ত ঝরা মুখে, নর্দমায় পড়ে থাকা ইঁদুরের মৃত দাঁতে, নুলো ভিখিরির খুব নোংরা ন্যাকড়ায়'। বলে দিতে সময় লাগে না যে এ সবই রূঢ় কঠিন বাস্তবের প্রতীক। কবি ‘মুখোশ' কবিতায় মৃত্যুতে মুখোশ পরার বাইরে চলে যেতে চেয়েছেন। তাঁর অধিকাংশ কবিতাই প্রকাশ দক্ষতায় সুস্পষ্ট। এমনই কবিতা সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এর যা সহজবোধ্য সুর সমন্বিত কিন্তু রহস্যময়। নষ্ট্যালজিয়া আছে, তবে রোমান্টিকতার ছায়ায় ঘেরা। তাঁর কবিতায় আত্মার আর্তনাদ, সত্যের অনুসন্ধান, উৎকণ্ঠা, প্রতীক্ষা ও প্রেম সবই আছে। তবে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়-এর 'কৃত্তিবাস'-এর যুব নায়ক আজ প্রৌঢ়। কবিতাতেও প্রৌঢ়ত্বের ছাপ। শারদীয়া দেশ (১৪০৬) পত্রিকার ‘কাঁচ পোকার চোখের আয়নায়' কবিতাটি আলোচনা প্রসঙ্গে প্রথমেই বলতে হয়, 'তুমি কেন জন্মেছিলে মানুষ, কবিতার এই উপসংহারের সঙ্গে কবিতার প্রথম অর্ধাংশের চিত্রকল্পের কোন সংযোগ সূত্র । সে তুলনায় সুনীল বাবুর মধ্যে মৃত্যুবোধের চিন্তা ক্রিয়াশীল টোন মারে দোলাচল' কবিতায় (শারদীয়া দেশ ১৪১০)। ‘হুল্লোড়ের হাতছানি'কে অগ্রাহ্য করে উদাসী বাউলের পাশে বসলেও শরীর সম্ভোগ চায়’ তাই দোলাচল, তাই নিদ্রাহীন শশী। নিজের কবিসত্তা সম্পর্কে সুনীল নিজেই বলেছেন, ‘কে ! স্থির কাব্যস্পর্শ আমার নেই। একজন কবির সমাজের সঙ্গে যুক্ত বা বিযুক্ত থাকার প্রশ্ন নিয়ে আমি কখনো মাথা ঘামাইনা। নারীর ভিতরে নারী, রূপের ভিতরে বিষাদ, জলের মধ্যে বিষাদ, জলের মধ্যে জল রং, গাড়ি বারান্দার নীচে উপবাসী মানুষ, ‘শ্রেণী বৈষম্যের বীভৎস প্রকাশ আমাকে যে কোন সময়ে বিচলিত করে— এই সব বিষয়ই কখনো প্রশ্নে, কখনো বিষাদ, কখনো ব্যাকুতায়, চিৎকারে আমি নানারকম ভাষায় প্রকাশের চেষ্টা করি।” এটাই কবি সুনীলের স্বীকারোক্তি। কবিতার পাঠক সম্বন্ধেও তাঁর বক্তব্য অত্যন্ত স্পষ্ট। তিনি মনে করেন যে সকলের কবিতা বোঝার দরকার নেই। সকলে কবিতা বুঝবে- এখন কবিতা লেখার অর্থই হল কবিতার পক্ষে দুর্ভাগ্যজনক।
আলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত রবীন্দ্রনাথ ও জীবনানন্দের মধ্যবর্তী এক স্বতন্ত্র পথের স্রষ্টা। তাঁর কবিসত্তা অহং চেতনায় উদ্বুদ্ধ বলেই সব কিছুকেই তিনি আত্মগত ভাষনে রূপান্তর করেন। প্রাবন্ধিক বার্ণিক রায় বলেছেন ‘(তাঁর) কবিতার শব্দ শব্দের অভিঘাতে নূতন শক্তিলাভ করে। নাগরিক সভ্যতার যান্ত্রিকতা হতে দূরে গ্রাম বাংলার অপরূপ সৌন্দর্যে তিনি বারবার ফিরে
যান। সময়, ইতিহাসও কালচেতনার সুষ্ঠ সমন্বয়ে তিনি ওয়ার্ডসওয়ার্থের মত প্রকৃতি ও মানুষের মধ্যে ঈশ্বরকে টেনে এনেছেন। ফলে তাঁর সৌন্দর্য চেতনা অমলিন, সেই সঙ্গে! কবিতার ভাষাও। তাঁর কবিতায় আশাহীনতার যন্ত্রণা, নৈরাশ্যের গ্লানি, বিদ্রোহের বহ্নিশিখা নেই, আছে আত্মবীক্ষার সংকেত। তাঁর একটি কবিতায় এই আত্মবীক্ষার ছবিটি খুব সুন্দর ভাবে ফুটে উঠেছে। জীবনের আদিম রূপও ইন্দ্রিয়াতীত প্রেমানুভূতির মধ্যে কবিসত্তা খুঁজে ফেরে, সত্তার শাশ্বত/ অবলম্বন বিভাব, নিছক হৃদয়ও ইন্দ্রিয় পার হয়ে; /এবং সেটাই দেখি হঠাৎ; বেড়ার উপর অর্ধেক ভর করে/ দাঁড়িয়ে তুমি নিরপেক্ষ ব্রহ্মা কেমন একটি অক্ষরে। অলোক রঞ্জনের সাম্প্রতিকতম একটি কবিতা ‘অকালবোধন' (শারদীয়া দেশ ১৪১০)। হ্যারি পটারের গল্পে শগুল হয়ে সঙ্গীরা তরণী ছাড়াই নদী পার হয়ে যায়, কিন্তু দেবী আসেন ‘হিমবন্তী খেয়ায়’। পাল্কিতে দেবী তুলতে কবি নারাজ। কারণ এখন স্পর্শ ও ধর্ষণ। এ কবিতায় মিথও মননের অপূর্ব সমন্বয় ঘটেছে।
এই গোষ্ঠীর একটু আগেই আছেন সুকান্ত ভট্টাচার্য, সুভাষ মুখোপাধ্যায়, মনীন্দ্র রায়, রাম বসু প্রমুখ সাম্যবাদী ভাবধারার কবিবৃন্দ। এঁদের কবিতায় শ্রেণী বৈষম্য ও তজ্জনিত প্রতিবাদ যেমন আছে, তেমনি আছে রাজনৈতিক পালাবদলের স্বাদ। সুকান্ত যে ঠিকানা দিয়েছেন। “বন্ধু আজকে বিদায়/দেখেছ উঠল যে হাওয়া ঝোড়ো/ ঠিকানা রইল/ এবার মুক্ত স্বদেশেই দেখা ক' রো,' সুভাষ মুখোপাধ্যায় সেই ঠিকানায় শতাব্দী লাঞ্ছিত আর্তের কান্না শুনেছেন, অপেক্ষা করেছেন ‘অগ্নিবর্ণ সংগ্রামের পথে প্রতীক্ষায়/ এক দ্বিতীয় বসন্ত, ...। দ্বিতীয় বসন্ত আসবেই। বিশ্বাসী মঙ্গলাচরণ তাই শান্তির মশাল তুলে ধরে বললেন 'জমি চাই, কাজ চাই, এ জীবনে বাঁচতে চাই/ শান্তিতে বাঁচার অধিকার/ শান্তি চাই আমি।” বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ভারতবর্ষের ছবি এঁকে বললেন ‘আমার ভারতবর্ষ/ পঞ্চাশ কোটি নগ্ন মানুষের/ যারা সারাদিন রৌদ্রে খাটে, সারারাত ঘুমুতে পারে না/ ক্ষুধার জ্বালায়, শীতে।”
