ভারতীয় মুসলমানদের অতীত সমাজ সংস্কৃতি -পাট-2

ভারতীয় মুসলমানদের অতীত সমাজ সংস্কৃতি -পাট-2
👁👁👁👁
স্যর সৈয়দ আমীর আলি (১৮৪৯ ১৯২৮), আমীর আলি ছিলেন মোতাজেলা পন্থী। ইসলাম এবং কোরানকে তিনি যুক্তি বিজ্ঞান দিয়ে বুঝাবার চেষ্টা নিয়েছেন। হজরত মুহাম্মদ স. কে দেখেছেন মানবীয় গুণের আধার রূপে। আমীর আলি সর্বপ্রথম, ভারতীয় তথা বাংলার মুসলমানের মধ্যে মুক্ত চিন্তার হাওয়া বহন করে আনেন। এই আমীর আলির চিন্তার আলো বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনকে প্রভাবিত করেছিলেন। কাজী আব্দুল ওদুদ সাহেব সৈয়দ আমীর আলির অবদানের স্বীকৃতি দিয়ে বলেছেন ‘আমাদের শুধু আনন্দই দেয় নাই, সেই খ্যাতি অনেক পরিমাণ ছিল আমাদের মানসিক উপজীবিকা।'
মীর মোশাররফ হোসেন ১৮৮৮ সালে আহমদী পত্রিকায় গো-বধ বন্ধের সুপারিশ করেন। প্রবল চাপে নতুন সংস্করণ প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি। রক্ষণশীলতার কোপে পড়তে হয়। শিক্ষা বিস্তারের ক্ষেত্রে অসমসাহসী মহিলা বেগম রোকেয়া সাখাওয়াতকে (১৮৮০ -১৯৩২) মোল্লাদের বিরোধিতার মুখোমুখী হতে হয়েছিল। সেই সময় রোকেয়ার কলম তরবারীর মত ঝলসে ওঠে কৃপমুন্ডকতার বিরুদ্ধে চাঁচাছোলা ভাষায়। ‘যে সকল মোল্লা স্ত্রী শিক্ষার বিরুদ্ধে ফতোয়া দেয়। তাহারা ছদ্ম বেশী শয়তান।' বয়সের শেষে দুঃখ করে বলেছেন, 'আমি কার্শিয়াং মধুপুরে বেড়াতে গিয়ে সুন্দর সুদর্শন পাথর কুড়াইয়াছি, উড়িষ্যা ও মাদ্রাজ্যের সাগর তীরে বেড়াইতে গিয়ে বিচিত্র বর্ণের বিবিধ আকারের ঝিনুক কুড়াইয়া আনিয়াছি, আর জীবনের ২৫ বছর ধরিয়া সমাজের সেবা করিয়া কাঠমোল্লাদের অভিসম্পাত কুড়াইয়াছি।' প্রতি আক্রমণে বেগম রোকেয়াকে প্রবন্ধের অংশ বিশেষ বর্জন করতে হয়। মীর মোশাররফ হোসেন ও রোকেয়াকে যে প্রতিরোধের সম্মুখীন হতে হয় পরবর্তি কালে আব্দুল ওদুদ ও মুসলিম সাহিত্য সমাজের অন্যান্য নেতৃস্থানীয় লেখকদের ওপরেও আসে। এই বিপন্নদের দলে কাজী নজরুল ইসলামও আছেন। তবে এটা এখনও বন্ধ হয়নি কেননা কাঠমোল্লাদের দাপট তখনই শেষ হবে যখন মুসলিম সমাজ জেগে উঠবে শিক্ষা পেয়ে। এখনও স্থানে স্থানে শুধু কোরআনে হাফেজ বানাবার মাদ্রাসা গড়ে উঠে। যারা হাফেজ হয়ে যায় তাদের হাফেজ বলে, কোরআন অর্থ টুকুও শেখান হয় না। তোতাপাখীর মত কোরআন শরীফ মুখস্থ
ভুলের জন্য হামলা হয় এমন কি পত্রিকা ম্যানেজারকে শারীরিক ভাবে নির্যাতন সহ্য করান হয়। কয়েক বছর পূর্বে নতুন গতির (১৯৯৫ খৃঃ) পত্রিকা অফিসে অনিচ্ছাকৃত করতে হয়েছে। এই লেখককে মানসিক নির্যাতন ভোগ করতে হয় সত্য কথন ও লিখনের জন্য যে বিষয়ে হেনস্থা তা হাদিস কোরআনের পূর্ণ সূক্ষ্ম ও গভীর জ্ঞানের অভাব হেনস্থাকারীদের। Little Learnig is a dangerous thing' হাদিস অর্থ, কলেমা অর্থ না জেনে মোমতাজুল মোহাদ্দেসীন হয়ে বসেছে। 'এ পাপ, তোমার আমার পাপ বিধাতার বক্ষে তাপ' ইসলাম দাঁড়িয়ে থাকবে চিরকালীন হয়ে কোরআন, হাদিস, ফেকাহ, ইজমা, কেয়াসের ওপর। ইজমা কেয়াস না থাকলে ইসলামকে শাশ্বত করা যাবে না। নুতন আবিষ্কার নূতন চেতনার সংগে ইসলামকে খাপ খাওয়াতে হবে, এই খাওয়ানো অর্থ ঘোমটা খুলে ফেলা নয়। ঘোমটার নীচে খেমটা নাচও নয়। যেমন কিছু দিন পূর্বে সমগ্র ভারতবর্ষেই প্রায় ছড়িয়ে পড়ল হাঁটু পার করা সালোয়ার কামিজ ৯ বছরের বালিকা থেকে ৬৫ বছরের দাদী পর্যন্ত। আধুনিক সোবার পরিচ্ছদ কেউ প্রতিবাদ করেনি, বরং শ্রেণি বর্ণ, জাতি, ধর্ম নির্বিশেষে সমর্থন করেছে। কিন্তু দু'দশক অতিক্রম করতে না করতে সাইজ ছোট হতে লাগল। এমনই ছোট যে সমাজ বিজ্ঞানীরা বলতে বাধ্য হলেন একটা নেক টাইয়ের কাপড়ে তিনজনের লজ্জা স্থান ঢাকার ব্যবস্থা। এরা যেভাবে পৃথিবীতে প্রথম ভূমিষ্ট হয়েছে, সেই ভাবে থাকবে। আর একটা শ্রেণি মনে করছে যতক্ষণ না স্ত্রী পুরুষে, পরস্পর প্রকাশ্যভাবে বিপরীত অংগে অংগে মিলিত হচ্ছে ততক্ষণ দোষ নেই। আর অপ্রকাশ্য বাথরূমে, হোটেলে, অফিসে মিলনে দোষ দেখে না, কেননা ওটা তো মানসিক ক্ষুধা, পেটের ক্ষুধা যেমনি ভাত, রুটি, ছাতু, ফল যে কিছু দ্বারা মিটতে পারে তেমনি মানসিক ক্ষুধা একাধিক জনের দ্বারা ও ভাবে স্থানে মিটবে না কেন? এসব অহিয়াতি কাজ থেকে বাঁচার পথ ও পদ্ধতি হাদিস কোরআনের মধ্যে থাকলেও আধুনিক আবিষ্কারের সংগে মোকাবেলার জন্য এজমা কেয়াসের জরুরী প্রয়োজন। যেমন মোবাইল আবিষ্কারের পর নীতি নির্ধারণ করতে হল তা নিয়ে মসজিদে যাওয়া যাবে কিনা। কার্পেট বিছিয়ে নামাজ হবে কিনা। বিবাহ রেজিষ্ট্রি করা যাবে কিনা। E-Mail. T. V. ফোনে বিবাহ হবে কিনা? পৃথিবী অগ্রসরমান ইসলাম থেমে থাকবে না।
'যে নদী হারায়ে স্রোত, চলিতে না পারে, সহস্র শৈবাল দাম বাঁধে তারে।' ইসলামে সে প্রথা, নিয়ম কানুন, পদ্ধতি চলবে যা কোনভাবে কোরআন হাদিস বিরুদ্ধ নয়। অবস্থার পরিপেক্ষিতে অধিক তল মসজিদ, মসজিদে কার্পেট বিছান, রাস্তায় নামাজ, মাদ্রাসায় একত্রে (স্ত্রীলোক-পুরুষ) পাঠ চলবে। বহুমুখী সমস্যা। কিন্তু কোন মতেই চলবে না এক ঘাটে স্নান। চলবে না একই পরিচ্ছদ পরিধান, লজ্জা স্থান খুলে বেআবরু হয়ে ঘোরা। পুরাতন লেখকদের মধ্যে ইমদাদুল হক ও লুৎফর রহমান ইমদাদুলের উপন্যাস ‘আব্দুল্লাহ' পড়ে রবীন্দ্রনাথ লেখেন 'বই খানি আমাকে ভাবিয়েছে। দেখছি যে ঘোরতর বুদ্ধির দৈন্যে হিন্দুকে সর্ব প্রকারে দুর্বল করে রেখেছে তাই মুসলমান ঘরে ধুতি-চাদর ত্যাগ করে লুঙ্গি ফেজ পরে মোল্লার অন্ন জোগাচ্ছেন। একি মাটির গুণ। ধর্ম ও স্রষ্টা সম্পর্কে লুৎফর রহমান ও এমদাদুল হক সাহেব যা বলেছেন ওদুদ ও অন্যান্য সাহিত্যজীবিদের আছে চিন্তার সাদৃশ্য। জ্ঞান চর্চা ছাড়া ধর্ম পালন হয় না। সুন্দর কল্যাণ ও সত্যের মাঝে স্রষ্টার আবাস। জীবনকে নির্মল, সত্যময়, সুন্দর, প্রেমময়, নিষ্পাপ, নির্দোষ করে তোলাই মানব জাতির একমাত্র ধর্ম হওয়া উচিত। এটা জাতির উক্তি শুধু নয় এই চিন্তা ধারা এঁদের প্রতিটি লেখায়।'
আজ মসজিদ গুলো মুর্খের আড়ত হয়েছে তাই কবি বলেন পীরের দরবারে গিয়ে দেখি এক পাল জাহেল রাজনীতির অংগনে দেখি সহস্র বেকার ধর্ম সভায় হাজিরায় দেখি পাপি ও তাপি মসজিদের দালানে যত বেহেসত লোভি ঈদ ময়দানে হিসাবহীন মোনাফেক মক্কার পথে পথে কাবা ভ্রমণার্থী আরাফাতের ময়দানে হাজারো, নামে সুফী হাসরের ময়দানে নেই কোন সাথী
এইখানে বুঝে গেছি সব কিছু ফাঁকি।
এক জুম্মার মসজিদে জুম্মার নামাজ পড়তে গিয়ে নামাজীর অনুরোধে কিছু বলতে উঠে অবস্থা আমাকে বলতে বাধ্য করে আমার মনে হয় এখানে গত ১৫/২০ বছর কোন ছেলে পুলে হয়নি, গ্রামটা প্রায় আঁটকুঁড়ো হয়ে গেছে। আমার এ উক্তি ও অনুমানের কারণ এই মসজিদে কোন যুবকের উপস্থিতি নেই। নামে মাত্র কয়েকজন বুড়ো। পরের আল ঠেলে, মা-বাপের ওপর অত্যাচার করে, রাজনীতির দাদা হয়ে শোষণ, বিচারক সেজে, চুরি, বাটপারি করে বার্ধক্যে আশ্রয় নিয়েছে মসজিদে। হাতে তুলে নিয়েছে তসবিহ। গলায় ভুল কলেমা। মুখে ইসলাম বিশারদ। সবজান্তা।
আব্দুল ওদুদের মত কিছু উদার মানবিক লেখক কবিদের খোঁচা খেয়ে চক্ষুবোজার দল একটু নড়েচড়ে বসে। বদ্ধ সমাজ ব্যবস্থায় একটু হাওয়া খেলল। নজরুল এসে উসকে দিলেন। লাঙল পত্রিকায় অর্থনেতিক ও সামাজিক মুক্তির আহবান জানালেন। আব্দুল কাদির আর আব্দুল ওদুদ বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনে প্রেরণা দিলেন। বুদ্ধিমুক্তি আন্দোলনে নজরুলের প্রত্যক্ষ ভূমিকা ছিল না। আবদুল কাদির বলেন, 'নজরুলের সংস্রবের ফলে সাহিত্য সমাজের প্রতিপত্তি বেড়েছিল কিন্তু তাদের বুদ্ধির মুক্তির মন্ত্র তার নেতার দ্বারা আবিষ্কৃত।'
শেষ নবী হজরত মহাম্মদ স. (ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক আদমে আ) মুহাম্মদ স. এর পর ইসলামের ধর্মীয় ও রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে ভার নিলেও খলিফা নামে হজরত আবুবকর সিদ্দিকী রা. এ থেকে নানা পথ পরিক্রমার পর খলিফার নামেও পথে ইতি পড়ল ১৯২২ খৃষ্টাব্দে মোস্তাফা কামাল পাসা কর্তৃক তুরস্কে। খেলাফতি তুরস্ক থেকে তথা পৃথিবী থেকে বিদায় নিলেও ভারতে খেলাফত আন্দোলন হয় খেলাফতি পুনপ্রতিষ্ঠার জন্য। কামাল পাশা ধর্মীয় মন্ত্রির পদ তুলে দেন। ফেজ টুপি নিষিদ্ধ হয়। পর্দা ব্যবস্থা লোপ পায়। মাদ্রাসার দরওয়াজায় তালা পড়ে। আরবীর জায়গায় আসে লাটিন বর্ণমালা, পীর দরবেশদের মাজার জিয়ারত বন্ধ হয়। ভারতীয় মুসলমান যখন কামাল পাশার বিরুদ্ধেও খলিফার পক্ষে আন্দোলনরত তখন নজরুল সোচ্চার এবং লেখনি দিয়ে তাকে সমর্থন করলেন। ধূমকেতু পত্রিকায় জ্বালাময়ী ভাষায় কামাল শিরোনামে সম্পাদকীয় লিখলেন। নজরুলকে ‘ইসলাম দর্শন' পত্রিকায় হুমকী দেওয়া হল 'খাঁটি ইসলামী আমলদারী থাকিলে এই ফেরাউন বা নজরুলকে শূলবিদ্ধ করা হইত বা উহার মুণ্ডুপাত করা হইত নিশ্চয়।' বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনের আঁতুড় ঘর ছিল ঢাকা। এবং কেন্দ্রস্থল ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ভারতের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় কলকাতা (১৮৫৭) তার প্রায় ৬০ বছর পরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অমুসলিম পরিচালকদের নানা বিরোধিতার মাঝে ১৯২১ খৃষ্টাব্দের মে মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা পায়। ঢাকার নবাব সলিমুল্লাহর আর্থিক সাহায্যে। মুসলিম অঞ্চলে হলেও মুসলিম ছাত্র ছিল মাত্র ৬% বাকি অমুসলিম ছাত্র। এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ডঃ মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ ১৯২৬ খৃষ্টাব্দে প্রথম সভায় সভাপতিত্ব করেন। শহিদুল্লাহ সাহেব যেমনি রসুল জীবনী লিখেছেন, লিখেছেন কোরআনের তফসির, ইকবাল জীবনী, ইকবালের ফারসী কাব্যের বংগানুবাদ, গালিবের কাব্যের বংগানুবাদ। সিপাহী বিদ্রোহে ব্রিটিশ নৃশংসতার ছবি গালিব কবিতার বংগানুবাদ 'আমার সামনে আজ খুনের দরিয়া' তেমনি একাধিক পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন। বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনে থেকেছেন। পরে বাংলা ভাষা আন্দোলনে থেকেছেন, কোন ভাষাতে এম. এ. না হয়ে ভাষাবিদ হয়েছেন, প্রথম পূর্ণাংগ বাংলা ব্যাকরণ (১৯৩৫ খৃঃ) লেখেন। সুনীতি চ্যাটার্জী লেখেন ১৯৩৮ খৃ: আবার রসুলের সুন্নাত জাগ্রত করতে গিয়ে মহিলাদের নিয়ে ঈদের জামাত কায়েম করেছেন এমন কি ঐ জামাতে নিজে এমামতি করেছেন, শহীদুল্লাহ সাহেবকে এপারের হিন্দু মুসলমান উভয়েই পাকিস্তান বা ওপারের লোক হিসাবে জানে, প্রকৃত পক্ষে শহিদুল্লাহ সাহেব বর্তমান উত্তর ২৪ পরগণা জেলার হাড়োয়া থানায় জন্ম গ্রহণ করেন (১৮৮৫ খৃষ্টাব্দে) পড়াশুনা করেন হাওড়া, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ও একমাত্র ছাত্র হিসাবে ১৯১২ তে Comparative Philology  পনা মূলক ভাষাতত্বে এম. এ. পাশ করেন। তার জন্য ভাষাতত্ত্ব বিভাগ খোলা হয়।
ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ অনার্সে সংস্কৃতের বেদে সর্বোচ্চ নম্বর নিয়ে বি. এ. পাশ করেন। সংস্কৃতে এম. এ. পড়তে গেলে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত ভাষার প্রধান অধ্যাপক সামশ্রমী তাঁকে ক্লাস থেকে বের করে দেন। শহিদুল্লাহ সাহেব বসিরহাট কোর্টের ব্যবহারজীবি হিসাবে কাজ করেন। বসিরহাট মিউনিসপালিটির ডেপুটি চেয়ারম্যান ছিলেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯১৯ থেকে ১৯২১ অধ্যাপনা করেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হলে সেখানে বাংলা, সংস্কৃত বিভাগে যোগদান (১৯২১) করেন। ঢাকায় যে নিজের দোতলা বাড়ি করেন তার নাম দেন গ্রামের নাম অনুযায়ী ‘পেয়ারা' ভবন। এরপরেও বাংলার ছাত্রছাত্রী থেকে শিক্ষক পর্যন্ত বলেন বা ভাবেন শহিদুল্লাহ বাংলাদেশের লোক। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস পড়তে গেলে তাঁর গবেষণাকে বাদ দিয়ে পড়া যাবে না। অথচ এ পারের পুস্তকের পাদ টীকায় ছাড়া তাঁর স্থান নেই। বুদ্ধি মুক্তি আন্দোলনের সৈনিক অস্থির চরিত্র বিতর্কিত আবুল হুসেন, ছাত্র থেকেও নেতা আব্দুল কাদির। (পরবর্তিতে কমরেড মোজাফফার আহমদের জামাতা হন এবং আব্দুল ওদুদ সাহেবের পুর্ণাংগ জীবনী লেখক।) অন্যান্যরা হলেন আনোয়ারুল কাদির (১৮৮৭-১৯৪৮) মোতাহার হোসেন (১৮৯৭ - ১৯৮১)। বুদ্ধি মুক্তি আন্দোলনে আব্দুল ওদুদ ছিলেন ভাবযোগী আর কর্মযোগী ছিলেন আবুল হুসেন।
মুসলিম সাহিত্য সমাজে কাজী আব্দুল ওদুদ যদিও কোন পদ অলংকৃত করেননি কিন্তু সংগঠনের বুদ্ধি জোগাতেন এই ওদুদ সাহেব। সমিতি তথা বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনের বিরুদ্ধে বিতর্কের কেন্দ্র বিন্দুতে ছিলেন ওদুদ সাহেব ও আবুল হুসেন। সমিতিতে প্রতি বছর মূল্যবান প্রবন্ধ পাঠ করতেন আব্দুল ওদুদ। ১৯২৬ সম্মোহিত মুসলমান, ১৯২৭ বাঙালী মুসলমানের সাহিত্য সমস্যা, ১৯২৮ বাংলার জাগরণ, গ্যেটে (১৯৩০) শিক্ষাসংকট (১৯৩২) এবং বংকিমচন্দ্র (১৯৩৬)।
ওদুদ সাহেবের জীবনীতে কাদির সাহেব লেখেন 'ঢাকার মুসলিম সাহিত্য সমাজের 'বুদ্ধির মুক্তি' আন্দোলন ও 'শিখা' গোষ্ঠী প্রধানত তাঁরই (ওদুদ) চিন্তা প্রেরণা থেকে প্রাণ পেয়েছিল।'
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ডঃ মাহমুদ হোসেন বলেন
'Kazi Abdul Wadud had a daringly original mode of thinking Abul Husain was a man of will and action. The man of thought and that the man of action combined in 1927 (sic) to found Dacca Muslim Sahitya Samaj which came to be regarded as a new school of thought.
মুসলিম সাহিত্য, সমাজ প্রতিষ্ঠায় অপ্রত্যক্ষ প্রেরণা আব্দুল ওদুদ ও আব্দুল কাদির যাদের কাছ থেকে পেয়েছিলেন সেই বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তিত্বরা হলেন কামাল আতাতুর্ক, রামমোহন, রোমা রোঁলা, সাদি, হজরত মুহাম্মদ স. ও ডিরোজিও। ডিরোজিও ইয়ং বেংগল প্রতিষ্ঠা করে বাংলার যুবসমাজ হিন্দু সমাজের মধ্যে যুক্তিবাদী আধুনিকতার বাতাবরণ তৈরী করতে চেয়েছিলেন। কিছুটা সফল হয়েছিলেন ততক্ষণে কিন্তু মুসলিমদের মধ্যে সেই হোম শিখা থেকে ধুনি জ্বালিয়ে নিয়ে দিলেন তাদের মধ্যে আব্দুল ওদুদ ও আব্দুল কাদির অন্যতম এবং শিখা গোষ্ঠী ও বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন। উল্লেখ্য আব্দুল ওদুদ যথার্থই প্রেসিডেন্সির ছাত্র ও পরোক্ষে ডিরোজিওর ছাত্র। ডিরোজিও সেই ব্যক্তি যিনি মাত্র ১৯ বৎসর বয়সে (সর্ব কনিষ্ঠ) কলেজের অধ্যাপক হন। মাত্র ২৬ বছর বয়সে প্রয়াত। পার্ক স্ট্রীটের ওল্ড কবরস্থানে ডিরোজিও চিরনিদ্রায় শায়িত। কিন্তু তাঁর আদর্শ আজও জাগ্রত। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ে বিভিন্ন দেশের কিছু মানবতাবাদী লেখক যে Declaration of independence of thought নামে একটা ইস্তাহার বের করেন। তার বয়ান তৈরী করেন রোঁমা রোঁলা। সাহিত্য সমাজের সদস্যরা এর দ্বারা ও প্রভাবিত হন। এছাড়াও মোতাজেলাদেরও প্রভাব উল্লেখযোগ্য। মোতাজেলাদের মত ছিল যুক্তি ছাড়া সঠিক জ্ঞান হয় না। যুক্তি নির্ভর জ্ঞান সঠিক জ্ঞান।
একদিকে তুরস্কের ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে কামাল পাশার জেহাদ। আফগানিস্তানের বাদশাহ আমানুল্লাহর সংস্কার প্রয়াস। স্বদেশে মুসলিম মধ্যবিত্তের শিক্ষাদীক্ষা চিন্তাশক্তি এবং আকাংখার শ্রীবৃদ্ধি এবং সংস্কার বাসনা প্রবল। প্রতিযোগী হিন্দুজাতির শিক্ষাদীক্ষা ও আর্থিক শ্রীবৃদ্ধি অচেতন মুসলমানের নূতন ভাবনা যোগায়। তাই মুসলিম সাহিত্য সমাজ হলেও জাগ্রত হিন্দুদের এখানে আহবান করা হত। বার্ষিক বিবরণিতে বলা হয়েছে। সমাজ কোন একটি বিশিষ্ট গণ্ডির মধ্যে আবদ্ধ নয় বা কোন একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের উদ্দেশ্য সিদ্ধির জন্য নয়। যে সমস্ত অমুসলিম লেখক এখানে আমন্ত্রণ পেয়েছেন তাঁরা হলেন হেমন্ত কুমার সরকার, কালি রঞ্জন কানুনগো, মোহিত লাল মজুমদার, ডা. রমেশচন্দ্র মিত্র, ড. সুনীল কুমার দে, কে. সি. মুখার্জী, উমেশ চন্দ্ৰ ভট্টাচার্য, সুরেন্দ্রনাথ মৈত্র, ডঃ পরিমল রায়। প্রথম অধিবেশন রবীন্দ্র কাব্য নিয়ে আলোচনা হয়। প্রথম অধিবেশনের সভাপতি চারুচন্দ্র বন্দোপাধ্যায়। শেষ তথা দশম অধিবেশন এর সভাপতি শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। মুসলিম সাহিত্য সমাজের বিজ্ঞান মনস্ক মানুষ তৈরী করা মূল লক্ষ্য ছিল। মন্ত্র ছিল 'জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, বুদ্ধি যেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসন্তব নজরুল সম্পাদিত 'ধূমকেতু' তে যেমন রবীন্দ্রনাথের
আশির্বাদ বাণী ছাপা হত প্রতি সংখ্যায়
আর চলে আর রে ধূমকেতু
দুর্দিনের এই দুর্গশিরে
উড়িয়ে দে তোর বিজয় কেতন।
অলकণের তিলক রেখা
রাজের ভালো শ্লোক না লেখা
জাগিয়ে তোর চমক মেরে
আছে যারা অর্ধচেতন
‘শিখার প্রতি সংখ্যায় প্রথম ছাপা হত 'জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, বুদ্ধি যেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব।'
আবুল হোসেন বলেন
'মানুষের চরম বিকাশের প্রথম পথ হচ্ছে মুক্ত বুদ্ধি যাতে জগতের প্রয়োজন অনুসারে যুগধর্মের ইংগীত অনুসারে স্বীয় জীবন নিয়ন্ত্রিত করা সহজ হয়।
কাজি আনোয়ারুল কাদির বলেন, 'বুদ্ধির মুক্তি না হলে ধর্ম শিক্ষা হতে পারে না। ধর্মের আদর্শ, আদেশ, নিষেধ পালন করার জন্য বুদ্ধির দরকার। বুদ্ধির অভাবে আজকাল আমাদের ভিতর প্রকৃত ধর্মভাব লোপ পাচ্ছে। এখন গোঁড়ামীই আমাদের ধর্ম হয়ে দাঁড়িয়েছে।'
আব্দুল ওদুদ বলেন
একদিনের খাওয়ায় যেমন অন্য দিনের চলতে চায় না, এক যুগের চিন্তাও তেমনি অন্য যুগের চলে না। দি বেংগলি পত্রিকা বলে We offer our heartfull congratulations to this 'muslim literary society' as the pioneer in the Neo-Muslim movement we have nothing but courage and manliness as their watch word and emancipalion of intel- lect as their ideal.
