বিশ্বমহামানব হজরত মহম্মদ(স:) পর্ব :07
✍✍✍✍✍✍✍✍✍✍✍
আব্দুল মুসরেফ খাঁন// পাশকুড়া
🌎🌎🌎🌎🌎🌎🌎🌎🌎🌎🌎
মদিনায় ফিরে এসে তিনি রমজান মাসের শেষ ২০ দিন ইতিকাফ করলেন। পূর্বে শেষ দশ দিন ইতিকাফ করতেন। এই সময় কুরআন শরিফের যতটুকু নাজিল হয়েছিল তা আবৃত্তি করে শোনাতেন। শেষ রমজানে জিবরাঈল আ.-কে রেখে দু'খতম কুরআন পাঠ করেন। একাদশ হিজরির সফর মাসে মুহাম্মদ স. অসুস্থ হয়ে পড়লেন। খায়বারে ইহুদি রমণী জয়নবের দেওয়া বিষক্রিয়ার কথা এই সময় তিনি উল্লেখ করেছেন। এ অবস্থায় এগারো দিন নামাজে ইমামতি করেন। এরপর আবু বকর রা.-কে নামাজে ইমামতির আদেশ দেন। তিনি (আবু বকর রা.) মোট ১৭ বার ইমামতি করেন, তার মধ্যে এক বার জুমআর নামাজে। মুহাম্মদ স. শেষ নামাজ পড়ান মগরিবের। রোগ বৃদ্ধি পেলে তিনি অন্যান্য স্ত্রীর অনুমতি নিয়ে আয়িশার ঘরে আশ্রয় নিলেন। হজরত আলি রা.-এর কোলে মাথা রেখে অসুস্থ অবস্থাতেই বললেন, দাস- দাসীদের প্রতি নির্মম হয়ো না। ১০ দিন একটানা অসুস্থ থাকার পর আয়িশা রা.- এর বুকে মাথা রেখে বললেন, সালাত, সালাত সাবধান! এরপর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার পূর্বে বললেন, 'ইয়া, রফিকে আলা–হে আল্লাহ, শ্রেষ্ঠতম বন্ধু।
কয়েকজন সাহাবা আনসার হজরত মুহাম্মদ স. এর সংগে তাঁদের সম্পর্কের স্মৃতিচারণে ক্রন্দনরত এই কথা শুনে হজরত স. শেষবারের মত মিমবারে উঠে এরশাদ করলেন। আমি তোমাদের কাছে আনসারের প্রতি সদ্ব্যবহারের ও সুবিচারের সুপারিশ করছি। তারা আমার পরম অন্তরংগ। তারা তাদের কর্তব্য পালন করেছে। প্রতিদানের দায়িত্ব আমাদের ওপর ন্যাস্ত রইল। সৎকর্মশীল আনসারকে তোমরা সাদর সম্ভাষণ জানাবে। অন্যায়কারীদের প্রতি ক্ষমা প্রদর্শন করবে। এক সময় তাঁর মনে পড়ল আয়েযার হাতে অনুর্দ্ধ ন'টি দিরহাম আছে। তাঁর আদেশে তাঁর হাতে মুদ্রাগুলো দেওয়া হলে তিনি বললেন, এগুলো আমার মালিকানায় থেকে গেলে আমি কিভাবে আল্লাহর সামনে দাঁড়াব। এগুলো দান করে ফেল। এতেকালের অব্যবহিত পূর্বে তিনি বলেন, ইহুদী, খৃষ্টানদের আল্লাহ ধ্বংস করুক। তারা তাদের নবীদের মাজারকে সিজদাহ স্থানে পরিণত করেছে। সাহাবা রা.-দের তিনি সাবধান করে বললেন, তারা যেন তাঁর কবরকে সেজদাহ স্থানে পরিণত না করে। ১১ রবিচল আওয়াল সোমবার ৬৩ বছর বয়সে হজরত মুহাম্মদ স. শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন সূর্যাস্তের কিছু পূর্বে। অনেকেই এ খবরটি পান সূর্যাস্তের পর। সুতরাং ১২ রবিয়ল আওয়াল তিনি এন্তেকাল করেন। তাও নানা বর্ণনায় পাওয়া যায়। ঐতিহাসিক ইবনে ইসাহক ও ওয়াকিদির মতে দিনটি ছিল বারই রবিয়ল আওয়াল। সোমবার সম্বন্ধে কোন মতভেদ নেই। কিন্তু ১২ তারিখ সোমবার হয় না। বোখারী শরীফের ভাষ্যকার আসকালানি বলেন, নকলনবীশগণ ভুল বশত ১২ তারিখ এন্তেকালের সময় হজরত