এঁরা সকলেই সমাজবাদী, সমাজতন্ত্রে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এঁদের পাশাপাশি অরাজনৈতিক কবিতা লিখেছেন অরুণ মিত্র, নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, শঙ্খ ঘোষ এবং শক্তি চট্টোপাধ্যায়। অরুণ মিত্রের গদ্য কবিতায় পাঠক চমকিত ও আবিষ্ট হয়। অরুণকুমার সরকার এবং নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর কবিতায় রোমান্টিক স্বপ্নচারিতা থাকলেও তা বাস্তবকে অস্বীকার করেননি। একটা নির্দিষ্ট পথের দিকে তাঁরা অঙ্গুলি নির্দেশ করেছেন। The Waste Land-এ এলিয়ট যেমন শাস্তির পথ খুঁজেছেন “Datta Dayadhavam - Damyata /
Shantih-Shantih-Shantih" উপনিষদীয় বাণীর মধ্যে, তেমনি নীরেন্দ্রনাথ খুঁজে ফেরেন “কোন দিকে আছে করুণার স্নিগ্ধ ছলোছলো আলোকের নদী', কেননা তিনি দাঁড়িয়ে আছেন এক নিষ্ঠুর নদীর পাশে মৃত্যুর কাছাকাছি। তিনি যেদিকে তাকান ‘শুধু অন্ধকার, শুধু অন্ধকার।' এলিয়টের মতই কবি অন্ধকার চান না আলো চান, রোদ্দুর চান।' কিন্তু অমলকান্তি রোদ্দুর হতে পারে নি’। নীরেন্দ্রনাথ আধুনিক কবি, কিন্তু বৃহত্তর পাঠক সমাজকে তিনি কাছে টেনেছেন কবিতার প্রকা। ভঙ্গিমায়, অথচ নিৰ্ম্মম বাস্তব, ‘নিষ্ঠুর লাশকাটা ঘর', বিচ্ছিন্নতাবোধ, হতাশা, দারিদ্র্য, শঠতা, ঘৃণা—সবই আছে তাঁর কবিতায়। কিন্তু সঙ্কেতের রহস্যময় ব্যঞ্জনায়, শব্দ চরন ও চিত্রকল্পের সংবেদনে তাঁর কবিতা হৃদয়কে স্পর্শ করে। শক্তি চট্টোপাধ্যায় এর কবিতায় উঠে এসেছে এমন সব চিত্রকল্প যার ব্রেখট কথিত Utility Value পূর্ণমাত্রায় বিরাজিত। 'কার্নিশে বেড়াল কাঁদে, ‘হিম ঘুমে কাক ডেকে ওঠে, ‘ছন্নছাড়া গলির ভিতরে মানুষের ফোঁপানি, কবি আছে— কর্তব্য আছে—এক মুষ্টি ভাত নেই। আছে শুধু তাপ শয়তানের— ছিনিয়ে নেয় “প্রিয় যা কিছু সম্পদ— এ যেন ‘হেঁটোয় কাঁটা-ওপরে কাঁটা— ‘কোথায় আশ্রয় পাবে খুঁজে’– এভাবে কি বাঁচা যায়?' মাকে তিনি প্রশ্ন করেন “আমি যখন অনঙ্গ অন্ধকারের হাত দেখিনা, পা দেখিনা, তখন তোর জরায় ভর করে এ আমায় কোথায় নিয়ে এলি’? নব্য রোমান্টিক রুপেই তিনি আত্ম অনুসন্ধানে নিয়োজিত। নিজের গণ্ডির মধ্যে অচল থেকে প্রশ্ন করেন ‘যেতে পারি, কিন্তু কেন যাবো'। আর্থ সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবেশে জীবনের অসামঞ্জস্যতা মানসিক ভারসাম্যহীনতা, মনের অবচেতনে বিচ্ছিন্ন বিক্ষিপ্ততা হতে কবি মুক্তি চান ‘চাঁদ ডাকে আয় আয় আয়/ চিতা ডাকে আয় আয় আয়’। কবিতায় প্রতীক ব্যবহার করেছেন অজস্র - যেমন চাঁদও চিতা জীবন মৃত্যুর প্রতীক হয়ে উঠেছে। বৃষ্টির চিত্রকল্পে জীবনের জটিল ঘূর্ণীর রূপ প্রতিফলিত। শক্তির কবিতা একদিকে যেমন বিদ্রোহাত্মক, অন্যদিকে তেমনি নিসর্গ বীক্ষায় লীন। কবিতায় গীতিময়তা, শব্দ নৈপুণ্য, ছন্দস্পন্দ, চিত্রবহুলতা আধুনিক কবিতার দুর্বোধ্যতাকে খণ্ড করেছে। তিনি নিঃসন্দেহে রবীন্দ্রনাথ ও জীবনানন্দের উত্তর সূরী।
যা আছে শক্তি চট্টোপাধ্যায় বা নীরেন্দ্রনাথের কবিতায় তা কি অধুনা এ কালের কবিতায় নেই? কি সে ম্যাজিক যার ব্যতিরেকে একালের কবিতা পাঠকের কাছে ভয় বা বিস্ময়ের বস্তু হয়ে ওঠে? এ প্রশ্নের একটাই উত্তর এবং তা হল কবি ও পাঠকের মধ্যে অনতিক্রমনীয় কামউনিকেশান গ্যাপ— যার মূল ভিত্তি দুর্বোধ্যতা, দুরূহতা, স্বেচ্ছাচারী প্রতীক ব্যবহার, সুর ও তালের বিনষ্টি। সুধীন্দ্রনাথ অথবা বিষ্ণু দের কবিতাও দুর্বোধ্য, অনেকাংশে দুরূহ। কিন্তু পাঠকের পক্ষে প্রতিশব্দের অর্থ না জানলেও কবিতার সহজবোধ্যতার হানি ঘটেনা। এই সহজবোধ্যতা ঘটেছে সুর ও ধ্বনি মাধুর্যের জন্যে—যা 'কানের ভিতর দিয়া মরমে' স্পর্শ করে। কিন্তু এ কালের কবিতায় যেন দুর্বোধ্য বা দুরূহ হওয়াটাই আধুনিকতার লক্ষণ। জয় গোস্বামীর ক্রীতদাস কবিতাটিকে যদি বেছে নেওয়া যায়, তবে প্রথমেই বলতে হয় এটি কি? কবিতা না ধাঁধাঁ ?