মুসলিম সাহিত্য সমাজ ও শিখা-কে, (১৯২৬ - ৩৬) দশ বছরে ইতি টানতে হয়। আবুল হোসেন ক্ষমা চেয়ে বলেন 'আমি খোদার কাছে মাফ চাই এবং সমাজের নিকটও আশা করি আমার অপরাধ মাফ হবে। পরের বছর আদেশের নিগ্রহ' লিখে আবার মাফ চাইতে হয়। 'এই প্রবন্ধের ভাষা দ্বারা মুসলমান ভ্রাতৃবৃন্দ মনে যে আঘাত পেয়েছেন সেজন্য আমি অপরাধী।' ওদুদু সাহেব এতটা খোলাখুলি মাফ চাননি। যদি অজ্ঞাতসারে আমাদের ধর্ম সম্বন্ধে এমন কোন কথা বের হয় যা সত্য ও মুসলমান সমাজের কল্যাণের পরিপন্থি তবে খোদা ওন্দ করিম আমাকে আমার গোনাহ মাফ করে আমাকে সিরাতুল মুস্তাকিম (প্রকৃত সত্য পথে পৌঁছে দিন।' এ ক্ষমা চাইতে হলেও ওদুদ সাহেব মুসলিম সাহিত্য সমাজকে ভোলেননি।

অপর জন যিনি শিক্ষাবিস্তারে এগিয়ে এসেছিলেন তিনি হলেন 
জীবনের শেষ প্রান্তে এসে লেখেন 'হজরত মুহাম্মদ ও ইসলাম' এই উৎসর্গ পত্রে লেখেন 'ঢাকার মুসলিম সাহিত্য সমাজের সহকর্মীদের স্মরণে নিবেদিত। বই এর উপসংহারে বলেন। একালে ধর্ম বলতে জ্ঞান ও মনুষত্ব সাধনাই মুখ্যভাবে বুঝতে হবে ধর্মের আচার অনুষ্ঠানের দিক তার তুলনায় গৌণ। অর্থাৎ এখন তিনি পূর্বেকার দিনের মত উদার বিচারশীল।
১১৮ তম পুস্তকের ভূমিকা লিখতে গিয়ে ৮০ বছর আগের মুসলিম সমাজ ও আব্দুল ওদুদ ও শিখা পত্রিকা গোষ্ঠীর অবস্থা বলতে গিয়ে নিজের কথা, বাধা, সমাজ বন্ধু অজ্ঞ সহকর্মীদের কথা মনে পড়ে যায়। সে বুঝি ১৯৮২ খৃষ্টাব্দের কথা আমি বোধ হয় প্রথম এ রকম পুস্তকে অর্থাৎ পঞ্চম ৬ষ্ঠ শ্রেণির নবী কাহিনীতে বলি পৃথিবীতে ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক আজ থেকে সাড়ে ন' হাজার পূর্বে হজরত আদম আ.। জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা, জানবার আগ্রহের অভাব, নিজে সবজান্তা ভাব মাদ্রাসায় চাকুরী করে ইসলামকে লিজ নিয়ে ফেলা মনোভাব নিয়ে পুস্তকে এ বাক্যটি দেখেই ছুঁড়ে ফেলে দেন। উক্তি করে বসেন, যা তা লিখলেই বই হয়ে যাবে। এদের শূলে চড়াতে হবে। আমি একথা শুনে নিজে মনে মনে আশ্বস্ত ছিলাম ঈসা আ. এর মত করে। এরা অবুঝ, ফিরতে আরও বিশ বছর লাগবে, হাঁ বিশ বছর লাগেনি ১৯৮২ থেকে ১৯৯৪ তে এক অজ্ঞ, এরা জানে না কি করছে। প্রত্যক্ষ ভাবে পরে বলেছিলাম আপনাদের সম্বিত যুগ পরেই সম্বিত পেয়ে স্বীকার করেন, আপনার লেখায় ঠিক কেননা আমরা মুহাম্মদ স. কে যে ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক বলি', তা এই হাম বড়া, কাঠমৌলবীরা ইসলাম নিয়ে যে গবেষণা করতে হবে তা না করে ওদের কথা বিশ্বাস করে। আমাদের ভুল ধারণা ছিল। মুহাম্মদ স. যদি শেষ নবী হবেন তাহলে নিশ্চয় প্রথম কেউ নবী থাকবেন? কোরআন ও অন্যান্য ধর্মগ্রন্থ জবুর, ইঞ্জিল, তওরাত ও আরও ১০০টি ধর্মগ্রন্থ এগুলো আল্লাহর গ্রন্থ হয়ে কাদের ওপর নাজিল হল? আবুল আমবিয়া কে? নিশ্চয় ইবরাহিম আ. তা কি মিথ্যা? ইসলামে বর্তমানে যে সব প্রথা চালু আছে পূর্বেও ছিল। আর ইসলাম কি কনিষ্ঠতম ১৪০০ বছরের ধর্ম? আল্লাহর মনোনীত ধর্ম কটা? মাদ্রাসা পর্যদের প্রাক্তন সভাপতি জনাব শ্রদ্ধেয় ড. আব্দুল সত্তার সাহেব চেয়ারে থাকাকালীন ইসলামের ইতিহাসে ইসলামকে পৃথিবীর কনিষ্ঠতম ধর্ম ও হজরত মুহাম্মদ স. কে প্রবর্তক বলে বই প্রকাশ করলে বিশেষ সমালোচনার সম্মুখীন হন। পর্ষদকে পরে তা সংস্কার করতে হয় আরও পরে শ্রদ্ধেয় সত্তার সাহেব বিধানসভা পদে প্রার্থী হলে এ বিষয়টা নিয়ে বিরোধী দল ঘোঁট পাকায়। ধর্মের কল বাতাসে নড়ে। সত্যের জয় অবশ্যহারী। আজ ভাবী সে সব শিক্ষক মহাশয়রা অতীতকে কি স্মরণ করবেন? স্বীকার করবেন নিজেদের অজ্ঞানতা, ক্ষমা চাইবেন স্রষ্টার নামে, যা ভুল করেছেন স্রষ্টার ধর্ম সম্বন্ধে এবং আশীর্বাদ কি রাখবেন এ লেখকের জন্য ?
১৯৮৪ খৃষ্টাব্দে দূরদর্শনে ইসলামী উৎসবে ভাষ্যকার হিসাবে যোগ দিই নিজের পরিচিতজনদের এতে গোঁসা হয়। কয়েকটি গ্রামের মানুষকে নিয়ে আমার বিরুদ্ধে ঘোঁট পাকায়। প্রাণ সংশয়ের আশংকা দেখা দেয়। বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদে। জাদের পিরেরা পিরজাদারা এখন দূরদর্শনে। এঁরা এখন ফ্যাল ফ্যাল করে আহমকের
মত দেখছে আর খরগোশের মতো আমা হতে লুকোচ্ছে।
জ্ঞান যেখানে সংকীর্ণ বিশেষ করে ধর্মের ক্ষেত্রে সেখানে গোঁড়ামী দেখা দেবেই। পৃথিবীর ৬৬৭ কোটি মানুষের ১২৫ কোটি প্রায় মুসলমান। এই একশ পঁচিশ কোটির অর্ধাংশ অবিভক্ত ভারতে বাস করে (ভারতে ২৫ + বাংলাদেশে ১৬ + পাকিস্তানে ১৬ কোটি) আর এরাই সব থেকে বেশী দরিদ্র এবং সবচেয়ে বেশী অশিক্ষিত, এখানেই সব থেকে বেশী শেরেকী করে। এখানেই সব থেকে বেশী ধর্মের নামে নোংরামী চলছে। এখানেই সব থেকে বেশী পীর ও ভণ্ড পীর। এখানেই সব থেকে বেশী ভিখারী। এখানেই সব থেকে বেশী মসজিদ (মসজিদ নগরী ঢাকা) এখানেই সব থেকে বেশী
মসজিদ থেকে ইসলামী ব্যাখ্যা, ইসলামকে দেখতে লেখক কবিরা বাধা পাবেন না তো কোথা পাবেন? হাঁ অন্যত্র বাধা পেয়েছে। সক্রেটিসকে স্বহস্তে বিষ পান করতে হয়েছিল ধর্মের ধ্বজাধারীদের হুকুমে। তবেই বিশ্ব পেয়েছিল সক্রেটিসের ছাত্র হিসাবে প্লেটোকে, প্লেটোর ছাত্র হিসাবে এ্যারিসটটলকে, এ্যারিসটটলের ছাত্র আলেকজান্ডারকে। জ্ঞানীর শত্রু জ্ঞান তা বার বার প্রমাণ হয়েছে। আবু হানিফা, ইমাম শাফীকে শাস্তি ভোগ করতে হয়েছে। ভারতবর্ষে শুধুমাত্র নিজ ধর্মের লোক দ্বারা লেখকদের বাধা প্রাপ্ত হতে হয়নি সেই সংগে সংখ্যাগুরু হিন্দুদের দ্বারাও। বিংশ শতাব্দি পার করে এসেও ভারতে মুসলমান কবি, লেখক, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবীরা অপাংক্তেয় হয়ে আছে। না আছে কোন টি. ভি. চ্যানেল, না আছে একটা দৈনিক। নেই একটা হেলাল কমিটি। নেই একটা মুসলিম যৌথ সংগঠন।
প্রথম সরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কলকাতা মাদ্রাসা (১৭৮০) তা প্রায় নিভু নিভু। এখনও কলকাতার ২০টা মসজিদে আজান পড়ে না। কলকাতার অধিকাংশ মসজিদের ইমাম অবাঙালী। এ বংগের সর্ববৃহৎ শত বৎসরের পুরাতন মসজিদ নাখোদা মসজিদের ইমাম নিয়ে দ্বন্দ্ব শেষে দুজন ইমাম। একজন বেরেলী পন্থী ও একজন দেওবন্দী। সর্বপ্রাচীনতম মসজিদের (টিপু সুলতান, ১৮৩৮ কলকাতা) আরো প্রাচীন টালিগঞ্জ মসজিদ (১৮৩৫) ইমাম করেন ছেঁড়া রাজনীতি এবং তার বিরুদ্ধে পরিচ্ছন্নতার অভাব দেখা যায়। অনেকের মতে কলকাতার সর্বপ্রাচীন মসজিদ নিমতলার শাহ নিয়ামতুল্লাহ মসজিদ। ওয়াকফ বোর্ডের হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি বেহাত ও ধ্বংস হয়। মহসিন কান্ডের টাকার হদিস পাওয়া যায় না। মহসিনের সম্পত্তি ও মহসিনের টাকার মাদ্রাসা, কলেজ, হসপিটাল, এতিমখানা, ইমামবাড়া ধ্বংসের মুখে।
মসজিদ এখন নানা নামে, তবলীগি মসজিদ, হাক্কানী মসজিদ, আহলে হাদিস মসজিদ, মোজাদ্দেদী মসজিদ। এরপর আছে শিয়া, সুন্নী, বোরাহ, আহমদীয়া মসজিদ। পীরের নেই সীমা পরিসীমা। পীরের বেটা মূর্খ, তাকোয়া পরহেজগারহীন হলেও পীর। পীরের খলিফা হয়ে বসছেন প্রথম জীবনে মুহুরী, মজুর, পাটের ব্যবসায়ী। ভণ্ড ফকিরের তো হিসাব নেই। ন্যাড়া ফকির থেকে শুরু করে ডান্ডা ফকির, মাজভান্ডারী, দ্বীনসত্ত্ব। ন্যাড়া ফকিরের দল যেমনি কোরআন শরীফকে ১০ পারা বলে মানে তেমনি পীর ভায়ের সংগে মহবতের জন্য বউ বদল করে থাকে। যেমন মুসলমান যাযাবর শ্রেণি বউ বন্ধক দিতে পরান্মুখ হয় না।
এই অবস্থার মাঝখানে মুসলিম লেখক কবিদের সাহিত্য সংস্কৃতি চর্চা নানা ভাবে আপাংক্তেয় হয়ে আছে। এই অপাংক্তেয়দের তালিকা নিম্নরূপ মনসুর বয়াতি, চারণ কবি গুমানি দেওয়ান, হাবিবুল্লাহ বাহার, মুহা এনামুল হক, সাবিরিদ খান, সোনাগাজী, সেখ ফয়জুল্লাহ, দৌলত উজির, মহম্মদ কবির, মুহাম্মদ সগির, জৈনুদ্দিন, মোজাম্মেল। মুহাম্মদ সাকিরের 'ইউসুফ জুলেখা', জৈনুদ্দিনের 'রসুল
