- ক্ষতিপূরণ সমস্যার আন্তর্জাতিক প্রবাব আলোচনা করুন?
- অথবা
- ক্ষতিপূরণ সমস্যার আন্তর্জাতিক গুরুত্ব আলোচনা করুন?
দুই বিশ্বযুদ্ধের অন্তবর্তীকালীন সময়ে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে যে সমস্ত সমস্যাগুলি জটিলতার সৃষ্টি করেছিল, তার মধ্যে ক্ষতি পূরণ সমস্যা বিশেষ উল্লেখের দাবি রাখে। ভার্সাই চুক্তি অনুযায়ী জার্মাণিকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের যাবতীয় ক্ষয়ক্ষতির জন্য দায়ী করা হয়েছিল এবং জার্মানির ওপর এর জন্য ক্ষতিপূরণ প্রদানের শর্তারোপ করা হয়েছিল। শুরু থেকেই ক্ষতিপূরণ সমস্যার মধ্যে নানাবিধ জটিলতা ছিল, যার দরুন ক্ষতিপুরণকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক রাজনীতি জটিলাকার ধারণ করে। ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে পরিস্থিতি কিছুটা পরিবর্তিত হয়। ফ্রান্স ও জার্মাণির মধ্যে সম্পর্কের কিছুটা উন্নতি ঘটে। জার্মাণির পররাষ্ট্র নীতির দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন গুস্তাভ স্ট্রেসেম্যান এবং ফ্রান্সের দায়িত্ব গ্রহণ করল ব্রিয়া। ফলে উভয়পক্ষে তিক্ততার আন্তর্জাতিক সম্বেলনে যোগদানের অধিকার দেওয়া হয়। সর্বোপরি ইয়ং পরিকল্পনা ও অনেকটাই অবসান ঘটে। লোকার্নো চুক্তির মাধ্যমে জার্মাণিকে সম-মর্যাদার ভিত্তিতে ভাওয়েজ পরিকল্পনার মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ক্ষতিপূরণ সমস্যার সমাধানে অনুকূল পরিস্থিতি সৃষ্টির উদ্যোগ গ্রহণ করে। জার্মাণিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ঋণ প্রদাণের ব্যবস্থা করে। ফলে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে একটা অনুকূল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। কিন্তু জার্মাণিতে ...হিটলার ক্ষমতায় এলে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ পরিবর্তিত হয়। নানা অজুহাতে হিটলার ক্ষতিপূরণ প্রদান বন্ধ করে দিলে ক্ষতিপূরণ সমস্যার অবসান ঘটে। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ সমস্যা জটিতার সৃষ্টি করেছিল। জার্মানির উপর এই সমস্যার প্রভাব নিয়ে ঐতিহাসিক মহলে মতপার্থক্য রয়েছে। কেইনস এই মর্মে বক্তব্য রেখেছিলেন যে, ক্ষতিপূরণ জার্মাণির অর্থনীতিকে পুরোপুরি বিপর্যস্ত করে দিয়েছিল এবং জার্মানির পক্ষে এই বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠা সম্ভবপর হয়নি। কিন্তু কেইনস এর বক্তব্যের বিরোধিতা করেছেন E.Montoux। ক্ষতিপূরণ সংক্রান্ত তাঁর গবেষণা তিনি তথ্য সহকারেই দেখাবার চেষ্টা করেছেন। সরাসরিভাবে ক্ষতিপূরণের জন্য জার্মাণির অর্থনীতিতে বিপর্যয় ঘটেনি। জার্মাণির বিভিন্ন শিল্পের পরিসংখ্যান দিয়ে তিনি দেখাবার চেষ্টা করেছেন যে, এই সমস্ত শিল্পগুলিতে উৎপাদনের হার হ্রাস পায়নি, বরং উৎপাদন ক্রমশই বৃদ্ধি পেয়েছিল। J.WAngle তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন ১৯২৪-২৯খ্রিঃ পর্যন্ত পর্যায়ে জার্মাণ অর্থনীতিতে নজিরবিহীন অগ্রগতি দেখতে পাওয়া যায়। কাজেই এ জাতীয় বক্তব্য বিশেষ গ্রহণযোগ্য বলে মনে হয় না যে, ক্ষতিপূরণ জার্মাণ অর্থনীতিকে পুরোপুরি বিপর্যস্ত করেছিল। A.JP Taylor একই ধরণের অভিমত ব্যক্ত করেছেন। তাঁর বক্তব্য হল ক্ষতিপূরণের দরুন জার্মাণ অর্থনীতি বিপর্যস্ত হয়নি, বরং জার্মানি ক্ষতি পুরণ ও আন্তর্জাতিক ঋণচক্রের দরুন লাভবান হয়েছিল। জার্মাণি অত্যন্ত যোগ্যতার সঙ্গে পরিস্থিতির মোকাবিলা করে অর্থনৈতিক ও শিল্পের ক্ষেত্রে অগ্রগতি সাধন করেছিল। ক্ষতিপূরণ প্রতক্ষ্যভাবে জার্মাণ অর্থনীতিকে কতটা ক্ষতিগ্রস্ত করেছিল সে বিষয়ে সংশয়ের অবকাশ থাকলেও একথা অনস্বীকার্য যে, ক্ষতিপূরণের দরুন জার্মাণিকে তীব্র মুদ্রাস্ফীতির সন্মুখীন হতে হয়েছিল। মুদ্রাস্ফীতির পিছনে অবশ্য প্রথম বিশ্বযুদ্ধোত্তর কালীন সংকট কাজ করেছিল। যদিও ক্ষতিপুরন সমস্যা একে আরো তীব্র করে তুলেছিল। দীর্ঘমেয়াদী দিক থেকে বিশ্লেষণ করে Taylor মনে করেন যে, জার্মাণি ক্ষতিপূরণের দরুন অর্থনৈতিক দিক দিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়নি। কিন্তু ক্ষতিপূরণের প্রভাব অন্যত্র দেখা দেয়। এটি জার্মাণির জাতীয় অবমাননার প্রতীক হয়ে উঠেছিল। হিটলার ক্ষতিপুরণ বিরোধী মানসিকতাকে কাজে লাগিয়ে নাৎসি দলকে জনপ্রিয় করে তুলেছিলেন ফলে হিটলারের ক্ষমতায় উত্তরণের পথ প্রশস্ত হয়। এই অর্থে ক্ষতিপুরণ রাজনৈতিক দিক দিয়ে অশুভ প্রভাব ফেলেছিল। সর্বোপরি Taylor এর বক্তব্য হল, “ ক্ষতিপূরণ জার্মাণির জাতীয় অবমাননার প্রতীক হয়ে দাড়িয়েছিল।”
0 Comments