“ঘাড় ধরে তোমার কাছ থেকে ভালবাসা নেওয়া হবে/ যখন নদীতে নদীতে আর বইতে চাইবেনা জল/ কলম নিজেই ফেটে পড়বে রাগে।'
এখানে নদী, জল, কলম— এ সবই প্রতীক। কিন্তু এই প্রতীক ভেঙে ব্যাখ্যা করা কি খুব সোজা ব্যাপার। কবিতো ব্যাসকূট লিখছেন না, লিখছেন কবিতা।
‘কেশবং পতিতং দৃষ্টা দ্রোণ হাস্যমুপাগতম/ রোদন্তি পাণ্ডবাঃ সর্বে হা কেশব হা কেশব’ এটি একটি ব্যাসকুট যার বাইরের ও ভিতরের অর্থ ভিন্নার্থক। এর অর্ন্তনিহিত অর্থ যাই হোক না কেন, বাইরের অর্থটি প্রাঞ্জল। কিন্তু এ কালের কবিতায় ভিতর ও বাইরের কোন অর্থই বোধগম্য হয় না। রবীন্দ্রনাথের 'সাগরিকা' কবিতার বালি দ্বীপ বনাম ভারতীয় সংস্কৃতি ভিতরের অর্থ হলেও রাজকুমার ও রাজকুমারীর রোমান্টিক প্রণয়াবেদন বুঝতে অসুবিধা হয় না। ছন্দস্পন্দন ও ধ্বনি মাধুর্য তো উপরি পাওনা।
যৌনতা সম্পর্কে আধুনিক কবিরা দ্বিধাহীন। শিবাশিষ মুখোপাধ্যায় অবলীলায় লেখেন, “সেদিন থেকেই জল পড়ে পাতা নড়ে/ স্নাত দাঁড়াত অফিস ছুটির পরে তিনমাসে তারা একবার করে শুত। সম্পর্কটি বিবাহ বর্হিভূত।”
যৌনতা আছে বুদ্ধদেব বসুর 'বন্দীর বন্দনায়'। ‘বাসনার বক্ষোমাঝে কেঁদে মরে ক্ষুধিত যৌবন, দুর্দম বেদনা তার স্ফুটনের আগ্রহে অধীর’
কিন্তু কামনার পরিতৃপ্তি যে জীবনের চরম লক্ষ্য নয় এটাও কবি বুঝিয়েছেন। তসলিমা নাসরিন এর নারীবাদী কবিতা আলোচনার বাইরে রেখেও বলা যায় যৌনতার স্ফূরণ নিন্দনীয় নয়, তবে কবিতায় তা শৈল্পিক আবেদন নির্ভর হতে হবে।
নিজের তৃপ্তির জন্য কেউ কবিতা লেখেন না। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন ‘গাহিতে হবে দুই জনে’, এই দুইজন, হল কবি ও পাঠক। পাঠককে একালের কবিতা বোঝার জন্য যেমন ইতিবাচক ও সদর্থক যোগ্যতা সম্পন্ন হতে হবে, তেমনি কবিকেও পাঠকদের কথা ভাবতে হবে। ‘সকলেই কবি নয়, কেউ কেউ কবি'। তেমনি সকলেই পাঠক নয়, পাঠকের সংখ্যায় সীমাবদ্ধতা আছে।
গদ্য ও পদ্যের চিরাচরিত বিবাদকে খণ্ডন করে রবীন্দ্রনাথ যে চেষ্টা করেছিলেন তা মূলতঃ মহাপয়ার যা অন্ত্যমিলহীন। কাব্যিক ভাবকে বাদ দিয়ে কবিতা লেখা সম্ভব নয়, যদিও সুভাষ মুখোপাধ্যায় নীরেন্দ্র চক্রবর্তী এবং শক্তি চট্টোপাধ্যায় তা করে দেখিয়েছেন। একালের কবিতায় পদ্য ছন্দ নেই, স্তবক ও পংক্তি বিন্যাস অবশ্যই আছে। দার্শনিকতাও আছে তবে তা রাবীন্দ্রিক বা জীবনানন্দীয় নয়। একালের কবিরা কেউ কেউ আবার পুরানো ছন্দে ফিরে আসতে চাইছেন। অক্ষর বৃত্ত স্বরবৃত্ত সবই তাঁরা ব্যবহার করছেন, তবে সেগুলি আঙ্গিক বৈচিত্র্যের নতুনত্বের প্রয়াসী। অস্কার ওয়াইন্ড এর কবিতা সম্পর্কে যেমন বলা হয় "his best poetry was in prose',
বঙ্কিম ও রবীন্দ্রনাথের গদ্য ও তেমনি কাব্যিক ভাবাপন্ন। আধুনিক জটিলতাপূর্ণ জীবনদর্শনের অনুভূতিও ভাব পদ্য অপেক্ষা গদ্য কাব্যেই বেশি উপযোগী বলে মনে হয়। একালের কবিতার গদ্য আঙ্গিক যথাযথ হতে পারে, যদি তা প্রকাশ দক্ষতায় উত্তীর্ণ হয়।
৪। জাক দেরিদা ও তাঁর বিনির্মাণবাদী তত্ত্ব (Deconstructive Theory) সভ্যতার ঊষাকাল হতে সাম্প্রতিক কাল পর্যন্ত মানব সভ্যতা এক অবিচ্ছিন্ন ধারায় প্রবাহিত। সভ্যতার একটি স্তর যেখানে সমাপ্ত হয়েছে, পরবর্তী স্তরের সূচনা হয়েছে মোটামুটি সেই বিন্দু থেকেই। স্রোতধারা যেমন সাগরের দিকে ধাবিত হয়, সভ্যতার স্রোতও তেমনি একটি নির্দিষ্ট শীর্ষবিন্দুর প্রতি ধাবিত হয়েছে, যদিও এই শীর্ষবিন্দু সতত পরিবর্তনশীল যা অনেকটাই মরুভূমির মরীচিকার মত বা দিগন্তরেখার মত। দিগন্তরেখার অবস্থান লক্ষ্য করে নির্দিষ্ট বিন্দুতে আসার পরেও দিগন্তরেখা দিগন্তেই উদ্ভাসিত হয়। যাত্রা পথে সম্পর স্রোতধারা বিভিন্ন বাঁকে মোড় নেয়, বিভিন্ন নদীর স্রোত মূল ধারার সঙ্গে কি হয়ে আকৃতিকে বিশাল করে তোলে। সর্বত্রই এক নিয়মের শৃঙ্খলা বজায় থাকে। এটা