বিজয়', মোজাম্মেলের 'সায়ং নামা' ও 'খঞ্জন চরিত্র' বিশেষ উল্লেখযোগ্য। বাংলা সাহিত্যের প্রথম নিদর্শন চর্যাপদ, হরপ্রসাদ শাস্ত্রি দ্বারা নেপালের রাজদরবার থেকে ধর্ম মংগল, মনসা মংগল, চন্ডিমংগল প্রভৃতি। কিন্তু সবই ধর্মউপখ্যান, কিন্তু বাংলা উদ্ধার কৃত। চর্চাপদ যা একশ বছর আগে মাত্র উদ্ধার হয়েছে। পরবর্তিতে কৃষ্ণকীর্তন, সাহিত্যে প্রথম, স্রষ্টার গুণকীর্তন বাদ দিয়ে প্রেমাউপাখ্যান প্রথম লেখেন মুসলিম কবিরা। ষোড়শ শতক থেকে মুসলিম কবিরা কাব্যের বিষয় করেন মানব নির্ভর, বাংলা সাহিত্যের প্রথম নিদর্শন।
চার পাঁচ'শ বছর যাবৎ যা রচিত হয়েছে দেবতার গুণ গান, দেবতা মাহাত্ম। প্রথম মানব প্রেম, মানবের হাসিকান্না সুখ দুঃখ নিয়ে লেখা শুরু হল তথা পদকর্তারা মাটির পৃথিবীতে নেমে এলেন ষোড়শ শতকে। হিন্দু কবিদের দ্বারা প্রথম মানবের কথা লেখা হয়নি। তাদের সুখ দুঃখের কথা ব্যক্ত করেন সপ্তদশ শতাব্দীর কবিদের মধ্যে সৈয়দ সুলতান, মুহাম্মদ খান, হাজী মুহাম্মদ, এঁরা বাংলা দেশের চট্টগ্রামের আরাকানের বাসিন্দা। এঁদের মধ্যে উজ্জ্বলতম মুহাম্মদ খান, এই শতকের কবি যাঁদের নাম বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য দৌলত কাজী ও আলাউল। আলাউল ও দৌলত কাজী আরকান হিন্দু রাজের দাক্ষিণ্য পায়। এঁদের শ্রেষ্ঠ রচনা ‘ময়না মতি' প্রেম উপখ্যান হিসাবে আজও ভাবায়। এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্য তালিকা ভুক্ত। শ্রদ্ধেয় ড. দীনেশ চন্দ্র সেন ময়মন সিংহ গীতিকা' সংগ্রহ করে দেখিয়েছেন, এ এক সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ, সাহিত্য রসিক রোমা রোঁলা পর্যন্ত ময়মনসিংহের মদিনা বিবির সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়েছেন। এর সঙ্গে নাম করা যায় আকবর, লালন ফকির, লাল মামুদ, সৈয়দ মোরতজা, নাসির মামুদ, আলি রেজা, মুহাম্মদ সগির সাবিয়িদ খান, হায়াত মামুদ।
এরপরে ধারাবাহিকভাবে মুসলমান কবি লেখকদের দেখব, এঁদের অধিকাংশ গ্রামে থেকে সাহিত্য চর্চা করে জনগনের হেঁসেলের লেখক কবি হতে পারেননি, দু'একজন
ছাড়া।
বিষাদ সিন্ধু - মীর মোশাররফ হোসেন ১৮৮৫ -
উদাসীন পথিকের মনের কথা - মীর মোশাররফ হোসেন - ১৮৯০
• প্ৰেম দর্পন - আঞ্জুমদ আলি - ১৮৯১
প্রণয়বাণী - সেখ আব্দুর রহিম ১৮৯২
নিষদ কুমারী - কাফিলউদ্দিন আহমদ ১৮৯৩
• তারাবাঈ মনোহরা - মুহা, অখিলউদ্দিন ১৮৯৬
গাজী মিয়ার বস্তানী - মীর মোশাররফ হোসেন ১৮৯৯
• হাফেজ সাহেব ওসমান গাজী ১৯০০
আমির জানের ঘরকন্না - মুন্সি রিয়াজউদ্দিন ১৯০০
• যমুনা - মতিয়ার রহমান খান - ১৯০৪
• লাইলা মজনু - সেখ ফজলুর রহমান ১৯০৪ • মোক্ষপ্রাপ্তি - মতিয়র রহমান ১৯১০
• জোলেখা
• গল্পসুধা • মৎস লীলা
• আনোয়ারা
আব্দুল লতিফ ১৯১০
মোহা. আব্বাস আলি ১৯১১
- ইমামউদ্দিন আহমদ ১৯১১ নজিবর রহমান ১৯১৪
• সাধনার জয় জানে আলম চৌধুরী ১৯১৪ • রসের খনি - আব্দুল লতিফ ১৯১৪
• রায় নন্দিনী - সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী ১৯১৫ • আকর্ষণ মোহম্মদ নূরুল হক চৌধুরী ১৯১৫
--
• প্রেমের সমাধি - মুহাম্মদ নাজিবর রহমান ১৯১৫
• পরীর কাহিনী সেখ হাবিবুর রহমান ১৯১৫
• বংগের জমিদার নূরুল হক ১৯১৬ • বেগম - তারিকুল ইসলাম ১৯১৬
• জোহরা মোজাম্মেল হক ১৯১৬
• কনৌজ কুমারী - সফিউদ্দিন আহমদ ১৯১৬ • সৈয়দ সাহেব - সফিউদ্দিন আহমদ ১৯১৬ • চাঁদতারা - মুহা. নজিবর রহমান ১৯১৬ • পল্লীসংসার - মোহা. আব্দুল হালিম ১৯১৮ • নদীবক্ষে - কাজি আব্দুল ওদুদ ১৯১৮
• শিরি ফরহাদ - এম. নাসির উদ্দিন ১৯১৮ • সরলা মোহা. লুৎফর রহমান ১৯১৮
• বিবি রহিমা শেখ ফজলুল করিম ১৯১৮ • দরাফ খাঁ গাজী - মোজাম্মেল হক ১৯১৯ • রায়হান মোহা. লুৎফর রহমান ১৯১৯ • পথহারা মোহা. লুৎফর রহমান ১৯১৯
• রূপের নেশা - গোলাম মোস্তাফা ১৯১৯
• সতী রহিমা - মোহা মনসুর আলি - ১৯১৯
• লায়লী - কামালউদ্দিন আহমদ ১৯১৯ • আলমগীর - সেখ হাবিবুর রহমান ১৯১৯
• কালা পাহাড় - মোহা নূরুল হক ১৯২০ সেখ আব্দুল গফুর ১৯২০ • সুলতানা রিজিয়া
• মজনু দুহিতা - সেখ ইদরিস আলি ১৯২০
• মোমেনা - আরশাদ আলি ১৯২০
পরের সংগে - সাহাদাৎ হোসেন ১৯২০
• হিরণ রেখা - সাহাদাৎ হোসেন - ১৯২০
• শপথ - আবু সৈয়দ মোহা. সিদ্দিক হোসেন লোহানী ১৯২০
• স্বামীর ভুল - সাহাদাৎ হোসেন ১৯২১
• রিক্ত - সাহাদাৎ হোসেন ১৯২১
• মরুর কুসুম - সাহাদাৎ হোসেন ১৯২০
• ভাঙাবুক - গোলাম মোস্তাফা ১৯২১
• জোবেদা - এম. এফ. খাতুন ১৯২১
• কাঁচা ও মনি - একরামউদ্দিন ১৯২১
• মিলন কুটির - মোহা. বেলায়েত আলি ১৯২১
• জেন পরী - সেখ হাবিবর রহমান ১৯২২
• তারাবাঈ - সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী ১৯২২
• জোবেদা - মুহাম্মদ ইব্রাহিম ১৯২২
• আলোকের পথে - কে. এম. মাজহারুল ইসলাম ১৯২২
• দুর্গেশ নন্দিনী খিজির খাঁ - সৈয়দ আবুল হোসেন ১৯২২
• কপাল কুণ্ডলা বা পথের সতীন - আবুল হোসেন ১৯২২ • ইঁদুর বা বিষবৃক্ষ - আবুল হোসেন
১১২২
• কৃষ্ণকান্তের উইল / বিধবা বিবাহ - আবুল হোসেন ১৯২২ • যুগলাঙ্গরীর বা সত্য সাধ্বি - সৈয়দ আবুল হোসেন ১৯২২
• ইন্দিরা বা ডাকিনী - সৈয়দ আবুল হোসেন ১৯২২
• আনন্দমঠ বা নন্দের নন্দী - সৈয়দ আবুল হোসেন ১৯২২
• সীতারাম বা কাগজ রাজা - সৈয়দ আবুল হোসেন ১৯২২
• বোতরী - শাহাদাৎ হোসেন ১৯২২
• যুগের আলো - শাহাদাৎ হোসেন ১৯২২
• সোফিয়া - মোবারক আলি ১৯২২
• সোনার কাঁকন - শাহাদাৎ হোসেন ১৯২৩ অপরিচিতা - এম. মনির হোসেন ১৯৯৩
• স্বপ্নের ঘোর - আব্দুল খালেক চৌধুরী ১৯২৬
• নূরউদ্দিন - সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী ১৯২৩ গরীবের মেয়ে - মোহা. মুজিবর রহমান ১৯২৩ নারীর ধর্ম - সৈয়দ মোবারক আলি ১৯২৪
সফুরার পরিণাম মুহা, রহমতুল্লাহ ১৯২৪
• নিমক হারাম - মোহা. শাহজাহান ১৯২৪
• পদ্মরাগ বেগম রোকেয়া শাখাওয়াৎ হোসেন ১৯২৪
• ফিরোজা বেগম - সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী ১৯২৪
• রাজবী ইবরাহিম - সেখ ফজলুল করিম ১৯২৪
• সালেহা - আবুল ফাত্তাহ কোরেশী ১৯২৫
• পাশে গেলে - মোহা মোজাফফরউদ্দিন ১৯২৫
• জরিনা - মুহা আব্দুর রসিদ সিদ্দিকী - ১৯২৫
• স্বামীরত্ন - আফসার উদ্দিন ১৯২৫
• আব্দুল্লাহ - কাজি এমদাদুল হক ১৯২৫
• কুহেলিকা - কাজী নজরুল ইসলাম ১৯২৫
• জানকী বাঈ - নূরুন্নেছা খাতুন বিদ্যা বিনোদনী - ১৯২৫
• আত্মদান
• জীবন মরু
• প্রেমবিকাশ
নূরুন্নেছা খাতুন বিদ্যা বিনোদনী - ১৯২৫
দীন মুহাম্মদ ১৯২৬
খোন্দকার আব্দুল মজিদ ১৯২৬
• ছিন্নতার - আব্দুর রহমান খান ১৯২৬
• অনাথিনী খান মুহা. মঈনুদ্দিন ১৯২৬
• ব্যক্তিত্বের ডায়েরী মোহা. গোলাম জিলানী ১৯২৬ • চৌচির - আবুল ফজল ১৯২৭
• পরিণাম - মুহা. মুজিবর রহমান ১৯২৭
• ভুলের বাঁধন
মোহা. গোলাম জিলানী ১৯২৭
• চোখের আলো খোন্দকার মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ ১৯২৭
• মিলন বাসর - মোহা আব্দুল গফুর ১৯২৭
• তিলক ও ইছামতি - ইবরাহিম মোল্লা ১৯২৭
• বিবাহ বিভ্রাট সৈয়দ আবুল হোসেন ১৯২৭
• বাঁধন হারা - কাজী নজরুল ইসলাম ১৯২৭
• মিশর কুমারী - সৈয়দ আবুল হোসেন ১৯২৭
• হাজেরা সৈয়দ এমদাদ আলি ১৯২৮
• জীবনের সাথী - মোমতাজ উদ্দিন আহমদ ১৯২৮
• জেবুন্নেসা আব্দুল লতিফ ১৯২৮
• লুৎফুন্নেসা - সৈয়দ এ. এস. এম. ইসমাইল ১৯২৯
• দুঃখের সংসার - শামসের আলি ১৯২৯
• গাঙ্গুলী মহাশয়ের সংসার কামরুন্নেছা খাতুন ১৯২১

মাটির মানুষ - আকবর উদ্দিন ১৯২৯
• পথের দেখা - শাহাদাৎ হোসেন ১৯২৯
• মেহদী - মোহাঃ গোলাম জীলানী ১৯২৯
• হাফেজা - সৈয়দ এমদাদ আলি ১৯২৯ আকবর উদ্দিন ১৯৩০
• বেড়াজাল
• অভিনেতা - আকবর উদ্দিন ১৯৩০
• আলি হোসেন - কাশবাউদ্দিন আহমদ ১৯৩০
• ঘুর্ণি হাওয়া - বন্দে আলি মিয়া ১৯৩০
• সত্যের জয় - নূরবক্স পণ্ডিত ১৯৩০
মনের ভুল - মহিউদ্দিন আহমদ ১৯৩০
• শোভন প্রেম - মোহা. জুলফিকার হায়দার ১৯৩০
• প্রাণের টান - আব্দুর রাজ্জাক ১৯৩০
• নেকনজর - মুহা. হেদায়েতুল্লাহ ১৯৩০
• তাজিয়া - মুহা হেদায়েতুল্লাহ ১৯৩০
• মৃত্যুক্ষুধা - কাজী নজরুল ইসলাম ১৯৩০,
• আজাদ - আব্দুল ওদুদ ১৯৩০