মুহাম্মদ স. এর রেখে যাওয়া, সম্পদ বলতে ছিল একটা সাদা ঘোড়া, কিছু যুদ্ধাস্ত্র ও একখণ্ড জমি। এই জমিটুকু এন্তেকালের পূর্বে দান করে দেওয়া হয়। একটা মাত্র ধর্ম। কয়েক ছা যবের বদলে বন্ধক ছিল এক ইয়ুদীর কাছে। এই রাতে প্রদীপ জ্বালাবার জন্য তেল বাড়িতে ছিল না। প্রতিবেশীর বাড়ি থেকে তা ধার করে আনা হয়। ওমর রা. রসুল স. এর গ্রন্থেকালের কথা শুনে তরবারী হাতে মসজিদুন্নবীতে দাঁড়িয়ে বলতে থাকেন, যে বলবে রসুল স. নেই তার শিরচ্ছেদ করব এই তরবারী দ্বারা। আবু বকর সিদ্দিকী রা. তাঁকে শান্ত করেন। বনু সাইদা চত্ত্বরে সমবেত হয়ে সাহাবারা গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে আবু বকর সিদ্দিকী রা. কে খলিফা নির্বাচিত করেন। কবরের স্থান সম্বন্ধে আবু বকর সিদ্দিকী রা. রসুল স. এর উক্তির উল্লেখ করেন। প্রত্যেক নবী তাঁর এন্তেকালের হলে সমাধিস্ত হয়েছে অতএব আয়েদা রা, ঘরেই তাঁকে সামাধিস্তের ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
দাফন কাফনের কাজ শুরু হয় মংগলবার। কবর খননের কাজ গোসল ও কাফ পরানোর পর শুরু হয়। যে ঘরে এন্তেকাল করেছিলেন সেখানেই লাস শায়িত ছিল। লোকেরা কাতারবন্দী হয়ে সেই ঘরে এসে শেষ দেখা ও জানাজা আদায় করে যাচ্ছিল। প্রথমে পুরষরা পরে মহিলারা আরও পরে শিশু বালকরা। দাফন করতে মংগলবার দিন গত হয়ে রাত হয়ে যায়।
ঐতিহাসিক ইবন ইসাহকের মতে বুধবার দিন রসুল স. কে কবরস্থ করা হয় কিন্তু সহিহ বুখারী ও মুসলিম-এর বর্ণনা মতে মংগলবার দিবাগত রাতে। গোসলের জন্য পানি আনা হয় প্রায় তিন মাইল দূর কোবা পল্লীর এক কৃয়া থেকে। কেননা কোবার থাকাকালিন রসুল স. এই কুয়ার পানির প্রশংসা করতেন। কুলপাতা দিয়ে পানি গরম করা হয়। গোসলের কাজ আঞ্জাম দেন। হজরত ফজল ইবন আব্বাস ওসামা ইবন জায়েদ পর্দা করেন। হজরত আলি গোসল দেন। হজরত আত্মার পানি ঢালতে সাহায্য করেন। কোন কোন মতে আব্বাস রা. পর্দা করেন। আওস ইবন খাওলা আনসারী কলসী ভরে পানি এগিয়ে দিতেন। হজরত আব্বাস রা. দুই পুত্র কাসেম ও ফজল লাস মোবারক পার্শ্ব পরিবর্তন করেন। উসামা পানি ঢালেন।
কাফনের জন্য ইয়েমেনি চাদর ঠিক করা হয় কিন্তু পরে তিন খণ্ড সুতীর কাপড় দ্বারা কাফন দেওয়া হয়। লাস মোবারক একটু সরিয়ে আয়েষার কক্ষেই কবরস্থ করা হয়। কবর খনন করেন হজরত তালহা রা.। লাহাদ জাতিয় কবর খোঁড়া হয়। মাটি ভিজে ছিল বলে যে চেটায়ে তিনি এন্তেকাল করেন সেই চেটায়খানা কবরে বিছিয়ে দেওয়া হয়। কবর তৈরীর পর জানাজা হয়। কেউ এমামতি করেননি। জানাজা শেষ হলে লাস মোবারক কবরে নামান হজরত আলি, ফজল ইবন আব্বাস, উসামা ইবন জায়েদ এবং আব্দুর রহমান ইবন আউফ। তাঁকে পূর্ব পশ্চিম করে কবরে সোয়ান হয়।
উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছিলেন এক কৃষ্ণকায় দাসী। নাম ওম্মে আয়মন। ইনি ছিলেন রসুল স. এর ধাত্রী মা। এঁকে মা বলে ডাকতেন। অপর ধাত্রী মা ছিলেন সোয়ায়বিয়া। বলতেন পিতামাতারূপ শেষ স্মৃতি এই ধাত্রী মা। এর সঙ্গে নিজ পালিত পুত্র জায়েদের সংগে বিয়ে দেন। এঁর গর্ভের সন্তান হজরত উসামা ইবনে জায়েদ। এর সঙ্গে এক রসিকতা খুব প্রচলিত। এক সময় ইনি এসে মুহাম্মদ স. কে বললেন, আমাকে একটা উট দান করুন আমার খুব প্রয়োজন। হুজুর স. বললেন, যাও তোমাকে একটা উটের বাচ্চা দেওয়া হবে। তখন মহিলা বললেন, উটের বাচ্চা নিয়ে আমি কি করব। তখন রসূল স. রসিকতার ছলে বললেন, সব উটই ত কোন না কোন উটের বাচ্চা। ইনি বহু যুদ্ধে রসুল স. কে সাথ দিয়েছেন। যুদ্ধক্ষেত্রে অসুস্থদের সেবা করতেন।
হজরত মুহাম্মদ স. এর অন্যতম খাদেম ছিলেন আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ রা.। বিখ্যাত সাহাবী। এঁর চিন্তাধারার ওপর হানাফী চিন্তাধারা দাঁড়িয়ে আছে। মাক্কী জীবনে ইনি কোরআনের শিক্ষক ও প্রচারক রূপে নিযুক্ত হন। ৭০টি সুরা রসুল স. এর মুখ থেকে শুনে মুখস্থ করেন। ইনি রসুল স. একান্ত সচিব ছিলেন। সফরে রসুল স. এর শয়ন, মেসওয়াক, ওজুর ব্যবস্থাপনায় থাকতেন। মজলিস থেকে উঠলে রসুল স. এর পায়ে জুতো পরিয়ে দিতেন। মজলিসে বসার সময় জুতা সামাল দিতেন। হজরত বেলাল রা. আবু বকর সিদ্দিকী রা. কর্তৃক ক্রীতদাস থেকে মুক্ত হয়েছিলেন। হজরত আনাস ইবন মালেক। হিজরতের সময় একান্তই বালক ছিলেন। ইনি একটানা দশ বছর মুহাম্মদ স. এর খাদেম হিসাবে কাজ করেন। ছোট ছোট হুকুম, অজুর পানি সরবরাহ, আজান দেওয়ার কাজ করতেন।
N:B:- লিঙ্কে স্পর্শ করে লেখাগুলো পড়ুন। যারা পড়তে ভালোবাসেন আমার প্রোফাইল লাইক শেয়ার করুন। আমার পরিশ্রম সার্থক হবে।।লেখায় কমেন্ট -লাইক শেয়ার করে পরিশ্রমে উৎসাহী করুন 🚶🚶🏃🏃
✍✍✍✍✍✍✍✍✍✍✍
আব্দুল মুসরেফ খাঁন// পাঁশকুড়া
🌎🌎🌎🌎🌎🌎🌎🌎🌎🌎
পর্ব-01 পড়ুন👉✍
https://www.facebook.com/share/p/1ZmvN6RSva/
পর্ব-02 পড়ুন👉✍
https://www.facebook.com/share/p/1CkXLWWJKm/
পর্ব-03 পড়ুন👉✍
https://www.facebook.com/share/p/1EqZWNPDqV/
পর্ব-04 পড়ুন👉✍
https://www.facebook.com/share/p/XyG8w5JCf8sxdJKR/
পর্ব-05 পড়ুন👉✍
https://www.facebook.com/share/p/BTyfwTh7vq5uLy69/
পর্ব-06 পড়ুন👉✍
https://www.facebook.com/share/p/SDS5WTVCWMvhGTXv/
ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা যা হজরত মহম্মদ (স:) কেন্দ্রীক : পড়ুন👉👉👉👉✍
https://www.facebook.com/share/p/NpkYrgpzzX6PdZpB/
বিশ্বমহামানব হজরত মহম্মদ(স:) সমাপ্ত পর্ব👉👉✍
https://www.facebook.com/share/p/18GrPPDpyz/
#ইসলাম #হজরতমহম্মদ #trend #color #cherry #اكسبلور #فلو #اصدقاء #أصدقاء #فيديوهات #ريلاكس #تصوير #ريلز #كومنت #explore #photoofthed
0 Comments