শৃঙ্খলায় জীর্ণ পাতা খসে যায়, নতুলের আবির্ভাব ঘটে, দিনের শেষে রাত্রি আসে, রাত্রের অবসান সূচীত হয় ঊষার আগমনে। পৃথিবী সূর্যের চার দিকে ঘোরে নিজেকে আবর্ত করে। অঙ্কের নিয়মে মাস যায়, বৎসরও পার হয়। সর্বত্রই নিয়ম, সর্বত্রই শৃঙ্খলা। বিজ্ঞান যে উন্নত স্তরের অভিমুখী সেখানেও চলে নিয়মের খেলা। প্রোটন, নিউট্রন, ইলেকট্রন সবই এক নিয়মের মধ্যে অবস্থিত। প্রকৃতির রাজ্যে এই নিয়মের সার্বভৌমত্ব লক্ষ্য করেই মানব সভ্যতার বিভিন্ন স্তরে এসেছে নিয়মের বন্ধন। সমাজ গড়ে উঠেছে— তাও নিয়মের বন্ধনে। শিল্প, সংস্কৃতি বই নিয়মের শৃঙ্খলে আবদ্ধ। চিত্রকরের চিত্রে যে রীতি ও নিয়মের আধিক্য, সঙ্গীতের মধ্যেও তাই। আবার সাহিত্যেও সেই নিয়মের ব্যতিক্রম হওয়ায় উপায় নেই, যদি হয়, সমালোচকের তীব্র ভুকটি অন্ধকারে ঠেলে দেয় কবি বা সাহিত্যিকের অন্তব (প্রণাকে। আবার সমালোচকও স্বাধীন নয়— তাঁকেও নিয়ম মেনে সমালোচনা করতে হয়।
প্রচলিত সামাজিক নিয়ম সমাজ পরিবর্তনের সঙ্গে বদলে গেলেও নতুন নিয়মের দ্বারা সমাজ শাসিত হয়। প্রাকৃতিক নিয়মের কোন পরিবর্তন হয় না, কিন্তু মানবজীবন সম্পর্কিত সব নিয়মেরই পরিবর্তন ঘটে। এটা ঘটে কেননা মানব জীবন সম্পর্কিত যাবতীয় বিষয়ই সতত পরিবর্তনশীল। যুগের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের জীবনযাত্রা, সমাজ, আচার আচরণ আর্থসামাজিক বা রাজনৈতিক কাঠামোরও পরিবর্তন ঘটে। এই নতুন পরিবর্তন পুরাতনকে একেবারে অস্বীকার করেনা, যা কিছু ভাল, সৎ এবং চিরন্তন তা থেকে যায়। কোন কোন ক্ষেত্রে পুরাতনের সংশ্লেষণের দ্বারা নতুনের কাঠামো গড়ে ওঠে। সুতরাং প্রাকৃতিক বিষয় ব্যতীত অন্য সব কিছুই মানুষ যুগ বা সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে নির্মাণ করেছে— যাকে এক কথায় বলা যায় সভ্যতার অপর নাম নির্মাণ।
ইংরাজী সাহিত্যের ক্ষেত্রে জিওফ্রে চসার ফরাসী ও ইটালীর যুগপৎ সাহিত্য উপাদান ও রীতিনীতি গ্রহণ করেছেন। 'ক্যান্টার বিউরী টেলস'-এ তাঁর নিজস্ব স্বকীয়তার প্রকাশ ঘটেছে। সাহিত্যের ইতিহাসে এটি একটি নির্মাণ। আবার এলিজাবেথীয় যুগে স্পেনসার টিউডর যুগের বিভিন্ন ভাব ও আবেগের গতি প্রকৃতিকে চিহ্নিত করে, রেনেশাঁ যুগের ল্যাটিন, ফরাসী ও ইতালীয় সাহিত্যের রূপ, আঙ্গিক, ছন্দ ও প্রকরণকে আত্তীকরণ করে, ক্লাসিক্যাল রীতির সঙ্গে আধুনিক ধর্ম-বিজ্ঞান, দর্শন ও সমাজ অনুশাসনের সমন্বয় ঘটিয়ে এবং ইংরাজী সাহিত্যের চসার হতে সমকাল পর্যন্ত জাতীয় ধ্যান ধারণা ভাব ও আবেগ, সংহতি ও সংস্কৃতিকে সংশ্লেষণ পদ্ধতিতে যে বর্ণ-রূপ ও গন্ধের সাম্য রচনা করলেন, সেই ‘ফেয়ারী কুইন’ মানব সভ্যতার আর এক নির্মাণ। মিণ্টনের ‘প্যারাডাইস লষ্ট', শেক্সপীয়রের ট্রাজেডী, ওয়ার্ডসওয়ার্থ, কোলরিজ, শেলী, কীটস এবং বায়রণ প্রমুখ রোমান্টিক কবিদের অবদান ব্রাউনিং ও টেলিসনের কবিকীর্তি, ইয়েটস ও এলিয়টের নবতন্ত্রী সাহিত্যিক রচনা-এ সবই একেকটি নির্মাণ যার উপর ভর করে ইংরাজী কাব্য কবিতার বিশাল প্রাসাদ দুর্গের মতই অভেদ্য। উপন্যালের ক্ষেত্রে ডিকেন্স, স্কট, লরেন্স, ভার্জিনিয়া উলফ, জেমস জয়েস এবং নাটকের ক্ষেত্রে বার্নার্ডশ, গলসওযদি ইংরাজী সাহিত্যকে নির্মাণ শিল্পের সুউচ্চ শৃঙ্গে স্থাপন করেছেন। বাংলা সাহিত্যে নবযুগ এনেছেন মধুসূদন—বাংলা তথা ভারতীয় ঐতিহ্যকে অস্বীকার করে নয়, পরম্পরা অক্ষুণ্ণ রেখে তাঁর নির্মাণ নব যুগের স্বমহিমায় উন্নীত হয়েছে। রবীন্দ্রনাথ বাংলা সাহিত্যকে পুষ্প পত্রে সুশোভিত করে বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দিয়েছেন। সাহিত্য ক্ষেত্রে যে কথা সত্য অপর সকল মানস শিল্প ক্ষেত্রেও তা সত্য। এই ভাবেই অতীত পরম্পরাকে স্মরণে রেশে শিল্পী যুগোপযোগী নির্মাণ কর্মে ব্রতী হন। সভ্যতার দিগন্ত এই ভাবেই দুর হতে দূরে সরে যায় বলেই মানব প্রচেষ্টা কোন সময়েই থেমে নেই। এ এক অবিচ্ছিন্ন ও অব্যাহত নির্মাণ প্রচেষ্টা।