• কাঁটাফুল - শাহাদাৎ হোসেন ১৯৩০
• জোলেখা - মুন্সি রিজাজুদ্দিন আহমদ
• বিদ্রোহী জোয়ার ভাঁটা - সেখ ফজলুল করিম
• প্রতাপ নন্দিনী - সফিউদ্দিন আহমদ
• শেষ সংসার - ইদরিস আলি
• দরবেশ কাহিনী, নূতন বই বংকিম দুহিতা - ঐ
• ঘরের লক্ষ্মী - লাইলা মজনু, শিরি ফরহাদ, ইউসুফ জোলেখা - শাহাদাৎ হোসেন
• নুতন না, জীবন পণ - একরামুদ্দিন
• নারী হরণ - মোহা. শাহজাহান
• মেজো - আব্দুর রহমান খান
• উপেন্দ্র নন্দিনী, মেহেরুন্নেসা, নূরন্নেহার - আব্দুর রহমান রশিদ সিদ্দিকী • সারের বংশের কন্যা - (কবিতা সংকলন) করিমুন্নেসা খানম - ১৮৫৫-১৯২২ ইনি বেগম রোকেয়ার বড় বোন। ব্রোকেরা মতিচুর বইটি এঁকে উৎসর্গ করেন • রূপ জালাল, সঙ্গীত লহরী, সঙ্গীত সার - নবাব ফয়জুন্নেসা চৌধুরাণী (১৮৩৪-
১৯০৪)
• দা হারসিটি-টমাস প্যানেলের ইংরাজী বই-এর বাংলা অনুবাদ সম্ভবত ইনি প্রথম
ইংরাজী শিক্ষিত বাঙালী মুসলমান, আজিজন্নেসা - ১৮৮৪ খৃ.।
বলা হয় অসি চেয়ে মসি শক্তিশালী। তাই মুসলিমরা সাদা কাগজকে কালিমা লিপ্ত করেছেন, কিন্তু আমরা যে ভারতবর্ষে বাস করছি তার ছায়ায় পড়ে গেছি। কোন মতেই মেঘ কাটছে না। এইভাবেই শিক্ষা বিস্তারে মুসলমানদের দান স্মরণীয়। বাংলা আধুনিক শিক্ষা বিস্তারের মুসলিম দিশারী হিসাবে যাদের দেখি
• মওলানা উবায়দুল্লাহ উবায়দী সুহরাওয়ার্দী (১৮৩৪ - ১৮৮৫)
• নবাব আব্দুল লতিফ (১৮২৮
১৮৯৩)
• নবাব স্যর খাজা আব্দুল গণি (১৮১৩ - ১৮৯৬)
• নবাব স্যর খাজা আহসানুল্লাহ (১৮৪৬ - ১৯০১)
• নবাব সৈয়দ সোবহান চৌধুরী
• নবাব স্যর খাজা সলিমুল্লাহ (১৮৭১-১৯১৫)
• খান বাহাদুর মুহাম্মদ আলি নবাব চৌধুরী (১৮৬০ - ১৯১১)
• নবার হোসসাম হায়দার চৌধুরী (১৮৬৮ - ১৯২১)
• নবাব স্যর সৈয়দ সামসুল হুদা (১৮৬২ - ১৯২২)
• আব্দুল আজীজ খান বাহাদুর (১৮৬৭ - ১৯২৬)
• নবাব সৈয়দ নবাব আলি চৌধুরী (১৮৬৩ - ১৯২৯)
• ওয়াজেদ আলি খান পন্নী (১৮৭১ ১৯৩৬)
• খান বাহাদুর হেমায়েত উদ্দিন আহমদ (১৮৭১-১৯৩৬)
• মৌলবী আব্দুল করিম (১৮৬৩ - ১৯৪৩)
• নবার স্যর আব্দুল করিম গজনবী (১৮৭২ - ১৯৩৯)
• স্যর আব্দুল হালিম গজনবী
• স্যর খাজা নাজিমুদ্দিন (১৮৯৪ - ১৯৮৪)
• হাসান সোহরাবর্দি
• এ. কে. ফজলুল হক (১৮৭৩ - ১৯৬২)
• খান বাহাদুর আহসানুল্লাহ (১৮৭৩ - ১৯৬৫)
• খান বাহদুর দেলওয়ার হোসেন (১৮৪০ - ১৯১৩)
• নবাব মির্জা শুজাত আলি খান বাহাদুর (১৮৬০ - ১৯১৭)
• সৈয়দ আমীর আলি (১৮৪৯
১৯২৮)
• সৈয়দ ওয়াহেদ হোসেন (১৮৭৬ ১৯৩৬)
• স্যর মুহাম্মদ আজিজুল হক (১৮৯২ - ১৯৪৭) যে সব নারী শিক্ষা বিস্তারে অর্থ, চিন্তা দিয়েছেন
• খুজিস্তা আখতার বানু ওরফে সুহরাওয়ার্দি বেগম (১৮৭৪ - ১৯১৯)
• আলহজ মরহুমা নবাব ফয়জুন্নেসা চৌধুরাণী (১৮৩৪ - ১৯৩৩)
• বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন (১৮৮০-১৯৩২)
• আলাহজ মরহুমা সওলাতুন্নেসা (দেগঙ্গা, প. ব.)
আমরা কবি লেখক (কোলকাতা) বলতে নজরুল, ওয়াজেদ আলি, জসিমুদ্দিনকেই চিনি কিন্তু বহু মুসলিম লেখক কবি এবং শিক্ষাবিদ ও শিক্ষানুরাগীদের আমাদের চেনানো হয়নি। যেমন বন্দে আলি মিয়া ২০ হাজার পদের মহাকাব্য লেখেন। মুসলিম কবিদের মধ্যে একমাত্র একে মহাকবি বলা হয়। এঁর মহাকাব্যের নাম ‘মহাশ্মশান'।
এঁর বিখ্যাত কবিতা তখন ঘরে ঘরে মুখে মুখে ঘুরত
আমাদের ছোট গাঁয়ে
ছোট ছোট ঘর
থাকি সেথা সবে মিলে
নাহি কেহ পর
পাড়ার সকল ছেলে
মোরা ভাই ভাই
এক সাথে খেলি আর
পাঠশালায় যায়।
ওয়াজেদ আলি বেঁচে আছেন তাঁর একটা লাইনের দ্বারা 'সেই' ট্রাডিশন সমানে চলেছে।'
গোলাম মোস্তাফাও বেঁচে থাকবেন তাঁর কবিতার একটা লাইনের জন্য শিশুর পিতা ঘুমিয়ে আছে সব শিশুরই অন্তরে'।
তবে গোলাম মোস্তাফা কেয়ামত তক বা যতদিন বাংলা ভাষা থাকবে ততদিন বেঁচে থাকবেন সুরা ফাতেহার বাংলা কাব্যিক তরজমার জন্য 'অনন্ত অসীম প্রেমময় তুমি বিচার দিনের স্বামী।'
আবু সৈয়দ আইয়ুব, সৈয়দ মুজতবা আলিকে ও কবি সাহাদাৎ হোসেনকে ভুলতে বসেছি। হাতের কাছে মোস্তাফা সিরাজ, রেজাউল করিম, আব্দুল জব্বার, আব্দুর রহমান, আজহারউদ্দিন, আব্দুল গণি, বেসারত আলি, নূরুল ইসলাম মোল্লা, আব্দুল রাকিব, ইবনে ইমামকে ও, আব্দুল আজীজ আল-আমানকে লেখক হিসাবে। সম্পাদক হিসাবে মুহাম্মদ নাসিরুদ্দিন সাহেবকে (১৮৮৯ - ১৯৯৪) আমার চোখে ও স্মরণে বিশ্বরেকর্ড কারী সম্পাদক। প্রায় ৮০ বছর বাংগিয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন। নজরুল ইসলাম প্রথম কবিতা জ্যৈষ্ঠ ১৩২৬ সপ্তম বর্ষ প্রথম সংখ্যায় (১৯১৯) ইনার সম্পাদিত পত্রিকায় দূর হতে পাঠান এবং হাবিলদার কাজী নজরুল ইসলাম নামে মুদ্রিত হয়। উল্লেখ্য নজরুল কবি হলেও নজরুলের প্রথম প্রকাশিত বিষয় ছিল গদ্য 'বাউন্ডুলের আত্মকাহিনী' পরে যে কবিতা প্রথম বের হয় তা 'মুক্তি' 'রংগিয় মুসলমান সাহিত্য' ১৩২৬ শ্রাবণ (১৯১৯) সংখ্যায় যাঁর
সম্পাদক ডঃ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ, প্রথম কয়েক ছত্র
রাণীগঞ্জের অর্জুন পার্টির বাঁকে
সেখান দিয়ে নিতুই সাঁঝে ঝাঁকে ঝাঁকে
রাজার বাঁধে জল নিয়ে যায় শহরে বৌ কলস কাঁধে।
নজরুলের প্রথম দিকের লেখা 'সওগাত' পত্রিকায় প্রকাশিত হয় এবং তা সম্পাদনা করতেন নাসিরুদ্দিন সাহেব। দেশ স্বাধীন হলে একে একে সমস্ত মুসলিম বুদ্ধিজীবী ওপারে চলে যান, যেমন শহীদুল্লাহ সাহেব, জসিমুদ্দিন, কায়কোবাদ। এপারে রয়ে যান আব্দুল ওদুদ, সৈয়দ মুজতবা আলি। ওদুদ ও মুজতবা আলি উভয়ের প্রতি প্রভাব পড়েছিল রবীন্দ্রনাথের। মুজতবা আলি বিশ্বপথিক। বিশ্বভারতীর সঙ্গে তাঁর সরাসরি যোগ ছিল। তেমনি ওদুদ সাহেবের লেখাকে যেমনি রবীন্দ্রনাথ সাদরে গ্রহণ করেছিলেন তেমনি তাঁর চিন্তাধারাকে সমর্থন করেছিলেন। অল্প বয়সে নিজের লেখার সমালোচনা পড়ে, রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন 'এমন সমঝদার পাঠক পাওয়া লেখকের পক্ষে ভাগ্যের কথা। আরো বলেন 'এ দেশে হিন্দু মুসলমান বিরোধের বিভীষিকায় মন যখন হতাশ্বাস হয়ে পড়ে এই বর্বরতার অস্ত কোথায় ভেবে পাই না, তখন মাঝে মাঝে দূরে সহসা দেখতে পাই দুই বিপরীত কূলকে দুই বাহু দিয়ে আপন করে আছে এমন এক একটি সেতু। আব্দুল ওদুদ সাহেব চিত্ত বৃত্তির ঔদার্য সেই মিলনের একটি প্রশস্ত পথ রূপে যখন আমার কাছে প্রতিভাত হয়েছে এখন আশান্বিত মনে আমি তাঁকে নমস্কার করেছি।' ভাল পাঠক না হলে লেখক, সমঝদার এবং সমালোচক ও জ্ঞানী হওয়া যায় না। আফসোস আমার, বাংলার মুসলমানের কাছে বাংলার মুসলিম শিক্ষক ছাত্র স্নাতকদের কাছে, এঁরা সম্পর্ক রাখল না পাঠাগারের পুস্তক বা জ্ঞানী ব্যক্তির সংগে। জ্ঞানী ব্যক্তির সংগে সংস্পর্শে আসা মানে তিনি দার্শনিক হলে দর্শনের সংগে পরিচিত হওয়া, তিনি ধার্মিক হলে ধর্মের সংগে পরিচিত হওয়া, তিনি কবি হলে কবিতার সংগে পরিচিত হওয়া, তিনি সমাজ বিজ্ঞানী হলে সমাজের সংগে পরিচিত হওয়া, তিনি ভাল চিকিৎসক হলে চিকিৎসা বিজ্ঞানের সংগে পরিচিত হওয়া যাবে। বাংলার আট কোটি মানুষের সংগে আড়াই কোটি মুসলমানের সৌভাগ্য যে তারা জাতীয় গ্রন্থাগার তাদের মূল শহর তথা হাতের কাছে পেয়েছে। আলিপুরের এই জাতীয় গ্রন্থাগারের সংগে মুসলিম ঐতিহ্যও যুক্ত হয়ে আছে। এই গ্রন্থাগারের মূল বিল্ডিংটি তৈরী হয়েছিল মুসলিম মোগল সম্রাটের এক নাতির জন্য। কালক্রমে সেটি ছোটলাটের বাড়ী পরে ন্যাশনাল লাইব্রেরী হয়। বর্তমানে তৈরী হয়েছে নতুন পাঠাগার ভবন নাম দেওয়া হয়েছে 'ভাষা ভবন' যা ৪০ হাজার স্কোয়ার ফুট জুড়ে সম্পূর্ণ শীততাপনিয়ন্ত্রিত। এখানকার পাঠক গ্রাহকদের মধ্যে মুসলিম নেই বললেই চলে। অথচ আরবী, উর্দু, ফারসী, এমন কি হিব্রু ভাষায় বহুল সম্পদে সমৃদ্ধ। আমরা আলিপুরের চিড়িয়াখানায় বাঁদর লাফ দেখতে যাই কিন্তু দশ হাত দূরের মানুষ হবার কারখানা জাতীয় গ্রন্থাগারে যায় না। বহু সম্পদে পূর্ণ কলকাতা মাদ্রাসা লাইব্রেরী ধ্বংস করেছি, এশিয়াটিক সোসাইটি লাইব্রেরীতে প্রাচ্য পাশ্চাত্যের অতীত গুমরে কাঁদছে তা আমরা চেয়ে নেড়ে দেখি না। এখানে সম্রাট ঔরংগজেবের হাতের লেখা কোরআন থেকে বাবয়ের বাবর নামা ও তুর্কী ভাষায় লেখা,