মানব নির্মিতি যে ভাবে চলে, তার কিছু বিধিবদ্ধতা আছে রীতি নীতি আছে। এই বিধিবদ্ধতা ভাঙার প্রচেষ্টাও মানব নির্মিতির মতই অব্যাহত, তবে তা অবিচ্ছিন্ন নয়। কাব্য বা কবিতার ক্ষেত্রে প্রতীক ব্যবহারের যে আন্দোলন ম্যালার্মে, বোদলেয়ার প্রমুখেরা শুরু করেছিলেন তা সাময়িক ভাবে বিদ্রোহাত্মক হলেও কাব্য ক্ষেত্রে তা স্থায়ী আসন গ্রহণ করেছে কারণ এর মধ্যে যে রীতিনীতি ও নিয়ম বর্তমান তা ধিবদ্ধতার গণ্ডীভূত হতে বাধা পায় নি। এমনিভাবেই ইমেজিস্ম ও সুররিয়্যালিজম্ আন্দোলন কাব্যের রীতিনীতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিয়েছে বা ডাডাইজম্ এর মত ব্যর্থ হয়ে মরুপথে পথ হারায়নি। ক্লাসিক রীতি বিরোধী রোমান্টিকতা এবং রোমান্টিকতা বিরোধী বাস্তবতা নিয়মের পথে অগ্রসর হয়েছিল বলেই, সমালোচনা সাহিত্য তাদের যুক্তির সারবত্তাকে নেনে নিয়েছে। সমালোচনা সূত্র ও সন্ধান প্রক্রিয়াও পরিবর্তিত হয়েছে।
পরিবর্তন যুগের ধর্ম। যে কোন পরিবর্তন তা যদি ধ্বংসসাধক না হয়, তবে তা স্বাগত । শুধু সাহিত্য ক্ষেত্রে নয়, যে কোন মানব প্রচেষ্টার ক্ষেত্রেও একথা সত্য। পূরাতনকে সরিয়ে নতুনের আবির্ভাব সভ্যতাকে গতিশীল করে। আজকের বিপ্লব, কাল নতুনতর পদ্ধতি রূপে পরিণত হবে।
এই ঙ্গেই জাক দেরিদার “বিনির্মাণ তত্ত্বকে আলোচনা করা যেতে পারে। আলজিয়ার্সের এক ইহুদি পরিবারের জাক দেরিদা বিশ শতকের অন্যতম প্রধান তাত্ত্বিক। তাঁর রচিত বহু গ্রন্থেই এই তত্ত্বের জাল প্রলম্বিত থাকলেও তাঁর 'Specter of Marx' গ্রন্থে বিবর্তনবাদী মনোভাব সম্পন্ন বিনির্মাণ পদ্ধতির নতুন দিগন্ত সূচীত হয়েছে। তিনি এই গ্রন্থে শেক্সপীয়রের ‘হ্যামলেট'-এর কিছু তাৎপর্যময় অংশকে পাঠকৃতি রূপে চিহ্নিত করে সাহিত্যও দর্শনের যুগলবন্দী রূপকে অন্তবয়নের মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন। এ এক ধরণের পরমাণুবিশ্লেষণের মতই জটিল। এখানে দর্শন হয়ে ওঠে বহুমাত্রিক। অর্থের দ্যোতনা অতীতের বর্তমানের সঙ্গে প্রকৃত বর্তমানকে মিলিয়ে নিয়ে ভবিষ্যৎ বর্তমানের দিকে ধাবিত হয়—প্রায় অনেকটাই গোলক ধাঁধাঁর মত।
বিনির্মাণ তত্ত্বের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে দেরিদা পাঠকৃতিকে ঘেরাটোপে আবদ্ধ করতে চেয়েছেন। বলেছেন ‘পাঠকৃতির বাইরে কিছু নেই'। আবার তিনি এও বলেছেন যে এই তত্ত্ব পাঠকৃতির পাঠ বিশ্লেষণ বা তার অনুধাবনের পদ্ধতি নয়। প্রচলিত সমালোচনা সাহিত্য যে ভাবে শব্দ অর্থ-অলঙ্কারের বেড়া ভেদ করে রচয়িতার মানসজগতে অবতরণ করে, বিনির্মাণ পদ্ধতি যে সব অনুকরণ না করে নবীনতর উদ্ভাসনের কথা বলে। সাহিত্যক্ষেত্রে অভিব্যক্তির ধারণা যুগে যুগে পাল্টে যায়। মিন্টনের ‘প্যারাডাইস লষ্ট' এর মধ্যে রেনেসাঁ হিউম্যানিজম, শেলীর ‘প্রমেথিয়াস আনবাউণ্ড এ মানবাত্মার মুক্তির আশ্বাস, বাংলা সাহিত্যের চর্যাপদে সমাজ বীক্ষা এসবই আধুনিকতার ফসল। সৃষ্টিমুখর সাহিত্যকে কেন্দ্র করে যুগে যুগে সমালোচনা সাহিত্য যুগের প্রেক্ষিতকে স্মরণে রেখে স্বাভাবিক ভাবেই পরিবর্তিত হয়। কিন্তু বিনির্মাণ পদ্ধতি নবীন উদ্ভাসনের ধারায় এমন একটা পর্যায়ে পৌঁছে যায় যেখানে প্রচলিত সমালোচনা পদ্ধতি, সাহিত্যিক বাচন, জীবনদর্শন, সমাজ বীক্ষা— সব কিছুই অবান্তর হয়ে গিয়ে এক জটিল আবর্তের মুখোমুখি হয়ে পড়ে বলে অনেকেই মনে করেন। অথচ দেরিদা মনে করেন যে বিনির্মাণ পদ্ধতি নবীনতর উদ্ভাসনের দ্বারা পাঠকৃতির তাৎপর্যকে বিশাল প্রেক্ষাপটে এনে দেয়।
দেরিদার বিনির্মাণ তত্ত্ব সম্বন্ধে যে যে প্রনগুলি অত্যন্ত প্রকট হয়ে ওঠে তার মধ্যে প্রথম হল বিনির্মাণ পদ্ধতি কি সাহিত্য সমালোচনার ক্রিয়াত্মক প্রকাশকে অস্বীকার করে? দ্বিতীয়ত এই পদ্ধতি কি সম্পূর্ণ অপ্রাতিষ্ঠানিক চেতনা সমৃদ্ধ? তৃতীয়তঃ এই পদ্ধতি কি সকল প্রকার প্রচলিত দার্শনিক প্রতিবেদনের বিরোধী? চতুর্থত বিনির্মাণ পদ্ধতিতে অধিকতর গুরুত্বপূর্ণকে লেখক না পাঠক ? সমালোচনা সাহিত্য প্রতিষ্ঠিত বিধিনিয়মের বাইরে যেতে পারে না। তাদের চিন্তনশক্তি সেকারণেই বিধি নিয়মের ঘেরাটোপে আবদ্ধ। সংস্কার ও সংস্কৃতি, চেতনা ও অবচেতনা, বাচন ও অনুভূতি এ সবেরই ধারণা মননশীল বুদ্ধিজীবীদের মানসিক ফসল—এ সবই নির্মাণ। সমালোচককে এই নির্মাণের পথ ধরেই এগুতে হয়। বিপরীত সম্ভাবনার তাড়না তার মনে সংকট ও সংঘর্ষের পরিসরকে যতই ত্বরান্বিত করুক না কেন প্রাতিষ্ঠানিক বিধিবদ্ধতা হতে দূরে যাওয়া তার পক্ষে সম্ভব নয়। ক্রিয়াত্মক সমালোচনা দেরিদার মতে এক ধরণের পেশাদারী বিদ্যাচর্চা। বর্তমান চিন্তন ও লিখন প্রক্রিয়ায় পরিমিতির প্রতি একটা আনুগত্য থেকেই যায় এবং এর সঙ্গে যুক্ত হয় ধারণাজাত অভ্যাসের আনুগত্য। দেরিদা একথা কোনভাবেই স্বীকার করতে চান না যে বিধিবদ্ধ সমালোচনা সাহিত্যও ইতি-নেতি, ঔচিত্য-অনৌচিত্য বিধায়ে বিভিন্ন শ্রেণীতে বিভক্ত হয়ে ক্রিয়াত্মক। মিডলটন মারি বলেছেন,
"If it gives this delight, Criticism is Creative, for it
enables the reader to discover beauties and significances which he had not seen
or to see those which he had himself glimpsed in a new and revealing
light."
ক্রিয়াত্মক সমালোচনা যে বিশ্লেষণাত্মক, মনো বিশ্লেষণাত্মক, ঐতিহাসিক, ব্যক্তিগত, দর্শনাত্মক, তুলনামূলক, পরিসংখ্যানগত বা মার্কসবাদী, ইমপ্রেশনিষ্টবাদী অথবা বস্তুগত বা পাঠকেন্দ্রিক হতে পারে— একথা দেরিদা কিছুতেই মানতে চান নি। তিনি চেয়েছেন তাঁর কাম্য বিশ্লেষণের সার্বভৌমত্ব ও ভাষ্যের স্বাধীনতা এর জন্য তিনি প্রচলিত সব কিছুকেই অস্বীকার করেছেন। চেয়েছেন সকল প্রকার বাধ্য বাধকতার অনুপস্থিতি। বর্জন করেছেন ধারণা উপজাত অভ্যাসের আনুগত্য ও যুক্তির অন্ধবিন্দু। দেরিদা মনে করেন যে তাঁর বিনির্মাণ তত্ত্ব সম্পূর্ণরূপে অপ্রাতিষ্ঠানিক, 'each act of reading the text is a
preface to the next.” পাঠকৃতিতে যা কিছু আপাত গৌণ, যে নৈঃশব্দ সম্পর্কে লেখকের বিস্মৃতি বর্তমান, বিনির্মাণবাদী পাঠক সেই সব প্রান্তিক সমস্যাকে মনযোগের ক্ষেত্রে টেনে নিয়ে যান, পাঠকৃতি হয়ে ওঠে অন্তহীন। বিনির্মাণ নির্মাণকে ধ্বংস করে এবং যথা প্রাপ্ত নির্মিতিকে ধ্বংস করার পরই শুরু হয় পুননির্মাণ। আবার ধ্বংস আবার পুননির্মাণ। এই ভাবে সমগ্রতাকে ভাঙতে ভাঙতে ও নতুন ভাবে গড়তে গড়তে একটা প্রতীতিবোধ অনিবার্য হয়ে ওঠে এবং এই প্রতীতি হল সামগ্রিক দ্যোতনার কিছু স্মৃতিবাহী পরস্পর বিচ্ছিন্ন কিছু পরম্পরা। এই অস্থির প্রক্রিয়াই আসলে বিনির্মাণ। দেরিদা প্রাতিষ্ঠানিক সব রকম বিধিবদ্ধতা অস্বীকার করে বস্তুসত্তাকে নিরবচ্ছিন্ন জিজ্ঞাসার বিষয় করে তুলেছেন তাঁর তত্ত্বে। এখানে চুড়ান্ত বলে কিছু নেই; এ এক নিরন্তর ঘটমান ধ্বংসের সমষ্টি, আবার সেই সঙ্গে ধ্বংসের পর পুননির্মাণে বদ্ধপরিকর। বিশ্বে যেমন সমাপ্তি বলে কিছু নেই, ধ্বংস ও পুননির্মাণের পর্যায়ে বিশ্ব নিরন্তর অগ্রসরমান দেরিদার বিনির্মাণ তত্ত্বও তেমনি।