গুলবদনের, জাহানারার লেখা বই কাচের আলমারীতে গোমরাচ্ছে। বংগীয় সাহিত্য পরিষদ পাঠাগারের চর্যাপদ থেকে বহু ইতিহাসগ্রন্থ স্তূপকৃত আমরা নির্বিকার, পার্টনার খোদাবক্স লাইব্রেরী, কলকাতার শ্রীচৈতন্য পাঠাগার, মুরশিদাবাদের হাজারদোয়ারী পাঠাগার, উত্তরপাড়ার জয়কৃষ্ণ লাইব্রেরী নানা ম্যাগাজিন পত্র-পত্রিকায়, পুস্তকে সমৃদ্ধ। পাঠাগারে সময় কাটান, সে তো স্বর্গে বাস। আর জ্ঞানী ব্যক্তির সংগে সাথ দেওয়া সে
তো ফেরেশতাদের সংগ।
আব্দুল ওদুদ সাহেবকে থ্রি আরসপন্থি বলা হয়। বহু মনীষীর আসন ছিল ওদুদের ভাবরাজ্যে প্রথিত তার মধ্যে এই তিনজনের রামমোহন, রবীন্দ্রনাথ ও রোমা রোলার স্থান ছিল মনের বিশেষ গভীরে, রোঁমা রোঁলা ছিলেন গান্ধী ও রামকৃষ্ণের ভক্ত, রোমা বোলার 'জাঁ ক্রিস্তাফার' চরিত্র যার মধ্যে জার্মান ও ফরাসী সংস্কৃতির মিলন দেখা যায় যা পড়ে ওদুদের মননের সুচারু পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। ওদুদ সাহেবের ভাষায় 'এতদিন ছিলাম মুখ্যত শিল্পী, এইবার হলাম জীবন জিজ্ঞাসু।'
রামমোহন একই সঙ্গে প্রখর যুক্তিবাদী ও ঈশ্বর সমর্পিত চিত্ত। ওদুদও তাই। সে জন্য ওদুদকে নির্দিধায় রামমোহন পন্থি বলা যায়। যাঁদের প্রভাবে ওদুদের মানস জীবন গঠিত হয়েছিল। মুহাম্মদ স. এর এক স্রষ্টাবাদ এবং সুচিন্তিত সবল কার্যাবলি আশ্চর্যজনকভাবে প্রভাবশীল ছিল। দার্শনিক ইবনে রুশদের যুক্তিবাদিতা, ইউরোপীয় রেঁনেশাঁস এবং মোতাজেলাদের দর্শন তাঁর মননে প্রভাব ফেলেছিল, পূর্ব বাংলায় এক সভায় ভাষণ দিতে গিয়ে বলেন, ‘রামমোহনকে ও তাঁর প্রবর্তিত ব্রাহ্ম আন্দোলনকে অন্তর দিয়ে শ্রদ্ধা করতে পেরেছি বলে আমি নিজেকে ভাগ্যবান বলে মনে করি।' ‘রবীন্দ্রনাথের রচনা রীতির অনুসরণ না করলেও সাহিত্যিক রবীন্দ্রনাথকে তিনি গ্রহণ করেছিলেন আদর্শ হিসাবে তাঁর দিনলিপির পাতায় বিধৃত এই উচ্চাঙ্গ মন্তব্য 'আমার ধারণা ছিল রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টি হয়ত আমার ভিতর দিয়েই প্রকট হতে যাচ্ছে।'
ওদুদ ও রবীন্দ্রনাথের মধ্যে সবচেয়ে সাচুর্য দেখি ঈশ্বর ভাবনায়। ২০ জানুয়ারী ১৯২৪ - এর দিন লিপিতে দেখি ‘প্রায় সমস্ত দিন খোদার চিন্তায় কেটেছে বলা যায় অর্থাৎ তাঁকে কেমন করে সমস্তর মাঝখানে উপলব্ধি করব সেই কথা।' গোলাম মোস্তাফা বলেন, 'কবি সম্রাট রবীন্দ্রনাথ তাঁর গীতি কবিতায় যেভাব আদর্শ ব্যক্ত করিয়াছেন তাহার সহিত ইসলামের চমৎকার সৌসাদৃশ্য। তাঁহার ভাব ও ধারণাকে যেকোন মুসলমান অনায়াসে গ্রহণ করিতে পারে। স্রষ্টা শ্রেনী ওদুদও একইভাবে রবীন্দ্র রসে মজেছিলেন। ওদুদ সাহেব বলেছেন। রবীন্দ্রনাথ নোবেল পুরস্কার পাবার (১৯১৩) পূর্বেই গীতাঞ্জলি কিনি। তারপর থেকে আমি রবীন্দ্রনবাগী। ওদুদের লেখা পড়ে রবীন্দ্রনাথ বলেন, এতে মনের জোর, বুদ্ধির জোর, এবং কলমের জোর এক সংগে মিশেছে। পরে রবীন্দ্রনাথ,
সাড়াও দেন। জ্ঞান বলতে তিনি বলেছিলেন জ্ঞান অন্বেষণ। অন্বেষণ নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে,
সর্বত্র। নানাভাবে। নানা প্রকারে তাঁর মতে কোন জ্ঞানই সম্পূর্ণ নয়, একটা বুঝতে হলে বহু বইয়ের জ্ঞান থাকা চাই। তেমনি গুরু আব্দুল ওদুদের কাছে শাস্ত্রের উর্দ্ধে। সত্যকে মানুষ চিরকাল দেখে এসেছে সত্যাদেবীকে দেখে। আনের ক্ষেত্রে ে জন্য গুরুর মূল্য গ্রন্থ চাইতে অনেক বেশী, গুরু কে? যাঁর একটা আর্টিকেল পড়ি, বার বই পড়ি, যাঁর কথা শুনে শিখি, যাঁর বই দেখে লিখি, যিনি পরীক্ষার বার্তা দেখেন, যিনি সন্ধর্বপত্র দেখেন তিনিও গুরু।
ইসলাম সম্বন্ধে বলতে গিয়ে ইসলামের প্রধান ধর্মগ্রন্থ কোরান, কোরান এর নীচে হাদিস। এদের বিধিবিধানই শরিয়ত। কোরআন আর হাদিসের লক্ষনীয় পার্থক্য কোরআন 'রূপের চেয়ে 'ভাবের' ওপর জোর দেয়, এদের নির্দেশ পালন করে ইহকাল ও পরকাল মংগলময় হবে। সৈয়দ আহমদের কথা তিনি পুরাপুরী বিশ্বাস করেছেন 'যা সত্য নয় তা ইসলাম নয়' পীর বংশের ছেলে হয়ে স্বয়ং শিক্ষিত মানুষটি আজাদ ইসলামকে জেনে চিনে অন্তরস্থ করেছিলেন। পিতা খয়রুদিনের কলকাতা মাদ্রাসার শিক্ষার প্রতি আস্থা ছিল না (১৯০৪ খ্রীঃ) নিজে হয়েছেন শিক্ষক। পুত্র নিজে আধুনিক শিক্ষার জন্য শিক্ষক খুঁজে নিয়েছেন। আরবী, ফারসী উর্দু শিক্ষার পর জাফরী' কে ইংরাজীর শিক্ষক করেছেন। মাত্র ১৫ বছর বয়সে পত্রিকা সম্পাদনায় নেমে পড়েছেন পরবর্তিতে সারা ভারতবর্ষের শিক্ষা নিয়ন্ত্রক কর্তা হন, হন ভারতের সর্বশ্রেষ্ট শিক্ষামন্ত্রী। প্রথম সাধারণ নির্বাচনের পর প্রথম শিক্ষামন্ত্রী নাম নেন আজাদ। পরে হজরত মওলানা আবুল কালাম আজাদ। ১৯১২ সালে ১৩ জুলাই আল হেলাল উর্দু সাপ্তাহিক। ১৯১৫, ১২ নভেম্বর আল বালাগ পরে লিসনাল সিদক প্রকাশ করেন। এসব পত্রিকা যেমনি সুচারু ভাবে ছাপা হত তেমনি তেজদীপ্ত লেখা। যে মুসলমান আজ শিক্ষা থেকে দূরে সেখানে আবুল কালাম আজাদ ভারতীয় শিক্ষার খোল নলচে বদল করতে ১৯৪৭ সালেই ড. তারাচাঁদ কমিশন, ১৯৫২ সালে রামস্বামী মুদালিয়া কমিশন, ১৯৪৮ সালে বিশ্ববিদ্যালয় ও উচ্চশিক্ষা উন্নয়নের জন্য ড. সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণাণ কমিশন, ইউনিভারসিটি গ্রান্ট কমিশন, ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর কালচারাল রিলেসন্স এবং ইনডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স। তাঁর এত প্রচেষ্টা সবই ব্যর্থ, যখন দেখি অর্ধেক ভারতবাসী অজ্ঞতার অন্ধকারে। নারী শিক্ষার জন্য প্রথম নারী শিক্ষালয় ১৯০৯ খ্রীষ্টাব্দে খুজিস্তা খানম কর্তৃক। তারপর ১৯১১ খৃষ্টাব্দে বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত কর্তৃক ১৩ নং ওয়ালিওয়াল্লা লেনে, যা এখনও সচল শিক্ষা বিস্তারে। বিদ্যাসাগর নারী শিক্ষা বিস্তারে যেমনি ডজনাধিক, বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন তেমনি নবাব ফয়জুন্নেসা চৌধুরাণী একাধিক স্কুল, এতিমখানা, রাস্তাঘাট, পানিয় জলের ব্যবস্থা করেন। তেমনি সওলাতুন্নেসা একমাত্র মহিলা নারী শিক্ষার জন্য বিদেশে মক্কার কাবার অদূরে নিজ টাকায় মাদ্রাসা ও মসজিদ করেন। যা আজও সরকারী মাদ্রাসা হিসাবে চলছে। শুধু তাই নয় জমিদারীর অধিকার পেয়ে বাংলায় বহু শিক্ষা ও শিক্ষা সংশিষ্ট প্রতিষ্ঠান করেন। বাঙালী মহিলা ফয়জুন্নেসার
টাকায় আরও একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মক্কায় প্রতিষ্ঠা পায়। কিন্তু বেশীদিন টেকেনি। যে দেশে গুণীর সমাদর হয় না সে দেশ অচিরেই ধ্বংস প্রাপ্ত হয়। আমরা সম্রাট নাসিরুদ্দিনকে দেখেছি ওস্তাদকে নিজের রাজসিংহাসন ছেড়ে দিয়েছেন রাজদরবারে। পড়েছেন, এমন কি নিজের মাথার পাগড়ি বিছিয়ে দিয়েছেন দুধ মায়ের বসার জায়গা হজরত মুহাম্মদ স. কে দেখেছি দুধ মা কে দূর থেকে আসতে দেখে আসন ছেড়ে উঠে করতে। মানুষের প্রতি মনুষত্ববোধের একটা পরিচয় সম্মানিকে সম্মান জানান, মরহুমা হাজিনি সওলাতুন্নেসা জ্ঞানী গুণী আলেম, পীর, দরবেশদের জীবন দশায় বাড়িতে দাওয়াত করে এনে খাওয়াতেন এবং বুক ভরে উপহার দিতেন। শাল, কোরআন শরীফ, টাকা, নামাজ পার্টি। তাঁর দাওয়াতি মেহমানদের মধ্যে মক্কা মদিনার মসজিদের ইমামও থাকতেন। থাকতেন ফুরফুরার পীর আবুবকর সিদ্দীকি, হজরত ফতেহ আলি
ওয়ায়েসী র.।
মাইকেল মধুসূদন দত্ত বিদেশে গিয়ে বিদেশী ভাষা চর্চা করতে গিয়ে ধর্মত্যাগ করেও ব্যর্থ শুধু নন জীবন সংশয় হয়ে দরিদ্রতার মাঝে পরের সাহায্য নিয়ে (১৮৬৫ হু. ১৪০০ টাকা) দেশে ফিরে আসতে বাধ্য হন, পরে বলতে বাধ্য হন বাংলা ভাষা মনিজালে পূর্ণ। এখানেই তিনি পেলেন মহাকাব্য রচয়িতার খ্যাতি। কিন্তু বিদেশী হয়েও রাজভাষার সুযোগ নিয়ে স্বদেশে, বিদেশে কবি খ্যাতি নিয়ে দীর্ঘ ৭০০ বছর মানুষের অন্তরে লেখনি দ্বারা স্থায়ী আসন পেয়েছেন, সে ভারতের প্রথম জাতীয় কবি আমীর খসরু। আমীর খসরুর মাতৃভাষা ফারসী ভারতে বসে রাজ ভাষার সুযোগে ফারসী ভাষায় কবিতা লিখে পারস্য থেকে ভারতে সর্বত্র নিজের আসন করে নিয়েছিলেন। শুধু ফারসী নয় আরবী তুর্কী ভাষাতেও অমর কাব্য লিখেছেন, তার কাব্যে ফুটে ওঠে কাঁকনের রিনিঝিনি, শিঙ্গনীর জল তরঙ্গ। প্রেম যুদ্ধের জয়োল্লাস। কবিতা গজলের ছত্রে ভরে নারী, সুধা, মদিরা।