দেরিদা সম্পর্কে সাহিত্য তাত্ত্বিকদের মতই দার্শনিকেরাও নীরব ঔদাসীন্য দেখিয়েছেন, অসহিষ্ণু প্রত্যাখ্যানও করেছেন কেউ কেউ। তাঁরা অনেকেই বিনির্মাণ পদ্ধতিকে শৃঙ্খলা বিবর্জিত এক কুহক বলে ভেবেছেন। তাঁদের মতে এ এক নান্দনিক সন্ত্রাস। একমাত্র কালপ্রবাহ ব্যতীত বিশ্বের সব কিছুরই নশ্বরতা স্বীকৃত। সকল বিষয়েরই কোথাও না কোথাও একটা সীমা টানতে হয়। কিন্তু দেরিদার বিনির্মাণ তত্ত্ব অন্তহীনতার প্রতীক। লব্ধপ্রতিষ্ঠ দার্শনিকেরা যাই বলুন, দেরিদার তত্ত্ব কিন্তু দর্শন নিরোধী নয়, হয়তো তা প্রচলিত পদ্ধতির বাইরে। বিনির্মাণ তত্ত্বে তিনি অংশের পরম্পা গ্রথিত করে সমগ্রতার উপলব্ধিতে পৌঁছেছেন। ভারতীয় অধ্যাত্ম শাস্ত্রে এর প্রমাণ আছে, শঙ্করাচার্যের অদ্বৈতবাদের মত খণ্ডন করে রামানুজাচার্য যে বিশিষ্টা দ্বৈতবাদ প্রণয়ন করেন, নিম্বার্কাচার্য তাকেই আরও বিশ্লেষণ করে দ্বৈতাদ্বৈতবাদ এবং শ্রী গৌরাঙ্গের অচিন্ত্যভেদাভেদ তত্ত্ব প্রণীত হয়। যদিও এই দর্শনের ধারা বেদান্তানুসারী, তবু অচিন্ত্য ভেদাভেদ বা দ্বৈতাদ্বৈতবাদকে অনুসরণ করে বেদাস্তের সমগ্রতায় পৌঁছানো যায়। দেরিদার বিনির্মাণবাদের সঙ্গে এই দর্শনের পার্থক্যটা বিধিবধ্য কাঠামো নিয়ে। প্রচলিত দর্শন বিধিবন্ধনের দ্বারা আবর্তিত হয়; কিন্তু দেরিদা সেই কাঠামোটাকেই ধ্বংস করতে চান। দার্শনিকদের দ্বিধা সেখানেই। তাদের সংশয় হল প্রথাসিদ্ধ সমালোচনাকে দূরে রেখে পূর্ববর্তী বা পরবর্তী, সংলগ্ন বা দূরবর্তী কোন অস্তিত্বের সঙ্গে সম্পর্ক সূত্রে কিছুই নির্ধারিত হয় না; কোন সত্যে উপনীত হওয়াও যায় না। নির্বিশেষ হতে বিশেষে উপনীত হওয়ার প্রক্রিয়া তো প্রথাসিদ্ধ দর্শনে স্বীকৃত।
বিনির্মাণ মূলতঃ চেতনাবোধ হতে সঞ্চারিত। এটা কোন আন্দোলনের নাম না হলেও ফ্রান্স ও আমেরিকায় তা আন্দোলনে পর্যবসিত। বিশ্বের মনন জগতে বিনির্মাণ একটি আন্তর্জাতিক পরাচেতনার নাম যার অর্থ হল বৌদ্ধিক বিধিবদ্ধতার বিরুদ্ধে ক্ষোত ও সংশয় জনিত কারণে চিন্তনের স্বাধীনতার সম্প্রসারণ। বিশ্লেষণাত্মক প্রক্রিয়ায় সাহিত্য ও দর্শন অঙ্গাঙ্গীভাবে যুক্ত হয়ে পড়ে। ইতিপূর্বে যে চেতনার কথা বলা হয়েছে তার উপস্থিতি নেতিবাদী হবে। এই নেতিবাদই শূন্যতার দিক নির্ণায়ক। তাই নির্মাণের ধ্বংসের পরেই বিনির্মাণ প্রক্রিয়া শুরু হয়। মুলতঃ নির্দিষ্ট পাঠকৃতিতে বাহ্যভাবে যা উপস্থিত করা হয় তার প্রতিটি শব্দই বাহ্য অর্থের দ্যোতনা পরিহার করে অন্য কোন অপরতার উপলব্ধিকে চিহ্নায়িত করে।
দায়িত্ব তাই পাঠকের। কোন পাঠকৃতিতে পাঠক সকল প্রকার বুদ্ধতাকে অতিক্রম করে কি ভাবে নতুন পথ সৃষ্টি করবেন বা কোন উপকরণ তৈরি করে নেবেন তা পূর্ব হতে বলা যায় না। প্রয়োগের মধ্য দিয়েই এই তত্ত্বের প্রসারণশীল সম্ভাবনার দরজা খুলে যায়। মোটামুটি কবিতার ক্ষেত্রে বিনির্মাণের অর্থ দাঁড়ায় শাব্দিক পরিসরের অন্তবর্তী স্তর বিন্যাসের ক্রমকে উল্টে দেওয়া। কিন্তু পাঠকৃতির প্রকৃতি সর্বত্র এক নয়। দেরিদা শিষ্য মিলের লন্য করেছেন যে সার্থক পাঠকৃতি মাত্রেরই এমন কিছু অংশ থাকে যা রহস্যপূর্ণ এবং ব্যাসফুট জাতীয়। মিলের বিনির্মানে একটি নতুন মাত্রা সংযোজন করে বললেন যে পাঠকৃতির চক্রব্যূহে প্রবেশ করে তা থেকে বেরিয়ে আসার পথ না পাওয়ায় পাঠকের মনে অসমাপ্তির বোধের উদ্রেক হওয়া খুবই স্বাভাবিক। সংবেদনশীল পাঠককে সেই ব্যর্থতার উপলব্ধিকে পুনরাবিষ্কার ও পুন সক্রিয় করে তুলতে হবে। মূল তরঙ্গ হতে বিচ্ছুরিত পরবর্তী সমস্ত তরঙ্গমালাই এক্ষেত্রে নাথব প্রতিকল্প, কারণ বিনির্মাণ প্রক্রিয়া যতই প্রসারিত হয়, ততই তার মধ্যে ব্যাসকূট বা চক্রব্যুহের অনুবিশ্ব থেকেই যায়। এ প্রসঙ্গে গেরাল্ড গ্রাফ বলেছেন যে প্রতিবন্ধক পূর্ণ বিরোধিতার প্রসঙ্গ পেরিয়ে যাওয়ার অব্যাহত চেষ্টা করে যাচ্ছেন সাহিত্য তাত্ত্বকেরা। এ বিষয়ে তাঁরা পাঠকৃতির স্বরূপ ও তাৎপর্য এবং প্রতীতি বিষয়কে অনুসন্ধানের বিষয় করে তুলেছেন। বিনির্মিত সমালোচনাকে দার্শনিক ক্রিয়ার পেশা হচ্ছে যাতে প্রকৃত সত্যে উপনীত হওয়া যায়। গ্রাফ এ বিষয়ে সরাসরি বলেছেন, “That text are not, after all,
autonomous and self contained, that the meaning of any text in it self depends
for its comprehension on other texts and textualized frames of reference".
দেরিদার বিনির্মাণ পদ্ধতি সাহিত্য, রাজনীতি, দর্শা ইত্যাদি মননশীল বিষয় সমুহের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। বিনির্মাণ মূলতঃ পাঠকৃতি নির্ভর এবং সেই পাঠকৃতি হতে বিনির্মাণের সমুদয় দায়িত্ব পাঠকের। তাই বিনির্মাণবাদী পাঠককে বিনির্মাণের প্রয়োগবাদ সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতন ও ওয়াকীবহাল হতেই হয়। তাই বিনির্মাণবাদ সাধারণ পাঠকের অনধিগম্য। সাধারণ পাঠক যাঁরা অবকাশ যাপনের জন্য সাহিত্যপাঠ করে থাকেন, বিনির্মাণ প্রয়োগবাদে তাঁরা অংশগ্রহণ করতে পারে না। এতত্ত্ব তাঁদের কাছেই সমধিক প্রযোজ্য যাঁরা তাত্ত্বিক। সাহিত্য তাত্ত্বিকেরা বিনির্মাণ পদ্ধতির প্রয়োগে ভাষ্যের নব নব দিগন্ত সূচীত করতে পারেন, কিন্তু পাঠকৃতির বাইরে তাঁরা যেতে পারেন না, অর্থাৎ ধ্বংস ও পুননির্মাণ করার সময় তাঁদের সচেতনতা সীমাবদ্ধতার মধ্যে ঘোরাফেরা করবেই এবং বিনির্মাণের সম্প্রসারণ প্রক্রিয়ায় এক সময় ছেদ আসবেই। চিন্তার ক্ষেত্রে পরস্পর বিচ্ছিন্ন দ্বীপপুঞ্জের অবস্থান নির্ণয়, ও তাদের মধ্যে সংযোগসেতু না করাই বিনির্মাণের লক্ষ্য। ভাষা মধ্যস্থিত নির্দিষ্ট বিন্দু হতে অনির্দেশ্য বিস্তারের দিকে যেতে যেতে ভাষা মধ্যস্থিত নানাবিধ অসঙ্গতি, ভ্রান্তি, কুটভাস, ছায়াবৃত এলাকাকে বিনির্মান করতে করতে এই তত্ত্ব অংশ হতে সমগ্রতায়, সসীম হতে অসীমের দিকে ধাবিত হয় বলেই এর চিন্তা প্রস্থানে রয়েছে যাযাবরী মনোবৃত্তি। প্রয়োগ কলার বাইরে এর কোন স্বার্থকতা নেই । পাঠকৃতির বাইরে যেমন এ তত্ত্ব প্রযুক্ত হয় না, তেমনি পাঠকৃতির ভাষা ও শব্দবন্ধ একথাই প্রমাণ করে যে এগুলি নিছক উপকরণ নয়; এরা নিজেরাই প্রতিবেদনের বিষয়বস্তু এবং গোপন অন্তঃসার। হুইলার বলেছেন, “The text is the action about which
it allegorically speaks, its subject matter is the text itself as reading
experience or writing activity.” একদিকে যেমন এই তত্ত্বের প্রয়োগে সমালোচনা সাহিত্যের স্বাধীন পরিসর সৃজিত হয়েছে, অন্যদিকে সাহিত্যও বিনির্মাণবাদী প্রক্রিয়ায় রচিত হতে শুরু করেছে। বিনির্মাণবাদী সাহিত্য বল আমরা বুঝি যে সাহিত্য তার নিজস্ব আত্ম সমালোচনাকে নিজেই ধারণ ও লালন করে। লেখক যতই বর্তমানের সত্তা তত্ত্ব নিয়ে ভাববেন, ততই তিনি রূপকায়িত বাস্তবের প্রতিবেদনে যথাপ্রাপ্ত অবস্থানকে বিনির্মাণ করে চলবেন। জীবন ও জগতের সম্পর্ক নির্ণয়ে লেখকের স্বাধীন সরণ তাঁদের সাহিত্যকে বিনির্মাণ তত্ত্বের আওতায় এনে দিয়েছে। ইংরাজী সাহিত্যে বিনির্মাণ তত্ত্বের প্রয়োগ হয়েছে অজস্র। বর্তমান বাংলা সাহিত্যেও এই তত্ত্ব সম্প্রসারিত। নবারুণ ভট্টাচার্যের 'হারবার্ট', রবিশঙ্কর বলেন 'নীল দরজা লাল ঘর', রণজিৎ দাসের ‘বিয়োগপর্ব’, আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের 'খোয়াব ।', অভিজিৎ সেনের 'রহু চণ্ডালের হাড়, ভগীরথ মিশ্রের 'জানগুরু' এবং গুণময় মান্নার মুটে ইত্যাদি বিনির্মাণবাদী উপন্যাসের তালিকায় স্থান পেয়েছে।
0 Comments