পাগল হয়ে কুটছে মাথা ব্যথার ঘায়ে প্রেমিকজন কই তারা চায় না বিরাম প্রেমের পথে একটুক্ষণ। প্রবোধ দিয়ে লাভ কি হবে ওদের পোড়া কলজেটায় ? খসরু ভাবে এরচে বেশী আর কিছুই চায় না মন।।
দেবে যে আমার দিচ্ছো মিছে ধর্মপাগল বন্ধু জন, বেপথু এই প্রেম তুফানে রাখতে পার লাজ ভূষণ? আমার মতো পাগল হয়ে স্মরণ করো খুদার নাম শুনবে ঠিকই আপ্পা ভুলে শুঁড়ি থানার ওভরণ।
গুদার ধ্যানে ইস্তফা দিই পুতুল খেলায় মত্ততায় শরাব সফি মাদের বাটি এসব নিয়ে দিন কাটাই।
দিলদরিয়া মাতলামিতে বুকের ভেতর তুলকালাম
উদাস সুরে গুনগুনিয়ে শরাব খোরের গাওনা গাঁই।।
আমীর খসরু তাঁর যোগ্যতার বলে পারস্যের কবির সংগে নিজের ব্যবধানের বেড়া ভেঙে দিয়ে, ভাব, ভাষা, কাব্য রীতি ভারতীয় হয়েও তাঁর কবিতা পারস্যে রচিত কবিতার সমকক্ষ হয়। পারসী সাহিত্যে তাঁর স্থান প্রথম সারিতে। রাজসভার কবি হয়ে ফরমায়েসী কবিতা লিখেও সৃজনশীল কবি প্রতিভার প্রমাণ দিয়েছেন। তাঁর প্রতিটি কবিতা চটুল পাদ পূরণের হলেও প্রতিটিই ছাই চাপা আগুন। ওমর খৈয়মের ভোগ স্পৃহা, কবি হাফিজের চরম আধ্যাত্মিকতা, গালিবের স্বপ্নচারিতা কিন্তু খসরু এক স্বতন্ত্র কবি তাঁর কবিতার ভূমি সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র। আমীর খসরুকে জানলে সাধারণ প্রেমিক মন কবিমন হয়ে ওঠে। তাই আমার গ্রন্থে তাঁর স্থান অতি উচ্চে। তাই তিনি হন ভারতের তোতাপাখি।
ভারত বাংলা যখন নিজের মানুষকে নিজের কোলে ঠাঁই দেইনি কিন্তু বিদেশী আমির খসরু জাতিতে তুর্কী মা খাঁটি ভারতীয়। ফৌজী ঘাঁটিতে মানুষ হয়েও মন হয়েছে পূর্ণ প্রেমিক। বিদ্যাসাগর বাংলা গদ্য সাহিত্যের জনকের মর্যাদা পেয়েছেন। বাল বিধবা প্রথা প্রবর্তনে তাঁর অবদান কায়মনোবাক্যে স্বীকার্য। নিজের পুত্রের বিবাহ দিয়েছেন বিধবা মেয়ের সংগে। নারী শিক্ষা বিস্তারে শিক্ষা ইনসপেক্টর হয়ে একাধিক (৩০টি) মহিলা বিদ্যালয় স্থাপন করেন। বিদ্যাসাগরের কথা হলে মনে পড়ে অনেক কথা প্রথমতঃ তিনি আমার জন্ম স্থান হুগলী জেলার মানুষ। দ্বিতীয়ত: বয়সকালে তিনি নিজ গাঁয়ে মায়ের কাছে গিয়ে মায়ের হক আদায় করতে যান, মা আমি তোমাকে তিনটি গহনা দিতে চাই। মা বললেন, বাবা আমার গ্রামের মানুষ বিনা চিকিৎসায় মারা যায় প্রায় বারো মাইল পথ অতিক্রম করে গিয়ে হসপিটাল। তুমি যদি আমার গ্রামে একটা হসপিটাল তৈরী করে দাও সেটাই হবে আমার হার। দ্বিতীয় গহনা হবে তুমি যদি আমার গ্রামের বালিকাদের লেখা পড়ার জন্য একটা বালিকা বিদ্যালয় করে দাও সেটা হবে আমার হাতের বালা। আর তৃতীয় গহনা হবে আমার গ্রামের কাঁচা রাস্তাটা পাথর বিছানো পিচ ঢালা রাস্তা। বিদ্যাসাগর মহাশয় সরকারী আনুকূল্যে মায়ের তিনটি গহনাবং মহিলা স্কুল, হসপিটাল, রাস্তা করে দিয়েছিলেন। ঈশ্বর চন্দ্রের মাতৃ ভক্তির প্রমাণ স্বরূপ গভীর রাত্রিতে দামোদর সাঁতার কেটে পার হওয়া সম্বন্ধে অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করেন। কিন্তু এ ঘটনা কেউ অস্বীকার করে না। কিন্তু বিদ্যাসাগরের শেষ জীবন আমাকে ব্যথা দেয়। দীর্ঘ ৩৫ বছরের কলম পেষার জীবন। ভবিষ্যৎ কি? ঈশ্বরচন্দ্র সংস্কৃত কলেজ কর্তৃক সংস্কৃত পণ্ডিতদের দ্বারা বিদ্যাসাগর উপাধি পান। সেই বিদ্যাসাগর জনহিতে, শিক্ষা বিস্তারে, ধর্মসংস্কারে হয়ে ওঠেন এক অমর ব্যক্তিত্ব কিন্তু তাঁর ধর্মের গোঁড়ারা, প্রতিবেশী এবং সার্বিকভাবে বাঙালী তাঁকে বাংলায় শেষ বয়সে ঠাই দেয়নি। যেমন আসমুদ্র হিমাচল নিজের সাম্রাজ্যের নিজে অধিপতি হলেও সেখানে শেষ শয্যার
জন্য সাড়ে তিন হাত জায়গা জোটেনি। সিপাহি বিদ্রোহের পর তাঁকে উপহার পেতে হয় সোনার খাপ্পা ভর্তি রেশমী বস্ত্রে আবৃত নিজ পুত্র সন্তানদের কাটা মুণ্ডু। তারপর রাজ প্রাসাদ থেকে লালকেল্লা পার হয়ে কলকাতার ফোর্ট উইলিয়ামে। এখানে তাঁকে নতি স্বীকার করতে বললে তিনি বলেন,
গাজিও মেরু রহেগি যব তপকে ইমান কি.
তব তো লন্ডন তর্ক চলেগি তেগ হিন্দুস্থান কি।
(আত্ম-সম্মানের সৌরভ যতদিন যোদ্ধাদের অন্তরে থাকবে। ততদিন ভারতের দাপট একদিন না একদিন পৌঁছবে লণ্ডনে।) সেখান থেকে জাহাজে চেপে সোজা বর্মার রাজধানী রেংগুনে। শেষ জীবনের কয়েকটি বছর মোগল ইতিহাসের ইতি ঘটাতে শেষ সম্রাট ফারসী কবি দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ জাফর কাব্যের ছন্দ মিলাতে মিলাতে লিখলেন, "বদনশীর মোগল সম্রাটের তকদিরে নেই নিজ জন্মভূমির সাড়ে তিন হাত জমিন' আজ সে বাদশাহ রেংগুনের জংগল ভরা ভাঙা ইটের স্তূপে শেষ শয্যায় বিশ্রামরত।
বিদ্যাসাগর শেষ বয়সে বিহারের কারমাটরে নিম্ন শ্রেণিদের মাঝখানে কয়েক বিঘা জমি কিনে বসবাস শুরু করেন। সেখানে তৈরী করে নেন মাটির কুটির। খাবার সংস্থান হিসাবে ঘর সংলগ্ন জমিতে চাষ। গরীব মানুষের চিকিৎসার জন্য হোমিও চিকিৎসা করতেন। গরীবদের বিনামূল্যে ঔষধ দিতেন, এ সময় বিদ্যাসাগর খঞ্জ বিদ্যাসাগর হয়ে বসে আছেন। কলকাতায় তাঁর আসা যাওয়া বন্ধ। কেননা এখনকার বিহারের কারমাটোর থেকে কলকাতায় যাতায়াতের একমাত্র পথ, ট্রেন পথ। কিন্তু ট্রেনের স্টেশনের প্লাটফরম না থাকার ফলে ট্রেনে উঠতে পারতেন না। একথা ইংরেজ রেল কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি গোচরে আসে। ইংরেজ রেল কোম্পানি বিদ্যাসাগরের সম্মানার্থে বিশেষ অর্ডারে স্টেশনে প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে দেন। আমার মনে হয় একজন লেখক, সমাজ কর্মীর জীবনে এরচেয়ে বড় পুরস্কার আর হতে পারে না। একটা গোটা স্থায়ী প্লাট ফরম। আর এক
লেখকের জীবনে রেল পুরস্কার দেখি। বিভূতি ভূষণ কোন এক সময় দূরে বন্ধুর বাড়ী বেড়াতে যান। তখনকার দিনে ট্রেনের বড় অপ্রতুলতা ছিল। সকালে একটি ট্রেন যায় আর অপরটি বিকালে ফেরে। বন্ধুর বাড়ী খেয়ে গল্প গুজব করে বৈকালে স্টেশনে ট্রেন ধরতে এসে প্লাটফরমের আসতে না আসতে ট্রেন হুইসেল দিয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে চলল। লেখকের হা হুতাস ধ্বনি ড্রাইভারের কর্ণগোচর না হলেও ড্রাইভার লেখককে দেখে চিনতে পেরেছিলেন কিছু দূর যাবার পর ট্রেন থেমে গেল শুধু নয় ট্রেনটি পিছোতে শুরু করল। অবশেষে স্টেশনে এসে থামল। ড্রাইভার ইঞ্জিন ছেড়ে নেমে এসে পথের পাঁচালির লেখককে জানাল আপনাকে আমি চিনতে পেরেছি। আপনার জন্যই গাড়ী পিছু হটিয়ে আনলাম, আপনি ট্রেনে চেপে বসুন। লেখককে নিয়ে পুনরায় ট্রেন যাত্রা করল।
ঠিক এভাবেই বাংলার এক কবিকে আমরা বাঙালী হয়ে গ্রহণ করতে পারিনি
তিনিও শেষ বয়সে অন্য রাজ্যে গিয়ে মারা যান। সে কবিজন হলেন কবি বিষ্ণু দে। ইংরাজী ভাষার অধ্যাপক বাংলা ভাষায় কবিতা লিখতেন।
ভারতের কয়েক হাজার রেল স্টেশনের মধ্যে একটিমাত্র স্টেশনের নাম মহিলার নামানুযায়ি সে মহিলা হলেন বাঙালি মহিলা কবি বেলা দে'র নামে বেলানগর স্টেশন। জুন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মাত্র ন'বছর বয়সে বীরভূমের শান্তিনিকেতনে ভ্রমণ করছিলেন তাঁর পিতা মহর্ষী দেবেন্দ্রনাথের সংগে। জমিদার ঘরের সন্তান। আলালের দুলাল হয়ে মানুষ হয়েছেন, স্বাভাবিক দেখতে ন'বছর বয়সেই যুবকের মত। পিতা ট্রেন যাত্রার রেলের নিয়মানুযায়ী ছেলের অর্ধ টিকিট কেটেছেন নির্দিষ্ট সময়ে টিকিট চেকার এসে টিকিট পরীক্ষা করতে গিয়ে রবীন্দ্রনাথের মত বালকের অর্ধটিকিট দেখে পূর্ণ টিকিটের দাবী জানাল। মহর্ষী দেবেন্দ্রনাথ ছিলেন প্রচণ্ডভাবে সত্যের পূজারী উনি দৃঢ়তার সংগে বললেন, ১১ বছর পর্যন্ত অর্ধটিকিট রেলের আইন অনুযায়ী। রবীন্দ্রনাথের বয়স মাত্র ৯ বৎসর। দুবছর কম। কিন্তু চেকার বাস্তব কথা না শুনলে, দেবেন্দ্রনাথ ২ টাকার টিকিটের জন্য ১০ টাকার নোট দেন। চেকার বাকি টাকা ফিরত দিলে সত্যপথিক দেবেন্দ্রনাথ ঐ টাকা জানালা গলিয়ে ট্রেনের বাইরে নিক্ষেপ করেন।
সেই রবীন্দ্রনাথ ১৯৪১ সালে শান্তিনিকতনে মৃত্যুর সংগে পাঞ্জা লড়ছেন। মোটরে চেপে কলকাতায় চিকিৎসার জন্য আসা সম্ভব নয়। এরকম অবস্থায় রেল কর্তৃপক্ষ কবিগুরুর জন্য রেলের একটা গোটা সেলুন পাঠিয়ে দেন। শুধু তাই নয়, সে সেলুনটিকে রবীন্দ্রনাথের স্মৃতি চিহ্ন হিসাবে লিলুয়া ওয়ার্কসপে সাজিয়ে রাখা হয়েছে প্রদর্শনের জন্য।
রবীন্দ্রনাথ এভাবে পুরস্কৃত হয়েছেন কিন্তু গালিব রাজ দরবারের কবি হয়ে নিজ জীবনকে পথে বিপথে হাঁটিয়ে জীবনের মাঝে মৃত্যু যন্ত্রণাই পেয়ে গেলেন। স্ত্রী উমারাও যখন বলেন, তুমি মদ আর খেও না। ছেড়ে দাও। কবি গালিব প্রতি উত্তরে বলেন, কোরআনের নির্দেশ অনুযায়ী আমি তোমাকে ছেড়ে (তালাক) দিতে পারি কিন্তু মদকে ছাড়তে পারব না। ছাড়েনওনি। আর্থিক দৈন্যতায় একমাস মদ খাওয়া হয়নি। তৃষ্ণার্ত ব্যক্তির মত হাহাকার করে বেড়িয়েছেন। শেষে কোন পথ না পেয়ে খোদার কাছে আর্জী জানাতে এক দুপুরে জোহরের ওয়াক্তে মসজিদে হাজির হয়েছেন। আজান হতে সুন্নত নামাজ পড়ার পরে হঠাৎ করে এক ছাত্রের সংগে দেখা ছাত্র কুশল জিজ্ঞাসা করলে গালিব জানান তিনি ভাল নেই কারণ একমাস ফরাসী জোটেনি। ছাত্রটি বিষয় অনুধাবন করেন জানাল হুজুর এখুনিই ফরাসী এনে দিচ্ছি। কিছুক্ষণের মধ্যে মন পসন্দ মদিরা পেয়ে মসজিদের অদূরে এক গাছের ঘেরা চাতালে বসে সুখে গলা ভেজাতে লাগলেন। মসজিদের মুসুল্লিরা নামাজ পড়ে গালিবকে দেখে জানতে চাইল সে নামাজ না পড়ে গাছ তলায় কেন? গালিব নিঃসংকোচে জানাল। আমি দীর্ঘদিন অতৃপ্ত থেকে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা জানাতে এসেছিলুম। আল্লাহ আমার প্রার্থনা সুন্নত নামাজেই কবুল করেছেন। আর ফরজ পড়ার কি দরকার ভাই।
একদিন এক বোতল মদ নিয়ে গালিব নিশ্চিত জায়গা খুঁজতে লাগলেন যেখানে বিল্ডিং এর সামনে বিরাট দালান ফাঁকা পড়ে আছে। দেরী না করে দালানের এক বসে নিরিবিলি মদ খাবেন। চাশতের ওয়াক্ত (সকাল ১০টা) দেখতে পেলেন প্রকান্ড কোণে বসে শান্তি চুমুক দিয়েছেন। হঠাৎ দেবদূত তুল্য এক মানুষ এসে হুংকার ছাড়ল এটা আল্লাহর ঘর তুমি জানো না এখানে বসে শারাব পান? গালিব শান্ত ধীর দৃঢ় অথচ মৃদু কণ্ঠে জানাল ভাই আমাকে দেখিয়ে দাও যেখানে আল্লাহ নেই সেই জায়গা।
যেখানে আমি নিশ্চিত্তে পান করতে পারি।
কলকাতায় গালিব চৌসা খেলে এবং রাঢ়ি বাড়ি গিয়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে জরিমানার টাকা গুনতে বাধ্য হয়েছেন। অপর দিকে নিজের দাম্ভিকতাকে, ইজ্জতকে কখনও বিলিয়ে দেননি। দিল্লির বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাক পেলেন ফারসী শিক্ষক হবার। দেখলেন গালিবকে অভ্যর্থনা করে নিতে কেউ আসেনি। বেহারাকে বললেন, পালকি তোলো এবং ফিরে চলো। গালিবের এতটাই ছিল আত্মসম্মান বোধ। অহমিকা এবং বাউন্ডুলে জীবন। কলকাতায় তাঁর নামে একটি রাস্তা হয়েছে কিন্তু দিল্লীতে তাঁর বাড়িটিও
রক্ষা করা হচ্ছে না, ধ্বংসের হাত থেকে।
বিশ্বকোষের দ্বিতীয় খণ্ড প্রকাশ পেল এতে জীবনী বেশী স্থান পেল। আমার জীবনীর প্রতি দুর্বলতা চিরকালীন। ছোট বেলায় বাড়ির দহলিজের সামনের লনে ঘাষের ওপর বসে বৈকালে জীবনী পড়তাম। জীবন মানুষকে, ছাত্রকে, পাঠককে পথনির্দেশ দেয়। এক একটা জীবন থেকে এক একটা জিনিষ পাওয়া যায়।
আরহাম লিংকনের জীবনীতে দেখে ছিলাম উনি স্কুল কলেজে পাঠ নিতে পারেননি সোনাসার উল্টো পিঠে লেখা শিখে ছিলেন এবং পরের বই চেয়ে নিয়ে পড়া শিসেছিলেন। পরে ইনি আমেরিকার অন্যতম শ্রেষ্ঠ রাষ্ট্রপতি। তবে ইনাকে শেষ বয়সে রাষ্ট্রপতি থাকা কালীন থিয়েটার হলে গুলি খেয়ে মরতে হয়। মার্টিন লুথার কিং কালা আদমীর বাসের সিটে বসার অধিকার নিয়ে আন্দোলন করে বিশেষ ব্যক্তিত্ব হয়ে উইনি। পরে ইনি পৃথিবীর সর্বকনিষ্ঠ ব্যক্তি হিসাবে নোবেল পুরস্কার পান। হ্যাঁ, জীবন থেকে জানাই সত্যের জন্য সবকিছু ত্যাগ করা যায়, কিন্তু কোন কিছুর জন্য সত্যকে ত্যাগ করা যায় না। আমি জুলফিকার আলি ভুট্টোর জীবনী পড়েছিলাম সাংসদ পিলু মোদি। বইটির না
। পধিকারের কথা আমার মনে আসে যখন অর্ডার হল। পनमान
অনুযায়ী স/গতিক বা রদ করতে পারেন।
এ করার দরখাস্ত নিয়ে হাজীর ষ্ট্রপতি তো আমি
যে চেয়ারে বসে আছে সে ত অন্যায়ভাবে আমার চেয়ার দখল করে বসে আছে। আমি কখনই আবেদন পত্রে সহি করব না। মহৎ মহান মানুষদের
জীবন মৃত্যু পায়ের ভৃত্য / চিত্ত ভাবনা হীন
ভুট্টোর জীবনের কয়েকটা কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। ভুট্টো সেই মানুষ বা রাজনীতিবিদ যিনি মাত্র ২৬ বৎসর বয়সে বিশ্বরেকর্ড করে আইয়ুব খানের সময়ে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রী তখন স্বর্ণ সিং ভারতের বিদেশ মন্ত্রী। সেই সময়ে রাষ্ট্রসংঘে যে ভাষণ দিয়েছিলেন তাও রেকর্ড সৃষ্টি করে। ইনার উক্তি ভারতের বিদেশমন্ত্রী স্বর্ণ সিংকে লক্ষ্য করে 'Indian dogs are barking' যদিও এটা শোভোনিও ছিল না।
এই জুলফিকার আলি ভুট্টো অনেকখানি দায়ী জিন্নার ইসলামী স্বাদের আর সাধের সর্ববৃহৎ এলাকা ও জনসংখ্যা সমৃদ্ধ মুসলিম রাষ্ট্রকে ভেঙে দু'টুকরো করে ভারতকে তিন টুকরো করা নূতন বাংলাভাষীদের নিয়ে বাংলাদেশ পতন। বাংলা দেশ হবার ফলে দু একটা জিনিস যা হয়েছে তা কোন দিনই অন্যভাবে হতো না। প্রথমত রাষ্ট্রসংঘে বাংলা ভাষার প্রবেশ দ্বিতীয়তঃ বাংলা ভাষা আন্দোলনের শহীদ দিবস ২১ ফেব্রুয়ারীকে বিশ্বে ভাষা দিবস হিসাবে তুলে ধরা ও পালন করা। সেই সংগে বাংলা ভাষার উন্নতি, বাংলা ভাষায় ইসলামী সাহিত্য ও ইসলামী প্রচারের নব জাগরণ। উল্লেখ্য, প্রতি ৬মিনিট অন্তর একটি করে নূতন পুস্তক ওপারে প্রকাশ পায়। বাংলা ভাষায় ইসলামী বিশ্বকোষ, হিসাবহীন কোরআনের তরজমা, নানারূপে, ভাবে হাদিস গ্রন্থ প্রকাশ বাংলা দেশে গঠিত হবার ফলেই সম্ভব হয়েছে। শুধু তাই নয় তৃতীয় বাঙালী হিসাবে নোবেল পুরস্কার ওপারের বাঙালী জনাব ইউনুস সাহেবের ঘরে।
আমি ভুট্টোকে বাংলাদেশ গঠন ও পাকিস্তান ভাঙার দোষী সাব্যস্ত না করেও বলব ১৯৭০ এর সাধারণ নির্বাচন গোটা পাকিস্তানে নির্বাচন হলে মুজিবর রহমানের আওয়ামি লীগ মোট ২৯৭টি আসন পায় আর দ্বিতীয় বৃহত্তম দল পাকিস্তান পিপলস পার্টি মাত্র ৬৭টি আসন। সবই ভুট্টোর দল পায় পশ্চিম পাকিস্তানে। এ অবস্থায় ভুট্টো বাঙালী মুজিবর রহমানকে মেনে নিতে পারেননি রাষ্ট্র প্রধান হিসাবে। ফলে জন বিদ্রোহ। শেষে সামরিক অভিযান এবং ভারতের হস্তক্ষেপ। অবশেষে নুতন রাষ্ট্রের সৃষ্টি।
আরো একটি কথা স্মরণে পড়ে বাংলাদেশ হলো এপার বাংলার একটা বিশেষ করে যারা ওপার থেকে ভিটে মাটি ছেড়ে এপারে আশ্রয় নিয়েছিল তারা ভেবেছিল দুই মেরু অর্থাৎ দুই বাংলা এক হয়ে যাবে। নিজের ভিটা ফিরে পাবো। কিন্তু রাজনীতির কূটচালে তা যে কখনই সম্ভব নয় সে কথা ভাবার মত বিদ্যা বুদ্ধি ছিল गा। দুই বাংলা এক হলে মুসলিম হবে সংगा গ ১৫ + ২ = ১৭ কোটি মুসলমান আর ৬ কোটি হিন্দু। তাহলে এরাই হবে মুখ্যমন্ত্রী, পুলিশ কমিশনার এমনকি রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীদের চেয়ারে ধাক্কা দেবে। বঙ্গ থেকে সর্বাধিক সংখ্যক মুসলিম সাংসদ হবে,
ইতিহাস বলে ১৯৪৭ এ দেশ ভাগের সময় বাংলা ভাগ হবার কথা প্রথমে ওঠেনি। যখন বাংলা ছাড়া ভারত ভাগের পরিকল্পনা হয় সে সময় বাংলা থেকে শ্যামা প্রসাদ মুখার্জী কিছুটা প্রফুল্ল ঘোষ দিল্লি গিয়ে বাংলা ভাগের দাবী তোলেন যার ফলশ্রুতিতে বাংলা ভাগ হয়ে কপাল পোড়ে এপারে এখন যে রয়েছে ২কোটি ৩০ লক্ষ মুসলিমের। 
#ইসলাম #মুসলমান #abdulmusrefkhan #islam

Post a Comment

0 Comments